অবাক সূর্যোদয় হাসান হাফিজুর রহমান

অবাক সূর্যোদয়: হাসান হাফিজুর রহমান

অবাক সূর্যোদয়: হাসান হাফিজুর রহমান

অবাক সূর্যোদয় হাসান হাফিজুর রহমান
  • কিশাের তােমার দুই 
  • হাতের তালুতে আকুল সূর্যোদয় 
  • রক্তভীষণ মুখমণ্ডলে চমকায় বরাভয়।
  • বুকের অধীর ফিনকির ক্ষুরধার 
  • শহিদের খুন লেগে । 
  • কিশাের তােমার দুই হাতে দুই 
  • সূর্য উঠেছে জেগে। 
  • মানুষের হাতে অবাক সূর্যোদয়, 
  • যায় পুড়ে যায় মর্তের অমানিশা 
  • শঙ্কার সংশয়। 
  • কিশাের তােমার হাত দুটো 
  • উঁচু রাখাে প্রবল অহংকারে সূর্যের 
  • সাথে অভিন্ন দেখ অমিত অযুত লাখ। 
  • সারা শহরের মুখ। 
  • তােমার হাতের দিকে ভয়হারা 
  • কোটি অপলক চোখ একাকার হলাে 
  • সূর্যের অনিমিখে।
  • অবাক সূর্যোদয়: হাসান হাফিজুর রহমান
  • কিশাের তােমার হাত দুটো উঁচু রাখাে 
  • লােলিত পাপের আমূল রসনা ত্রুর অগ্নিতে ঢাক।
  • জাগাও পাবক প্রাণ 
  • কণ্ঠে ফোটাও নিষ্ঠুরতম গান 
  • যাক পুড়ে যাক আপামর পশু 
  • মনুষ্যত্বের ধিক অপমান 
  • কিশাের তােমার হাত দুটো উঁচু রাখাে 
  • কুহেলী পােড়ানাে মিছিলের হুতাশনে 
  • লাখ অযুতকে ডাক। 
  • কিশাের তােমার দুই। 
  • হাতের তালুতে আকুল সূর্যোদয় 
  • রক্তশােভিত মুখমণ্ডলে চমকায় বরাভয়।

অবাক সূর্যোদয়: হাসান হাফিজুর রহমান

পাঠ-পরিচিতি: অবাক সূর্যোদয়

পাঠ-পরিচিতি অবাক সূর্যোদয়

কিশাের বয়সটি হচ্ছে দুর্জয় সাহস আর সৃষ্টিশীলতার সময়। কবিতাটি এই কিশাের বন্দনারই গাথা। চমষ্কার কিছু ছবি, ভাবনা আর প্রতীকের মধ্য দিয়ে কবি এখানে কিশােরদের জয়গান করেছেন। কবি মনে করেন, কিশােররাই হচ্ছে সেই ভয়হীন সত্তার অধিকারী, শহিদের খুন যাদের দুই হাতে সূর্যোদয় হয়ে জেগে ওঠে। এই সূর্যের আলােতেই কেটে যায় পৃথিবীর অন্ধকার। 

কিশাের তার দুই হাতকে সূর্যের মতােই অহংকারে উঁচু করে রাখুক, এটাই কবির কামনা। উত্তোলিত এই হাতই, কবি মনে করেন, মানুষকে বরাভয় হতে শেখাবে। ঢেকে যাবে সমস্ত পাপ। পুড়ে যাবে পশুতু। অযুত মানুষকে মিছিলে জানাবে আহ্বান। সূর্য আর উত্তোলিত হাতের প্রতীকে কৈশােরক সাহসিকতা আর বরাভয়কে এভাবেই বর্ণনা করেছেন কবি।

কবি-পরিচিতি : হাসান হাফিজুর রহমান

কবি-পরিচিতি  হাসান হাফিজুর রহমান

১৪ই জুন ১৯৩২ সালে জামালপুর জেলার কুলকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবদুর রহমান ছিলেন স্কুলশিক্ষক। হাসান হাফিজুর রহমান ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আই.এ. পাস করেন। ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. এবং ১৯৫৫ সালে বাংলায় এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ছিলেন ভাষাআন্দোলনের একজন অসাধারণ সংগঠক। 

১৯৫৩ সালে তাঁর সম্পাদিত একুশে ফেব্রুয়ারি গ্রন্থটি বিস্ময়কর আলােড়ন সৃষ্টি করে। কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতাসহ অধ্যাপনার কাজে নিয়ােজিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন অকুতােভয় এক সৈনিক। স্বাধীনতা-উত্তর কালে তিনি সরকারের বিভিন্ন। সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়ােজিত ছিলেন। 

১৯৭৭ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্প’-এর তিনি ছিলেন প্রধান। তার সম্পাদনায় ষােল খণ্ডে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ : দলিলপত্র প্রকাশিত হয়। তিনি কবি, সমালােচক ও গল্পকার হিসেবে খ্যাতিমান। বিভাগ উত্তর পূর্ববাংলার আধুনিক কাব্য আন্দোলনের তিনি ছিলেন একজন অন্যতম স্থপতি। তাঁর উল্লেখযােগ্য কাব্যগ্রন্থ : বিমুখ প্রান্তর, আর্ত-শব্দাবলি, অন্তিম শরের মতাে, উদ্যত সঙ্গীন, শােকার্ত তরবারি, আমার ভেতরের বাঘ ইত্যাদি। 

প্রবন্ধগ্রন্থ : আধুনিক কবি ও কবিতা, সাহিত্য প্রসঙ্গ, গল্পগ্রন্থ : আরাে দুটি মৃত্যু ইত্যাদি। হাসান হাফিজুর রহমান লেখক সংঘ পুরস্কার, আদমজী পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। ১৯৮৩ সালের ১লা এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।] এই ধরনের আরও পোষ্ট পেতে আমাদের poramorso24.com নিয়মিত ভিজিট করুন । ধর্যসহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।