অভাগীর স্বর্গ | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়: ঠাকুরদাস মুখুয্যের বর্ষীয়সী স্ত্রী সাতদিনের জ্বরে মারা গেলেন। বৃদ্ধ মুখােপাধ্যায় মহাশয় ধানের কারবারে অতিশয় সঙ্গতিপন্ন। তাঁর চার ছেলে, তিন মেয়ে, ছেলেমেয়েদের ছেলেপুলে হইয়াছে, জামাইরা-প্রতিবেশীর দল, চাকর-বাকর – সে যেন একটা উৎসব বাধিয়া গেল। সমস্ত গ্রামের লােক ধুমধামের শবযাত্রা ভিড় করিয়া দেখিতে আসিল।
অভাগীর স্বর্গ | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

মেয়েরা কাঁদিতে কাঁদিতে মায়ের দুই পায়ে গাঢ় করিয়া আলতা এবং মাথায় ঘন করিয়া সিন্দুর লেপিয়া দিল, বধূরা ললাট চন্দনে চর্চিত করিয়া বহুমূল্য বস্ত্রে শাশুড়ির দেহ আচ্ছাদিত করিয়া দিয়া আঁচল দিয়া তাঁহার শেষ পদধূলি মুছাইয়া লইল। পুষ্পে, পত্রে, গন্ধে, মাল্যে, কলরবে মনে হইল না এ কোনাে শােকের ব্যাপার-এ যেন বড়বাড়ির গৃহিণী পঞ্চাশ বর্ষ পরে আর একবার নতুন করিয়া তাঁহার স্বামীগৃহে যাত্রা করিতেছেন।
বৃদ্ধ মুখােপাধ্যায় শান্তমুখে তাঁহার চিরদিনের সঙ্গিনীকে শেষ বিদায় দিয়া অলক্ষে দুফোটা চোখের জল মুছিয়া শােকার্ত কন্যা ও বধূগণকে সান্ত্বনা দিতে লাগিলেন। প্রবল হরিধ্বনিতে প্রভাত- আকাশ আলােড়িত করিয়া সমস্ত গ্রাম সঙ্গে সঙ্গে চলিল। আর একটি প্রাণী একটু দূরে থাকিয়া এই দলের সঙ্গী হইল। সে কাঙালীর মা। সে তাহার কুটির-প্রাঙ্গণে গােটা-কয়েক বেগুন তুলিয়া এই পথে হাটে চলিয়াছিল, এই দৃশ্য দেখিয়া আর নড়িতে পারিল না।
রহিল তাহার হাটে যাওয়া, রহিল তাহার আঁচলে বেগুন বাধা,-সে চোখের জল মুছিতে মুছিতে সকলের পিছনে শ্মশানে আসিয়া উপস্থিত হইল। গ্রামের একান্তে গরুড়-নদীর তীরে শ্মশান। সেখানে পূর্বাহ্নেই কাঠের ভার, চন্দনের টুকরা, ঘৃত, মধু, ধূপ, ধুনা প্রভৃতি উপকরণ সঞ্চিত হইয়াছিল, কাঙালীর মা ছােটজাত, দুলের মেয়ে বলিয়া কাছে যাইতে সাহস পাইল না, তফাতে একটা উঁচু ঢিপির মধ্যে দাঁড়াইয়া সমস্ত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত উৎসুক আগ্রহে চোখ মেলিয়া দেখিতে লাগিল।
অভাগীর স্বর্গ | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
প্রশস্ত ও পর্যাপ্ত চিতার পরে যখন শব স্থাপিত করা হইল তখন তাহার রাঙ্গা পা-দুখানি দেখিয়া তাহার দু’চক্ষু জুড়াইয়া গেল, ইচ্ছা হইল ছুটিয়া গিয়া একবিন্দু আলতা মুছাইয়া লইয়া মাথায় দেয়। বহুকণ্ঠের হরিধ্বনির সহিত পুত্রহস্তের ও মন্ত্রপুত অগ্নি যখন সংযােজিত হইল তখন তাহার চোখ দিয়া ঝরঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল,
মনে মনে বারংবার বলিতে লাগিল, ভাগ্যিমানী মা, তুমি সগ্যে যাচ্চো-আমাকেও আশীর্বাদ করে যাও, আমিও যেন এমনি কাঙালীর হাতের আগুনটুকু পাই। ছেলের হাতের আগুন! সে ত সােজা কথা নয়! স্বামী, পুত্র, কন্যা, নাতি, নাতনী, দাস, দাসী পরিজন-সমস্ত সংসার উজ্জ্বল রাখিয়া এই যে স্বর্গারােহণ দেখিয়া তাহার বুক ফুলিয়া ফুলিয়া উঠিতে লাগিল,- এ সৌভাগ্যের সে যেন আর ইয়ত্তা করিতে পারিল না।
সদ্য-প্রজ্বলিত চিতার অজস্র ধুয়া নীল রঙের ছায়া ফেলিয়া ঘুরিয়া ঘুরিয়া আকাশে উঠিতেছিল, কাঙালীর মা ইহারই মধ্যে ছােট একখানি রথের চেহারা যেন স্পষ্ট দেখিতে পাইল। গায়ে তাহার কত না ছবি আঁকা, চূড়ায় তাহার কত না লতাপাতা জড়ানাে। ভিতরে কে যেন বসিয়া আছে-মুখ তাহার চেনা যায় না, কিন্তু সিঁথায় তাঁহার সিঁদুরের রেখা, পদতল- দুটি আলতায় রাঙানাে।
উধ্বদৃষ্টে চাহিয়া কাঙালীর মায়ের দুই চোখে অশ্রুর ধারা বহিতেছিল, এমন সময়ে একটি বছর চোদ্দ-পনরর ছেলে তাহার আঁচলে টান দিয়া কহিল, হেথায় তুই দাঁড়িয়ে আছিস মা, ভাত রাঁধবি নে?
মা চমকিয়া ফিরিয়া চাহিয়া কহিল, রাধবাে’খন রে! হঠাৎ উপরে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া ব্যগ্রস্বরে কহিল, দ্যাখ দ্যাখ বাবা,-বামুন-মা ওই রথে চড়ে সগ্যে যাচ্ছে ! ছেলে বিস্ময়ে মুখ তুলিয়া কহিল কৈ? ক্ষণকাল নিরীক্ষণ করিয়া শেষে বলিল, তুই ক্ষেপেছিস! ও ত ধুয়া! রাগ করিয়া কহিল, বেলা দুপুর বাজে, আমার ক্ষিদে পায় না বুঝি? এবং সঙ্গে সঙ্গে মায়ের চোখে জল লক্ষ করিয়া বলিল, বামুনদের গিন্নি মরছে, তুই কেন কেঁদে মরিস মা?
কাঙালীর মার এতক্ষণে হুঁশ হইল। পরের জন্য শ্মশানে দাঁড়াইয়া এইভাবে অশ্রুপাত করায় সে মনে মনে লজ্জা পাইল, এমন কি, ছেলের অকল্যাণের আশঙ্কায় মুহূর্তে চোখ মুছিয়া ফেলিয়া একটুখানি হাসিবার চেষ্টা করিয়া বলিল, কাঁদব কিসের জন্যে রে !- চোখে ধো লেগেছে বৈ ত নয় ! হাঃ-ধো লেগেছে বৈ ত না ! তুই কাঁদতেছিলি !
মা আর প্রতিবাদ করিল না। ছেলের হাত ধরিয়া ঘাটে নামিয়া নিজেও স্নান করিল, কাঙালীকেও স্নান করাইয়া ঘরে ফিরিল,-শুশান-সঙ্কারের শেষটুকু দেখা আর তার ভাগ্যে ঘটিল না।
সন্তানের নামকরণকালে পিতামাতার মূঢ়তায় বিধাতাপুরুষ অন্তরীক্ষে থাকিয়া অধিকাংশ সময়ে শুধু হাস্য করিয়াই ক্ষান্ত হন না, তীব্র প্রতিবাদ করেন। তাই তাহাদের সমস্ত জীবনটা তাহাদের নিজের নামগুলােকেই যেন আমরণ ভ্যাঙচাইয়া চলিতে থাকে।
কাঙালীর মার জীবনের ইতিহাস ছােট, কিন্তু সেই ছােট্ট কাঙালজীবনটুকু বিধাতার এই পরিহাসের দায় হইতে অব্যাহতি লাভ করিয়াছিল। তাহাকে জন্ম দিয়া মা মরিয়াছিল, বাপ রাগ করিয়া নাম দিল অভাগী। মা নাই, বাপ নদীতে মাছ ধরিয়া বেড়ায়, তাহার না আছে দিন, না আছে রাত।
তবু যে কি করিয়া ক্ষুদ্র অভাগী একদিন কাঙালীর মা হইতে বাঁচিয়া রহিল সে এক বিস্ময়ের বস্তু। যাহার সহিত বিবাহ হইল তাহার ও নাম রসিক বাঘ, বাঘের অন্য বাঘিনী ছিল, ইহাকে লইয়া সে গ্রামান্তরে উঠিয়া গেল, অভাগী তাহার * অভাগ্য ও শিশুপুত্র কাঙালীকে লইয়া গ্রামেই পড়িয়া রহিল।
তাহার সেই কাঙালী বড় হইয়া আজ পরয় পা দিয়াছে। সবেমাত্র বেতের কাজ শিখিতে আরম্ভ করিয়াছে, অভাগীর আশা হইয়াছে আরও বছরখানেক তাহার অভাগ্যের সহিত যুঝিতে পারিলে দুঃখ ঘুচিবে। এই দুঃখ যে কি, যিনি দিয়াছেন তিনি ছাড়া আর কেহই জানে না।
কাঙালী পুকুর হইতে আঁচাইয়া আসিয়া দেখিল তাহার পাতের ভুক্তাবশেষ মা একটা মাটির পাত্রে ঢাকিয়া রাখিতেছে, আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, তুই খেলি নে মা? বেলা গড়িয়ে গেছে বাবা, এখন আর ক্ষিদে নেই। ছেলে বিশ্বাস করিল না, বলিল, না, ক্ষিদে নেই বৈ কি! কৈ, দেখি তাের হাঁড়ি?
এই ছলনায় বহুদিন কাঙালীর মা কাঙালীকে ফাঁকি দিয়া আসিয়াছে। সে হাঁড়ি দেখিয়া তবে ছাড়িল। তাহাতে আর একজনের মত ভাত ছিল। তখন সে প্রসন্নমুখে মায়ের কোলে গিয়া বসিল। এই বয়েসের ছেলে সচরাচর এরূপ করে না, কিন্তু শিশুকাল হইতে বহুকাল যাবৎ সে রুগণ ছিল বলিয়া মায়ের ক্রোড় ছাড়িয়া বাহিরের সঙ্গীসাথীদের সহিত মিশিবার সুযােগ পায় নাই। এইখানে বসিয়াই তাহাকে খেলাধুলার সাধ মিটাইতে হইয়াছে।
একহাতে গলা জড়াইয়া, মুখের উপর মুখ রাখিয়াই কাঙালী চকিত হইয়া কহিল, মা, তাের গা। যে গরম,কেন তুই অমন রােদে দাঁড়িয়ে মড়া-পােড়ানাে দেখতে গেলি? কেন আবার নেয়ে এলি? মড়া-পােড়ানাে কি তুই মা শশব্যস্ত ছেলের মুখে হাত চাপা দিয়া কহিল, ছি বাবা, মড়া-পােড়ানাে বলতে নেই, পাপ হয়। সতী-লক্ষ্মী মা-ঠাকরুন রথে করে সগ্যে গেলেন।
ছেলে সন্দেহ করিয়া কহিল, তাের এক কথা মা ! রথে চড়ে কেউ নাকি আবার সগ্যে যায়। মা বলিল, আমি যে চোখে দেখনু কাঙালী, বামুন-মা রথের উপরে বসে। তেনার রাঙা পা-দুখানি যে সবাই চোখ মেলে দেখলে রে! সবাই দেখলে? সব্বাই দেখলে। কাঙালী মায়ের বুকে ঠেস দিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিল।
মাকে বিশ্বাস করাই তাহার অভ্যাস, বিশ্বাস করিতেই সে শিশুকাল হইতে শিক্ষা করিয়াছে, সেই মা যখন বলিতেছে সবাই চোখ মেলিয়া এতবড় ব্যাপার দেখিয়াছে, তখন অবিশ্বাস করিবার আর কিছু নাই। খানিক পরে আস্তে আস্তে কহিল, তাহলে তুইও ত মা সগ্যে যাবি? বিন্দির মা সেদিন রাখালের পিসিকে বলতেছিল, ক্যান্সার মার মত সতীলক্ষ্মী আর দুলে-পাড়ায় নেই। কাঙালীর মা চুপ করিয়া রহিল, কাঙালী তেমনি ধীরে ধীরে কহিতে লাগিল, বাবা যখন তােরে ছেড়ে দিলে, তখন তােরে কত লােকে ত নিকে করতে সাধাসাধি করলে।
কিন্তু তুই বললি, না। বললি, ক্যাঙালী বাঁচলে আমার দুঃখু ঘুচবে, আবার নিকে করতে যাবাে কিসের জন্যে? হাঁ মা, তুই ও নিকে করলে আমি কোথায় থাকতুম? আমি হয়ত না খেতে পেয়ে এতদিনে কবে মরে যেতুম।
মা ছেলেকে দুই হাতে বুকে চাপিয়া ধরিল। বস্তুত সেদিন তাহাকে এ পরামর্শ কম লােকে দেয় নাই, এবং যখন সে কিছুতেই রাজি হইল না, তখন উৎপাত-উপদ্রবও তাহার প্রতি সামান্য হয় নাই, সেই কথা স্মরণ করিয়া অভাগীর চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল। ছেলে হাত দিয়া মুছাইয়া দিয়া বলিল, কঁাতাটা পেতে দেব মা, শুবি? মা চুপ করিয়া রহিল।
কাঙালী মাদুর পাতিল, কথা পাতিল, মাচার উপর হইতে ছােট বালিশটি পাড়িয়া দিয়া হাত ধরিয়া তাহাকে বিছানায় টানিয়া লইয়া যাইতে, মা কহিল, কাঙালী, আজ তাের আর কাজে গিয়ে কাজ নেই। কাজ কামাই করিবার প্রস্তাব কাঙালীর খুব ভালাে লাগিল, কিন্তু কহিল, জলপানির পয়সা দুটো ত তা হলে দেবে না মা !
দিক গে, -আয় তােকে রূপকথা বলি। আর প্রলুব্ধ করিতে হইল না, কাঙালী তৎক্ষণাৎ মায়ের বুক ঘেঁষিয়া শুইয়া পড়িয়া কহিল, বল্ তা হলে। রাজপুত্তুর, কোটালপুর আর সেই পক্ষীরাজ ঘােড়া -অভাগী রাজপুত্র, কোটালপুত্র আর পক্ষীরাজ ঘােড়ার কথা দিয়া গল্প আরম্ভ করিল। এ-সকল তাহার পরের কাছে কতদিনের শােনা এবং কতদিনের বলা উপকথা ।
কিন্তু মুহুর্ত-কয়েক পরে কোথায় গেল তাহার রাজপুত্র, আর কোথায় গেল তাহার কোটালপুত্র-সে এমন উপকথা শুরু করিল যাহা পরের কাছে তাহার শেখা নয়- নিজের সৃষ্টি। জুর তাহার যত বাড়িতে লাগিল, উষ্ণ রক্তস্রোত যত দ্রুতবেগে মস্তিষ্কে বহিতে লাগিল, ততই সে যেন নব নব উপকথার ইন্দ্রজাল রচনা করিয়া চলিতে লাগিল। তাহার বিরাম নাই, বিচ্ছেদ নাই- কাঙালীর স্বল্প দেহ বার বার রােমাঞ্চিত হইতে লাগিল। ভয়ে, বিস্ময়ে, পুলকে সে সজোরে মায়ের গলা জড়াইয়া তাহার বুকের মধ্যে যেন মিশিয়া যাইতে চাহিল।
বাহিরে বেলা শেষ হইল, সূর্য অস্ত গেল, সন্ধ্যার ম্লান ছায়া গাঢ়তর হইয়া চরাচর ব্যাপ্ত করিল, কিন্তু ঘরের মধ্যে আজ আর দীপ জ্বলিল না, গৃহস্থের শেষ কর্তব্য সমাধা করিতে কেহ উঠিল না, নিবিড় অন্ধকারে কেবল রুগণ মাতার অবাধ গুঞ্জন নিস্তব্ধ পুত্রের কর্ণে সুধাবর্ষণ করিয়া চলিতে লাগিল। সে সেই শ্মশান ও শ্মশানযাত্রার কাহিনী।
সেই রথ, সেই রাঙ্গা পা-টি, সেই তাঁর স্বর্গে যাওয়া। কেমন করিয়া শােকার্ত স্বামী শেষ পদধুলি দিয়া কাঁদিয়া বিদায় দিলেন, কি করিয়া হরিধ্বনি দিয়া ছেলেরা মাতাকে বহন করিয়া লইয়া গেল, তার পরে সন্তানের হাতের আগুন। সে আগুন ত আগুন নয় কাঙালী, সে ত হরি ! তার আকাশজোড়া ধুয়াে ত ধুয়াে নয় বাবা, সেই ত সগ্যের রথ ! কাঙালীচরণ, বাবা আমার !
কি মা?
তাের হাতের আগুন যদি পাই বাবা, বামুন-মার মত আমিও সগ্যে যেতে পাব। ৪ কাঙালী অস্ফুটে শুধু কহিল, যাঃ-বলতে নেই।
মা ছেলেকে দুই হাতে বুকে চাপিয়া ধরিল। বস্তুত সেদিন তাহাকে এ পরামর্শ কম লােকে দেয় নাই, এবং যখন সে কিছুতেই রাজি হইল না, তখন উৎপাত-উপদ্রবও তাহার প্রতি সামান্য হয় নাই, সেই কথা স্মরণ করিয়া অভাগীর চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল। ছেলে হাত দিয়া মুছাইয়া দিয়া বলিল, কঁাতাটা পেতে দেব মা, শুবি? মা চুপ করিয়া রহিল।
কাঙালী মাদুর পাতিল, কথা পাতিল, মাচার উপর হইতে ছােট বালিশটি পাড়িয়া দিয়া হাত ধরিয়া তাহাকে বিছানায় টানিয়া লইয়া যাইতে, মা কহিল, কাঙালী, আজ তাের আর কাজে গিয়ে কাজ নেই। কাজ কামাই করিবার প্রস্তাব কাঙালীর খুব ভালাে লাগিল, কিন্তু কহিল, জলপানির পয়সা দুটো ত তা হলে দেবে না মা !
দিক গে, -আয় তােকে রূপকথা বলি। আর প্রলুব্ধ করিতে হইল না, কাঙালী তৎক্ষণাৎ মায়ের বুক ঘেঁষিয়া শুইয়া পড়িয়া কহিল, বল্ তা হলে। রাজপুত্তুর, কোটালপুর আর সেই পক্ষীরাজ ঘােড়া -অভাগী রাজপুত্র, কোটালপুত্র আর পক্ষীরাজ ঘােড়ার কথা দিয়া গল্প আরম্ভ করিল। এ-সকল তাহার পরের কাছে কতদিনের শােনা এবং কতদিনের বলা উপকথা ।
কিন্তু মুহুর্ত-কয়েক পরে কোথায় গেল তাহার রাজপুত্র, আর কোথায় গেল তাহার কোটালপুত্র-সে এমন উপকথা শুরু করিল যাহা পরের কাছে তাহার শেখা নয়- নিজের সৃষ্টি। জুর তাহার যত বাড়িতে লাগিল, উষ্ণ রক্তস্রোত যত দ্রুতবেগে মস্তিষ্কে বহিতে লাগিল, ততই সে যেন নব নব উপকথার ইন্দ্রজাল রচনা করিয়া চলিতে লাগিল। তাহার বিরাম নাই, বিচ্ছেদ নাই- কাঙালীর স্বল্প দেহ বার বার রােমাঞ্চিত হইতে লাগিল। ভয়ে, বিস্ময়ে, পুলকে সে সজোরে মায়ের গলা জড়াইয়া তাহার বুকের মধ্যে যেন মিশিয়া যাইতে চাহিল।
বাহিরে বেলা শেষ হইল, সূর্য অস্ত গেল, সন্ধ্যার ম্লান ছায়া গাঢ়তর হইয়া চরাচর ব্যাপ্ত করিল, কিন্তু ঘরের মধ্যে আজ আর দীপ জ্বলিল না, গৃহস্থের শেষ কর্তব্য সমাধা করিতে কেহ উঠিল না, নিবিড় অন্ধকারে কেবল রুগণ মাতার অবাধ গুঞ্জন নিস্তব্ধ পুত্রের কর্ণে সুধাবর্ষণ করিয়া চলিতে লাগিল। সে সেই শ্মশান ও শ্মশানযাত্রার কাহিনী।
সেই রথ, সেই রাঙ্গা পা-টি, সেই তাঁর স্বর্গে যাওয়া। কেমন করিয়া শােকার্ত স্বামী শেষ পদধুলি দিয়া কাঁদিয়া বিদায় দিলেন, কি করিয়া হরিধ্বনি দিয়া ছেলেরা মাতাকে বহন করিয়া লইয়া গেল, তার পরে সন্তানের হাতের আগুন। সে আগুন ত আগুন নয় কাঙালী, সে ত হরি ! তার আকাশজোড়া ধুয়াে ত ধুয়াে নয় বাবা, সেই ত সগ্যের রথ ! কাঙালীচরণ, বাবা আমার !
কি মা?
তাের হাতের আগুন যদি পাই বাবা, বামুন-মার মত আমিও সগ্যে যেতে পাব। ৪ কাঙালী অস্ফুটে শুধু কহিল, যাঃ-বলতে নেই।
কাকে মা?
ওই যে রে-ও-গাঁয়ে যে উঠে গেছেকাঙালী বুঝিয়া কহিল, বাবাকে? অভাগী চুপ করিয়া রহিল। কাঙালী বলিল, সে আসবে কেন মা? অভাগীর নিজেরই যথেষ্ট সন্দেহ ছিল, তথাপি আস্তে আস্তে কহিল, গিয়ে বলবি, মা শুধু একটু তােমার পায়ের ধুলাে চায়। সে তখনি যাইতে উদ্যত হইলে সে তাহার হাতটা ধরিয়া ফেলিয়া বলিল, একটু কাদাকাটা করিস বাবা, বলিস মা যাচ্চে। একটু থামিয়া কহিল, ফেরবার পথে অমনি নাপতে-বৌদির কাছ থেকে একটু আলতা চেয়ে আনিস ক্যাঙালী, আমার নাম করলেই সে দেবে। আমাকে বড় ভালােবাসে।
ভালাে তাহাকে অনেকেই বাসিত। জ্বর হওয়া অবধি মায়ের মুখে সে এই কয়টা জিনিসের কথা এতবার এরকম করিয়া শুনিয়াছে যে, সে সেইখান হইতে কাঁদিতে কাঁদিতে যাত্রা করিল। পরদিন রসিক দুলে সময়মত যখন আসিয়া উপস্থিত হইল তখন অভাগীর আর বড় জ্ঞান নাই। মুখের পরে মরণের ছায়া পড়িয়াছে, চোখের দৃষ্টি এ সংসারের কাজ-সারিয়া কোথায় কোন্ অজানা দেশে চলিয়া গেছে।
কাঙালী কাঁদিয়া কহিল, মাগাে ! বাবা এসেছে-পায়ের ধুলাে নেবে যে! মা হয়ত বুঝিল, হয়ত বুঝিল না, হয়ত বা তাহার গভীর সঞ্চিত বাসনা সংস্কারের মত তাহার আচ্ছন্ন চেতনায় ঘা দিল। এই মৃত্যুপথযাত্রী তাহার অবশ বাহুখানি শয্যার বাহিরে বাড়াইয়া হাত পাতিল। রসিক হতবুদ্ধির মত দাঁড়াইয়া রহিল। পৃথিবীতে তাহারও পায়ের ধুলাের প্রয়ােজন আছে, ইহাও কেহ নাকি চাহিতে পারে তাহা তাহার কল্পনার অতীত।
বিন্দির পিসি দাঁড়াইয়া ছিল, সে কহিল, দাও বাবা, দাও একটু পায়ের ধুলাে। রসিক অগ্রসর হইয়া আসিল। জীবনে যে স্ত্রীকে সে ভালােবাসা দেয় নাই, অশন-বসন দেয় নাই, কোন খোঁজখবর করে নাই, মরণকালে তাহাকে সে শুধু একটু পায়ের ধুলা দিতে গিয়া কাঁদিয়া ফেলিল।
রাখালেরমা বলিল, এমন সতীলক্ষ্মী বামুন-কায়েতের ঘরে না জন্মে, ও আমাদের দুলের ঘরে জন্মালে কেন! এইবার ওর একটু গতি করে দাও বাবা-ক্যাঙালার হাতের আগুনের লােভে ও যেন প্রাণটা দিলে।
অভাগীর অভাগ্যের দেবতা অগােচরে বসিয়া কি ভাবিলেন জানি না, কিন্তু ছেলেমানুষ কাঙালীর বুকে ও গিয়া এ কথা যেন তীরের মত বিঁধিল ।
সেদিন দিনের বেলাটা কাটিল, প্রথম রাত্রিটা কাটিল, কিন্তু প্রভাতের জন্য কাঙালীর মা আর অপেক্ষা করিতে পারিল না। কি জানি, এত ছোেটজাতের জন্যও স্বর্গে রথের ব্যবস্থা আছে কি না, কিংবা অন্ধকারে পায়ে হাঁটিয়াই তাহাদের রওনা হইতে হয়, কিন্তু এটা বুঝা গেল, রাত্রি শেষ না হইতেই এ দুনিয়া সে ত্যাগ করিয়া গেছে।
কুটির-প্রাঙ্গণে একটা বেলগাছ, একটা কুড়াল চাহিয়া আনিয়া রসিক তাহাতে ঘা দিয়াছে কি দেয় নাই, জমিদারের দারােয়ান কোথা হইতে ছুটিয়া আসিয়া তাহার গালে সশব্দে একটা চড় কষাইয়া দিল; কুড়াল কাড়িয়া লইয়া কহিল, শালা, একি তাের বাপের গাছ আছে যে কাটতে লেগেছিস? রসিক গালে হাত বুলাইতে লাগিল, কাঙালী কদ-কাঁদ হইয়া বলিল, বাঃ, এ যে আমার মায়ের হাতে-পোতা গাছ, দারােয়ানজী।
বাবাকে খামােকা তুমি মারলে কেন? হিন্দুস্থানী দারােয়ান তাহাকেও একটা অশ্রাব্য গালি দিয়া মারিতে গেল, কিন্তু সে নাকি তাহার জননীর মৃতদেহ স্পর্শ করিয়া বসিয়াছিল, তাই অশৌচের ভয়ে তাহার গায়ে হাত দিল না। হাঁকাহাঁকিতে একটা ভিড় জমিয়া উঠিল, কেহই অস্বীকার করিল না যে বিনা অনুমতিতে রসিকের গাছ কাটিতে যাওয়াটা ভালাে হয় নাই।
তাহারাই আবার দারােয়ানজীর হাতে-পায়ে পড়িতে লাগিল, তিনি অনুগ্রহ করিয়া যেন একটা হুকুম দেন। কারণ, অসুখের সময় যে-কেহ দেখিতে আসিয়াছে কাঙালীর মার তাহারই হাতে ধরিয়া তাহার শেষ অভিলাষ ব্যক্ত করিয়া গেছে। দারােয়ান ভুলিবার পাত্র নহে, সে হাত-মুখ বাড়িয়া জানাইল, এ-সকল চালাকি তাহার কাছে খাটিবে না।
জমিদার স্থানীয় লােক নহেন; গ্রামে তাঁহার একটা কাছারি আছে, গােমস্তা অধর রায় তাহার কর্তা। লােকগুলাে যখন হিন্দুস্থানিটার কাছে ব্যর্থ অনুনয়-বিনয় করিতে লাগিল, কাঙালী ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়িয়া একেবারে কাছারি বাড়িতে আসিয়া উপস্থিত হইল। সে লােকের মুখে মুখে শুনিয়াছিল, পিয়াদারা ঘুষ লয়, তাহার নিশ্চয় বিশ্বাস হইল অতবড় অসঙ্গত অত্যাচারের কথা যদি কর্তার গােচর করিতে পারে ত ইহার প্রতিবিধান না হইয়াই পারে না।
হায় রে অনভিজ্ঞ। বাংলাদেশের জমিদার ও তাহার কর্মচারীকে সে চিনিত না। সদ্যমাতৃহীন বালক শােকে ও উত্তেজনায় উদভ্রান্ত হইয়া একেবারে উপরে উঠিয়া আসিয়াছিল, অধর রায় সেইমাত্র সন্ধ্যাহ্নিক ও যৎসামান্য জলযােগান্তে বাহিরে আসিয়াছিলেন, বিস্মিত ও ক্রুদ্ধ হইয়া কহিলেন, কে রে? আমি কাঙালী। দারােয়ানজী আমার বাবাকে মেরেছে।
বেশ করেছে। হারামজাদা, খাজনা দেয়নি বুঝি? কাঙালী কহিল, না বাবুমশায়, বাবা গাছ কাটতেছিল, আমার মা মরেচে-বলিতে বলিতে সে কান্না আর চাপিতে পারিল না। এই কান্নাকাটিতে অধর অত্যন্ত বিরক্ত হইলেন। ছোঁড়াটা মড়া ছুঁইয়া আসিয়াছে, কি জানি এখানকার কিছু ভূঁইয়া ফেলিল নাকি ! ধমক দিয়া বলিলেন, মা মরেচে ত যা নীচে নেবে দাঁড়া। ওরে কে আছিস | রে, এখানে একটু গােবরজল ছড়িয়ে দে ! কি জাতের ছেলে তুই?
কাঙালী সভয়ে প্রাঙ্গণে নামিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, আমরা দুলে।। অধর কহিলেন, দুলে ! দুলের মড়ার কাঠ কি হবে শুনি? কাঙালী বলিল, মা যে আমাকে আগুন দিতে বলে গেছে। তুমি জিজ্ঞেস কর না বাবুমশায়, মা যে সবাইকে বলে গেছে, সক্কলে শুনেছে যে ! মায়ের কথা বলিতে গিয়া তাহার অনুক্ষণের সমস্ত অনুরােধ উপরােধ মুহূর্তে স্মরণ হইয়া কণ্ঠ যেন তাহার কান্নায় ফাটিয়া পড়িতে চাহিল। অধর কহিলেন, মাকে পােড়াবি ত গাছের দাম পাঁচটা টাকা আন্ গে।
পারবি? কাঙালী জানিত তাহা অসম্ভব। তাহার উত্তরীয় কিনিবার মূল্যস্বরূপ তাহার ভাত খাইবার পিতলের কাসিটি বিন্দির পিসি একটি টাকায় বাঁধা দিতে গিয়াছে সে চোখে দেখিয়া আসিয়াছে, সে ঘাড় নাড়িল, বলিল, না। অধর মুখখানা অত্যন্ত বিকৃত করিয়া কহিলেন, না ত, মাকে নিয়ে নদীর চড়ায় পুঁতে ফেলগে যা। কার বাবার গাছে তাের বাপ কুড়ুল ঠেকাতে যায়-পাজি, হতভাগা, নচ্ছার !
কাঙালী বলিল, সে যে আমাদের উঠানের গাছ বাবুমশায়! সে যে আমার মায়ের হাতে পোঁতা গাছ। হাতে পোঁতা গাছ! পাড়ে, ব্যাটাকে গলাধাক্কা দিয়ে বার করে দে তা পড়ে আসিয়া গলাধাক্কা দিল, এবং এমন কথা উচ্চারণ করিল যাহা কেবল জমিদারের কর্মচারীই পারে। কাঙালী ধুলা ঝাড়িয়া উঠিয়া দাঁড়াইল, তার পরে ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেল। কেন সে যে মার । খাইল, কি তাহার অপরাধ, ছেলেটা ভাবিয়াই পাইল না।
গােমস্তার নির্বিকার চিত্তে দাগ পর্যন্ত পড়ি ল না। পড়িলে এ চাকরি তাহার জুটিত না। কহিলেন, পরেশ, দেখ ত হে, এ ব্যাটার খাজনা বাকি পড়েছে কি না। থাকে ত জাল-টাল কিছু একটা কেড়ে এনে যেন রেখে দেয়,-হারামজাদা পালাতে পারে। মুখুয্যে-বাড়িতে শ্রাদ্ধের দিন-মাঝে কেবল একটা দিন মাত্র বাকি। সমারােহের আয়ােজন গৃহিণীর উপযুক্ত করিয়াই হইতেছে।
বৃদ্ধ ঠাকুরদাস নিজে তত্ত্বাবধান করিয়া ফিরিতেছিলেন, কাঙালী আসিয়া তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইল, কহিল, ঠাকুরমশাই, আমার মা মরে গেছে। তুই কে? কি চাস তুই? আমি কাঙালী। মা বলে গেছে তেনাকে আগুন দিতে। তা দি গে না। কাছারির ব্যাপারটা ইতিমধ্যেই মুখে মুখে প্রচারিত হইয়া পড়িয়াছিল, একজন কহিল, ও বােধ হয় একটা গাছ চায়।
এই বলিয়া সে ঘটনাটা প্রকাশ করিয়া কহিল।। মুখুয্যে বিস্মিত ও বিরক্ত হইয়া কহিলেন, শােন আবদার। আমারই কত কাঠের দরকার,-কাল বাদে পরশু কাজ। যা যা, এখানে কিছু হবে না-এখানে কিছু হবে না। এই বলিয়া অন্যত্র প্রস্থান করিলেন।
ভট্টাচার্য মহাশয় অদূরে বসিয়া ফর্দ করিতেছিলেন, তিনি বলিলেন, তােদের জেতে কে কবে আবার পােড়ায় রে? যা, মুখে একটু নুড়াে জ্বেলে দিয়ে নদীর চড়ায় মাটি দে গে। মুখােপাধ্যায় মহাশয়ের বড় ছেলে ব্যস্তসমস্তভাবে এই পথে কোথায় যাইতেছিলেন, তিনি কান খাড়া করিয়া একটু শুনিয়া কহিলেন, দেখচেন ভট্টচার্যমশায়, সব ব্যাটারাই এখন বামুন-কায়েত হতে চায়। বলিয়া কাজের ঝেকে আর কোথায় চলিয়া গেলেন। কাঙালী আর প্রার্থনা করিল না।
এই ঘণ্টা-দুয়েকের অভিজ্ঞতায় সংসারে সে যেন একেবারে বুড়া হইয়া গিয়াছিল। নিঃশব্দে ধীরে ধীরে তাহার মরা মায়ের কাছে গিয়া উপস্থিত হইল। নদীর চরে গর্ত খুঁড়িয়া অভাগীকে শােয়ান হইল। রাখালের মা কাঙালীর হাতে একটা খড়ের আঁটি জ্বালিয়া দিয়া তাহারই হাত ধরিয়া মায়ের মুখে স্পর্শ করাইয়া ফেলিয়া দিল।
তার পরে সকলে মিলিয়া মাটি চাপা দিয়া কাঙালীর মায়ের শেষ চিহ্ন বিলুপ্ত করিয়া দিল। সবাই সকল কাজে ব্যস্ত,-শুধু সেই পােড়া খড়ের আঁটি হইতে যে স্বল্প পুঁয়াটুকু ঘুরিয়া ঘুরিয়া আকাশে উঠিতেছিল, তাহারই প্রতি পলকহীন চক্ষু পাতিয়া কাঙালী উধ্বদৃষ্টে স্তব্ধ হইয়া চাহিয়া রহিল। ]
লেখক-পরিচিতি : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে ১৫ই সেপ্টেম্বর ১৮৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। আর্থিক সংকটের কারণে এফ.এ. শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর ছাত্রজীবনের অবসান ঘটে। তিনি কিছুদিন ভবঘুরে হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেন। পরে ১৯০৩ সালে ভাগ্যের সন্ধানে বার্মা (বর্তমানে মায়ানমার) যান এবং রেঙ্গুনে অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের অফিসে কেরানি পদে চাকরি করেন। প্রবাস জীবনেই তার সাহিত্য-সাধনা শুরু এবং তিনি অল্পদিনেই খ্যাতি লাভ করেন।
১৯১৬ সালে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন এবং নিয়মিতভাবে সাহিত্য-সাধনা করতে থাকেন। গল্প, উপন্যাস রচনার পাশাপাশি তিনি কিছু প্রবন্ধ রচনা করেন। তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনেও যােগ দিয়েছিলেন, কিন্তু পরে তা ত্যাগ করেন। তিনি ১৯২০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক এবং ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট উপাধি লাভ করেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা কথাসাহিত্যে দুর্লভ জনপ্রিয়তার অধিকারী।
তাঁর উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ, বড়দিদি, বিরাজ বৌ, রামের সুমতি, দেবদাস, বিন্দুর ছেলে, পরিণীতা, পণ্ডিতমশাই, মেজদিদি, পল্লিসমাজ, বৈকুণ্ঠের উইল, শ্রীকান্ত, চরিত্রহীন, দত্তা, ছবি, গৃহদাহ, দেনা পাওনা, পথের দাবী, শেষ প্রশ্ন ইত্যাদি। শরৎচন্দ্র ১৬ই জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
আরও পড়ুন
https://t.me/s/Online_1_xbet/1017
https://t.me/s/Online_1_xbet/666
https://t.me/s/Online_1_xbet/1935
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet
https://t.me/rating_online
https://t.me/s/rating_online/9
https://t.me/s/rating_online/13
https://t.me/rating_online/5
https://t.me/rating_online/13
https://t.me/rating_online/8
https://t.me/s/rating_online
https://t.me/rating_online/7
https://t.me/Online_1_xbet/3007
https://t.me/Online_1_xbet/2225
https://t.me/Online_1_xbet/2230
https://t.me/Online_1_xbet/2425
https://t.me/Online_1_xbet/3055
https://t.me/Online_1_xbet/2036
https://t.me/Online_1_xbet/2463
https://t.me/Online_1_xbet/2489
https://t.me/Online_1_xbet/2546
https://t.me/Online_1_xbet/2034
https://t.me/Online_1_xbet/2653
https://t.me/Online_1_xbet/3435
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/1022
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/1261
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/1201
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/504
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/693
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/1482
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/1354
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/1040
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/1099
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/1174
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/845
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/830
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/1071
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/632
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/871
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/100
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/863
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/1127
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/1510
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/353
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/1178
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/510
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/773
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/363
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/441
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/740
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/522
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/296
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/1041
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/976
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/998
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/1144
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/850
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/571
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/978
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/640
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/408
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/629
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/679
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/934
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/415
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/1122
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/151
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/777
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/159
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/s/1164
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1639
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1667
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1781
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1641
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1683
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1668
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1675
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1731
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1609
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1673
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1732
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1608
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1855
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1778
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1785
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1701
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1789
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1739
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1834
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1596
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1825
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1640
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1702
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1722
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1670
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1837
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1761
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1635
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1631
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1722
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1824
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1798
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1854
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1677
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1636
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1817
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1760
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1775
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1759
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1678
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1654
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1653
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1848
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1618
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1741
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1634
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1793
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1811
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1613
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1692
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1630
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1653
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1795
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1704
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1713
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1635
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1828
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1791
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1833
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1674
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1792
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1695
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1768
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1642
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1697
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1700
https://t.me/s/Official_1xbet_1xbet/1602
https://t.me/Official_1xbet_1xbet/1829
https://t.me/s/topslotov
https://t.me/s/official_1win_aviator
https://t.me/s/reiting_top10_casino
https://t.me/s/reiting_top10_casino/6
https://t.me/reiting_top10_casino/7
https://t.me/s/reiting_top10_casino/4
https://t.me/s/reiting_top10_casino/8
https://t.me/s/reiting_top10_casino/2
https://t.me/reiting_top10_casino/8
https://t.me/reiting_top10_casino/6
https://t.me/reiting_top10_casino/9
https://t.me/reiting_top10_casino/10
https://t.me/reiting_top10_casino
https://t.me/s/reiting_top10_casino/3
https://t.me/reiting_top10_casino/5
https://t.me/s/reiting_top10_casino/10
https://t.me/s/reiting_top10_casino/7
https://t.me/reiting_top10_casino/3
https://t.me/s/reiting_top10_casino/9
https://t.me/reiting_top10_casino/4
https://t.me/s/reiting_top10_casino/5
https://t.me/s/Gaming_1xbet
https://t.me/s/PlayCasino_1xbet
https://t.me/s/PlayCasino_1win
https://t.me/s/PlayCasino_1xbet
https://t.me/s/PlayCasino_1win
https://t.me/s/ofitsialniy_1win/33/Vag
https://t.me/s/ofitsialniy_1win
https://t.me/s/Official_beefcasino
https://t.me/s/iw_1xbet
https://t.me/s/bs_1xbet/40
https://t.me/bs_1xbet/31
https://t.me/s/bs_1xbet/18
https://t.me/bs_1xbet/32
https://t.me/bs_1xbet/35
https://t.me/bs_1xbet/28
https://t.me/bs_1xbet/16
https://t.me/s/bs_1xbet/19
https://t.me/bs_1xbet/4
https://t.me/s/bs_1xbet/20
https://t.me/s/bs_1xbet/3
https://t.me/s/bs_1xbet/46
https://t.me/s/bs_1xbet/12
https://t.me/bs_1xbet/26
https://t.me/s/bs_1xbet/2
https://t.me/bs_1xbet/48
https://t.me/s/bs_1xbet/22
https://t.me/s/bs_1xbet/29
https://t.me/s/bs_1xbet/36
https://t.me/s/bs_1xbet/24
https://t.me/bs_1xbet/3
https://t.me/s/bs_1xbet/8
https://t.me/bs_1xbet/17
https://t.me/s/bs_1xbet/43
https://t.me/s/bs_1xbet/9
https://t.me/s/bs_1xbet/37
https://t.me/s/bs_1xbet/20
https://t.me/s/bs_1xbet/41
https://t.me/s/bs_1xbet/32
https://t.me/bs_1xbet/25
https://t.me/s/bs_1xbet/36
https://t.me/s/bs_1xbet/16
https://t.me/s/bs_1xbet/17
https://t.me/s/bs_1xbet/13
https://t.me/s/bs_1xbet/13
https://t.me/bs_1xbet/28
https://t.me/s/bs_1xbet/49
https://t.me/bs_1xbet/17
https://t.me/s/bs_1xbet/22
https://t.me/s/bs_1xbet/36
https://t.me/bs_1xbet/15
https://t.me/bs_1xbet/26
https://t.me/jw_1xbet/892
https://t.me/jw_1xbet/970
https://t.me/s/jw_1xbet/279
https://t.me/jw_1xbet/201
https://t.me/s/jw_1xbet/40
https://t.me/s/jw_1xbet/698
https://t.me/bs_1Win/323
https://t.me/s/bs_1Win/1178
https://t.me/bs_1Win/948
https://t.me/bs_1Win/972
https://t.me/bs_1Win/1107
https://t.me/s/bs_1Win/1058
https://t.me/s/bs_1Win/643
https://t.me/s/bs_1Win/663
https://t.me/bs_1Win/1255
https://t.me/bs_1Win/699
https://t.me/bs_1Win/379
https://t.me/bs_1Win/958
https://t.me/bs_1Win/1139
https://t.me/s/Official_mellstroy_casino/43
https://t.me/s/Official_mellstroy_casino/59
https://t.me/Beefcasino_rus/52
https://t.me/Official_mellstroy_casino/22
https://t.me/Official_mellstroy_casino/8
https://t.me/s/Official_mellstroy_casino/26
https://t.me/Official_mellstroy_casino/20
https://t.me/s/Official_mellstroy_casino/34
https://t.me/s/Official_mellstroy_casino/36
https://t.me/s/Official_mellstroy_casino/7
https://t.me/Official_mellstroy_casino/49
https://t.me/Official_mellstroy_casino/29
https://t.me/s/Official_mellstroy_casino/49
https://t.me/s/Official_mellstroy_casino/25