আইন ও স্বাধীনতা বলতে কি বোঝায়: সাধারণ অর্থে স্বাধীনতা বলতে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনাে কাজ করাকে বােঝায় । কিন্তু প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা বলতে এ ধরনের অবাধ স্বাধীনতাকে বােঝায় না। কারণ, সীমাহীন স্বাধীনতা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, কাউকে ইচ্ছামত সবকিছু করার স্বাধীনতা দিলে সমাজে অন্যদের ক্ষতি হতে পারে, যা এক অশান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
আইন ও স্বাধীনতা
তাই পৌরনীতিতে স্বাধীনতা ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। অন্যের কাজে হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করে নিজের ইচ্ছানুযায়ী নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে কাজ করাই হলাে স্বাধীনতা। অর্থাৎ স্বাধীনতা হলাে এমন সুযােগ-সুবিধা ও পরিবেশ, যেখানে কেউ কারও ক্ষতি না করে সকলেই নিজের অধিকার ভােগ করে। স্বাধীনতা ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়তা করে এবং অধিকার ভােগের ক্ষেত্রে বাধা অপসারণ করে।
স্বাধীনতার বিভিন্ন রূপ
স্বাধীনতা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন-
- ১। ব্যক্তি স্বাধীনতা,
- ২। সামাজিক স্বাধীনতা,
- ৩। রাজনৈতিক স্বাধীনতা,
- ৪। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও
- ৫। জাতীয় স্বাধীনতা।
১. ব্যক্তিস্বাধীনতা :
ব্যক্তিস্বাধীনতা বলতে এমন স্বাধীনতাকে বােঝায়, যে স্বাধীনতা ভােগ করলে অন্যের
কোনাে ক্ষতি হয় না। যেমন- ধর্মচর্চা করা ও পারিবারিক গােপনীয়তা রক্ষা করা। এ ধরনের স্বাধীনতা ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব বিষয়।
২. সামাজিক স্বাধীনতা :
জীবন রক্ষা, সম্পত্তি ভােগ ও বৈধ পেশা গ্রহণ করা সামাজিক স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের স্বাধীনতা ভােগের মাধ্যমে নাগরিক জীবন বিকশিত হয়। সমাজে বসবাসকারী মানুষের অধিকার রক্ষার জন্যই সামাজিক স্বাধীনতা প্রয়ােজন। এই স্বাধীনতা এমনভাবে ভােগ করতে হয়, যেন অন্যের অনুরূপ স্বাধীনতা ক্ষুন্ন না হয় ।
৩. রাজনৈতিক স্বাধীনতা :
ভােটদান, নির্বাচিত হওয়া, বিদেশে অবস্থানকালীন নিরাপত্তা লাভ ইত্যাদি নাগরিকের রাজনৈতিক স্বাধীনতা। এসব স্বাধীনতার মাধ্যমে ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় শাসনকাজে অংশগ্রহণের সুযােগ লাভ করে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. অর্থনৈতিক স্বাধীনতা :
যােগ্যতা অনুযায়ী পেশা গ্রহণ এবং উপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভ করাকে
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলা হয়। মূলত আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির জন্য নাগরিকরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভােগ করে। এই স্বাধীনতা না থাকলে অন্যান্য স্বাধীনতা ভােগ করা যায় না। সমাজের অন্য শ্রেণির শােষণ থেকে মুক্ত থাকার জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রয়ােজন।
৫. জাতীয় স্বাধীনতা :
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র এবং অন্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত।
বাংলাদেশের এই অবস্থানকে জাতীয় স্বাধীনতা বা রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা বলে। এই স্বাধীনতার ফলে একটি রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের কর্তৃত্বমুক্ত থাকে। প্রত্যেক স্বাধীন রাষ্ট্র জাতীয় স্বাধীনতা ভােগ করে।
আইন ও স্বাধীনতা
আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতবিরােধ রয়েছে। তাদের অনেকেই বলেন, আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। আবার তাদের কেউ কেউ বলেন, আইন ও স্বাধীনতা পরস্পরবিরােধী। প্রকৃতপক্ষে আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক বিরােধী নয় বরং ঘনিষ্ঠ। নিমে এ সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে।
১. আইন স্বাধীনতার রক্ষক :
আইন স্বাধীনতার রক্ষক হিসেবে কাজ করে। যেমন- আমাদের বাঁচার স্বাধীনতা রয়েছে। আইন আছে বলেই আমরা সকলে বাঁচার স্বাধীনতা ভােগ করছি। জন লক যথার্থই বলেছেন, যেখানে আইন থাকে না, সেখানে স্বাধীনতা থাকতে পারে না।
আইন স্বাধীনতার অভিভাবক :
আইন স্বাধীনতার অভিভাবক হিসেবে কাজ করে । পিতা-মাতা যেমন অভিভাবক হিসেবে সন্তানদের সকল বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে নিরাপদে রাখেন, ঠিক তেমনি আইন সর্ব প্রকার বিরােধী শক্তিকে প্রতিহত করে স্বাধীনতাকে রক্ষা করে।
৩. আইন স্বাধীনতার শর্ত :
এক একটি আইন একেকটি স্বাধীনতা। আইনের নিয়ন্ত্রণ আছে বলে সবাই স্বাধীনতা ভােগ করতে পারে। উইলােবির মতে, আইনের নিয়ন্ত্রণ আছে বিধায় স্বাধীনতা রক্ষা পায়।
৪. আইন স্বাধীনতাকে সম্প্রসারিত করে :
আইন নাগরিকের স্বাধীনতা সম্প্রসারিত করে । সুন্দর, শান্তিময়, সুষ্ঠু জীবন যাপনের জন্য যা প্রয়ােজন তা আইনের দ্বারা সৃষ্টি হয়। এসব কাজ করতে গিয়ে যদিও আইন স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু বাস্তবে স্বাধীনতা তাতে সম্প্রসারিত হয়।
সুতরাং বলা যায়, আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ । তবে সকল আইন স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ করে না। যেমন- জার্মানির হিটলারের আইনের কথা উল্লেখ করা যায়। কারণ, তার আইন মানবতাবিরােধী ছিল। তবে যে আইন জনগণের সম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত, সে আইন স্বাধীনতার রক্ষক, অভিভাবক, শর্ত ও ভিত্তি।
আরও জানতে পড়ুন: আইন বিভাগ: আইনের প্রকারভেদ ও আইনের উৎস