আনারস চাষ পদ্ধতি: বাংলাদেশে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আনারস চাষ করা হয়। সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং টাঙ্গাইলের মধুপুরে ব্যাপক আনারসের চাষ হয়। ঢাকা, নরসিংদী, কুমিল্লা, দিনাজপুর জেলাতেও প্রচুর আনারস জন্মে।
তবে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার (জুস, জ্যাম, জেলি ইত্যাদি) তৈরির কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে পৃথিবীর সর্বত্রই আনারসের একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বাণিজ্যিক ফল হিসাবেও আন্তর্জাতিক বাজারে আনারস একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল। বর্তমানে বাংলাদেশে এটি একটি অর্থকরী ফসল । আনারস রপ্তানিপণ্য হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ অবদান রাখছে।
আনারস চাষ পদ্ধতি
আরও পড়ুন: ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
আনারসের জাত
বাংলাদেশে আনারসের তিনটি জাত দেখা যায়। যথা : হানিকুইন, জায়েন্ট কিউ ও ঘােড়াশাল।
আনারসের উৎপাদন প্রযুক্তি : আনারসের প্রযুক্তিগুলাে নিম্নে আলােচনা করা হলাে
মাটি ও জমি তৈরি
দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি আনারস উৎপাদনের জন্য ভালাে। জমি চাষ ও মই এমনভাবে দিতে হবে যাতে মাটি ঝুরঝুরা ও সমতল হয় এবং জমিতে বৃষ্টির পানি জমে না থাকে। চারা রােপণের জন্য চাষকৃত জমিতে ১৫ সেমি উঁচু এবং ১ মিটার প্রশস্ত বেড তৈরি করতে হবে। এক বেড থেকে আর এক বেডের দূরত্ব হবে ৫০-১০০ সেমি। পাহাড়ের ঢালে আনারস চাষ করার জন্য এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যা বেশি খাড়া নয়। পাহাড়ের ঢালু জমি কোনােক্রমেই চাষ বা কোদাল দিয়ে মাটি আলগা করা যাবে না, শুধু আগাছা ভালােভাবে পরিষ্কার করে চারা রােপণের উপযােগী করতে হবে।
আনারসের চারা নির্বাচন ও তৈরি
আনারস গাছের বংশবিস্তার অঙ্গজ পদ্ধতিতেই হয়ে থাকে । আনারস গাছে সাধারণত চার ধরনের চারা উৎপন্ন হয় যাদেরকে সাকার বা তেউড় বলা হয়। সাকার বা তেউড়ের বিবরণ নিয়ে দেওয়া হলাে :
- • ফলের মাথায় দুই ধরনের চারা উৎপন্ন হয়। ফলের মাথায় সােজাভাবে যে চারাটি উৎপন্ন হয় তাকে মুকুট চারা বলে। আর মুকুট চারার গােড়া থেকে যে চারা বের হয় তাকে স্কন্ধ চারা বা মুকুট
- মুকুট চারা স্লিপ বলে।
- *ফলের গােড়া বা বোঁটার উপর থেকে যে স্কন্ধ চারা বা মুকুট স্লিপ চারা বের হয় তাকে বোঁটা চারা বলে ।
- *ফল বোঁটার নিচে কিন্তু মাটির উপরে কাণ্ড বোটা চারা থেকে যে চারা বের হয় তাকে পার্শ্বচারা বা
- পার্শ্ব চারা কাণ্ডের কেকড়ি বলে।
- *গাছের গােড়া থেকে মাটি ভেদ করে যেন গুঁড়ি বা ভূয়ে চারা চারা বের হয় তাকে গােড়ার কেকড়ি বা ভূঁয়ে চারা বলে । আনারস চাষের জন্য ভূঁয়ে চারা ও পার্শ্বচারা সবচেয়ে ভালাে।
আনারসের চারা রােপণ
মধ্য আশ্বিন হতে মধ্য অগ্রহায়ণ পর্যন্ত এই এক মাস আনারসের চারা রােপণের সঠিক সময়। সেচের ব্যবস্থা থাকলে চারা রােপণের সময় আরও এক / দেড় মাস পিছানাে যায় । সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০ সেমি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০-৪০ সেমি বজায় রেখে চারা রােপণ করতে হবে।
সার প্রয়ােগ পদ্ধতি :
- ১। সার প্রয়ােগ পদ্ধতির প্রথম কাজ হলাে পরিমাণ নির্ধারণ । আনারসের জন্য গাছ প্রতি নিমােক্ত হারে সার প্রয়ােগ করতে হবে ।
- ২। (ক) গােবর, টিএসপি ও জিপসাম বেড তৈরির সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
- (খ) ইউরিয়া ও এমওপি (পটাশ) চারার বয়স ৪-৫ মাস হলে ৫ কিস্তিতে প্রয়ােগ করতে হবে। সার ভালােভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা
শুষ্ক মৌসুমে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি নিকাশের জন্য নালা কেটে দিতে হবে। চারা অতি লম্বা হলে ৩০ সেমি রেখে আগার পাতা সমান করে কেটে দিতে হবে। আনারসের জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। আনারস ফসলে তেমন কোনাে ক্ষতিকর
পােকামাকড় ও রােগ সহজে আক্রমণ করে না। তাই বালাই ব্যবস্থাপনা আলােচনা করা হলাে না।
ফল সংগ্রহ
চারার বয়স ১৫/১৬ মাস হলে মাঘ মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত সময়ে আনারসের ফুল আসা শুরু করে। জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত সময়ে আনারস পাকে। গাছ থেকে আনারসের বোঁটা কেটে সগ্রহ করতে হবে ।
ফলন
প্রতি হেক্টরে হানিকুইন ২০-২৫ টন এবং জায়েন্ট কিউ ৩০-৪০ টন ফলন দিয়ে থাকে।
আরও পড়ুন