কৃষি উপকরণফসল বীজ ও বংশ বিস্তারক উপকরণ 

কৃষি উপকরণ:ফসল বীজ ও বংশ বিস্তারক উপকরণ 

কৃষি উপকরণ:ফসল বীজ ও বংশ বিস্তারক উপকরণ: ফসল ফলানাের জন্য প্রয়ােজনীয় মৌলিক উপাদানগুলাের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলাে ফসল বীজ ও বংশবিস্তারক উপকরণ । এদের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমরা যেমন বছরের পর বছর ফসল উৎপাদন করতে পারি, তেমনি একটি দেশে নতুন ফসল আত্তীকরণ ও সংযােজন করতে পারি, একটি ফসলের জীবতাত্ত্বিক গুণাগুণ ধরে রাখতে পারি এবং নানা জীব কৌশল প্রয়ােগের মধ্য দিয়ে উন্নততর করে তুলতে পারি।

কৃষি উপকরণ:ফসল বীজ ও বংশ বিস্তারক উপকরণ 

কৃষি উপকরণফসল বীজ ও বংশ বিস্তারক উপকরণ 

বীজ উদ্ভিদের বংশবিস্তারের প্রধান মাধ্যম। সাধারণভাবে উদ্ভিদ জন্মানাের জন্য যে অংশ ব্যবহার করা হয় তাকে বীজ বলে। বীজ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে আমরা বীজকে দুইভাবে বুঝতে পারি । যথা-

ক) উদ্ভিদতত্ত্ব অনুসারে, উদ্ভিদের নিষিক্ত ও পরিপক্ক ডিম্বককে বীজ বলে। এ ধরনের বীজকে ফসল বীজ বা প্রকৃত বীজ বা উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজও বলে। যেমন:- ধান, গম, সরিষা, তিল, শিম, বরবটি, টমেটো, ফুলকপি, মরিচ, জিরা, ধৈঞ্চা, জাম, কাঁঠাল ইত্যাদি।

খ) কৃষিতত্ত্ব অনুসারে উদ্ভিদের যে কোনাে অংশ (মূল, পাতা, কাণ্ড, কুঁড়ি, শাখা) যা উপযুক্ত পরিবেশে একই জাতের নতুন উদ্ভিদের জন্ম দিতে পারে, তাকে বংশবিস্তারক উপকরণ বলে। এ ধরনের উপকরণকে কৃষিতাত্ত্বিক বীজ বা অঙ্গজ বীজও বলা হয়। 

যেমন : আমের কলম, আলুর কন্দ, মিষ্টি আলুর লতা, আখের কাণ্ড, পাথরকুচি গাছের পাতা, কাকরােলের মূল, গােলাপের ডাল ও কুঁড়ি, আনারসের মুকুট, কলাগাছের সাকার, আদা, হলুদ, রসুন, কচু ও সকল উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজ। কাজেই দেখা যায় সকল উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজ কৃষিতাত্ত্বিক বীজের অন্তর্ভুক্ত কিন্তু সকল কৃষিতাত্ত্বিক বীজ উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজের অন্তর্ভুক্ত নয় ।

ফসল বীজ উৎপাদনের ধাপসমূহ 

বীজ উৎপাদন একটি জটিল প্রক্রিয়া। উন্নতমানের বীজ পেতে হলে যথাযথ নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণ করে বীজ উৎপাদন করতে হবে । ফসল উৎপাদনের জন্য যে সব ধাপ অতিক্রম করা হয় বীজ উৎপাদনের জন্যও সেভাবেই অগ্রসর হতে হবে। পার্থক্য হলাে এই যে, বিভিন্ন ফসলের বীজ যেমন- ধান, পাট, গম, মুলা, মরিচ ইত্যাদি উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ধাপসমূহের বিশেষ যত্নবান হতে হয় : 

১। বীজ জমি নির্বাচন : 

বীজ উৎপাদনের জন্য উর্বর জমি নির্বাচন করা উচিত। জমি অবশ্যই আগাছামুক্ত ও আলােবাতাসযুক্ত হতে হবে। নির্বাচিত জমিতে পূর্ববর্তী বছরে একই জাতের বীজের চাষ না হয়ে থাকলে আরও ভালাে । নির্বাচিত জমিতে অন্তত ২% জৈব পদার্থ থাকা উচিত। 

২। বীজ জমি পৃথকীকরণ : 

বীজ উৎপাদনের জন্য নির্বাচিত জমি ও পার্শ্ববর্তী একই ফসলের জমির মধ্যে

নির্দিষ্ট দূরত্বের ব্যবধান থাকতে হবে । এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কাক্ষিত শস্য বীজের সাথে যেন অন্য জাতের বীজের সংমিশ্রণ না ঘটে। 

৩। বীজ সগ্রহ : 

বীজ সংগ্রহ বীজ উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বীজ উৎপাদনের জন্য অবশ্যই ও প্রত্যায়িত বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বীজ সংগ্রহের সময় নিম্নোক্ত তথ্য জেনে নিতে হবে ।

  • ক) জাতের নাম
  • খ) বীজ উৎপাদনকারীর নাম ও নম্বর 
  • গ) অন্য জাতের বীজের শতকরা হার
  • ঘ) বীজের অঙ্কুরােদগম ক্ষমতা ঙ) বীজের আর্দ্রতা।
  • চ) বীজ পরীক্ষার তারিখ। উল্লিখিত তথ্যগুলাে একটি গ্যারান্টি পত্রে ট্যাগ লিখে বীজের বস্তায় বা প্যাকেটে রাখা হয়। 

৪। বীজের হার নির্ধারণ : 

বীজের বিশুদ্ধতা, সজীবতা, অঙ্কুরােদগম ক্ষমতা, আকার, বপনের সময়, মাটির

উর্বরতা শক্তি এসব বিবেচনা করে হেক্টর প্রতি বীজের হার নির্ধারণ করা হয়। 

৫। নির্বাচিত জমি প্রস্তুতকরণ : 

এক এক জাতের বীজের জন্য জমির প্রস্তুতি এক এক রকম হয়ে থাকে।

যেমন, রােপা ধানের বীজ উৎপাদন করতে জমি ভালােভাবে কর্দমাক্ত করে চাষ করতে হবে। আবার গমের বেলায় জমি শুকনাে অবস্থায় ৪-৫ বার চাষ করে পরিপাটি করতে হবে। সার প্রয়ােগের মাত্রাও এক এক বীজের জন্য এক এক রকম হবে। 

৬। বীজ বপন :

নির্বাচিত ফসলের বীজ উপযুক্ত সারিতে বপন করতে হবে । বীজতলায় প্রতিটি বীজ সমান

গভীরতায় বপন করা উচিত। কোন বীজ কত গভীরতায় বপন করতে হবে তা বীজের আকার, আর্দ্রতা ও মাটির উপর নির্ভর করে। 

৭। রগিং বা বাছাইকরণ : 

বীজ বপনের সময় যতই বিশুদ্ধ বীজ ব্যবহার করা হােক না কেন জমিতে কিছু

কিছু অন্য জাতের উদ্ভিদ ও আগাছা দেখা যাবে। অনাকাঙ্ক্ষিত উদ্ভিদ তুলে ফেলতে হবে। তিন পর্যায়ে রগিং বা বাছাই করা হয় ।

  • ক। ফুল আসার আগে 
  • খ। ফুল আসার সময় 
  • গ। পরিপক্ক পর্যায়ে 

৮। পরিচর্যা :

বীজের উৎপাদনের জন্য খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়ােজন হয়। নিচে কয়েকটি পরিচর্যার ধরন উল্লেখ করা হলাে : 

  1. ক) সুষম মাত্রায় সার প্রয়ােগ করা 
  2. খ) জৈব সার প্রয়ােগ 
  3. গ) প্রয়ােজনমতাে সেচ দেওয়া 
  4. ঘ) বৃষ্টির পানি বা সেচের পানি জমলে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা 
  5. ঙ) আগাছা পরিষ্কার করা
  6. চ) রােগ ও পােকা দমন করা 
  7. ছ) সারের উপরি প্রয়ােগ করা 

৯। বীজ সগ্রহ : 

বীজ পরিপক্ব হওয়ার পর পরই কাটতে হবে । তারপর মাড়াই করে ঝেড়ে পরিষ্কার করতে হবে ।

আরও পড়ুন

  1. কলা চাষ যেভাবে করবেন
  2. ঔষধি উদ্ভিদ ও এর ব্যবহার 
  3. উপকূলীয় বনায়ন ধারণা ও গুরুত্ব
  4. আনারস চাষ পদ্ধতি
  5. ধানের সমস্যা ও সমাধান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *