গাভী পালন পদ্ধতি

গাভী পালন পদ্ধতি

গাভী পালন পদ্ধতি: কৃষির অগ্রগতি ও বিকাশের সাথে পশু ও গাভী পালন অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। বলা হয়ে থাকে একটি জাতির মেধার বিকাশ নির্ভর করে মূলত ঐ জাতি কতটুকু দুধ পান করে তার উপর। আজকের বিশ্বে যেখানেই কৃষি বিকাশ লাভ করেছে গাভীর দুধ উৎপাদন ও ব্যবহার সেখানে শিল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

গাভী পালন পদ্ধতি

গাভী পালন পদ্ধতি

আমাদের দেশেও মােটামুটিভাবে বলা যায় যে গাভী পালন একটি শিল্প হিসাবে গড়ে উঠছে। আমাদের দেশে পাঁচ ধরনের উন্নত জাতের গাভী দেখা যায় সেগুলাে হলাে-হলস্টেইন, ফ্রিজিয়ান, জার্সি, শাহিওয়াল, সিন্ধি, রেড চিটাগাং প্রভৃতি। এই সমস্ত জাতের গাভীর দুধ উৎপাদনক্ষমতা মােটামুটি ভালাে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লালনপালন ও প্রজনন করালে এদের উৎপাদন ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

পরিচর্যা 

গাভীর পরিচর্যার লক্ষ্য হলাে গাভী যাতে অধিক কর্মক্ষম থাকে। গাভীর গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও দুগ্ধদোহন কালের পরিচর্যার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। গাভীকে নিয়মিত গােসল করানাে, শিং কাটা, খুর কাটা ইত্যাদির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এসব পরিচর্যায় গাভীর স্বাস্থ্য ভালাে থাকে এবং উৎপাদনে ভালাে প্রভাব পড়ে। 

গর্ভকালীন সময়ে গাভীর দিকে বিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত কারণ এই সময়ে গাভীর ভিতরের বাচ্চা বড় হয়ে উঠতে থাকে। এই সময়ে গাভীকে প্রচুর পরিমাণে দানাদার জাতীয় খাদ্য দিতে হবে। প্রসবকালীন সময়ে এবং প্রসবের কয়েক দিন আগে গাভীকে আলাদা জায়গায় রেখে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। 

এই গাভীকে সমতল জায়গায় রাখতে হবে। গর্ভধারণ ও প্রসবকালে গাভীকে সঠিকভাবে যত্ন ও পরিচর্যা করতে হবে। গর্ভকালীন অবহেলা করলে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া গাভী প্রজনন ও গর্ভধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। প্রসবের লক্ষণ দেখা দিলেই গাভীকে শান্ত পরিবেশে রেখে ২-৩ ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রসব অগ্রসর না হলে ভেটেরিনারি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। 

প্রসবের পর বাছুরকে অবশ্যই শাল দুধ খাওয়াতে হবে, কারণ এই শাল দুধ রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সঠিক ভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে। বাচ্চা প্রসবের পর ফুল পড়ে গেলে তা সাথে সাথে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। গাভী প্রসবের ৫-৭ দিন পর্যন্ত শাল দুধ দেয় এর পরে স্বাভাবিক দুধ পাওয়া যায়। 

দুধ দোহনের সময় গাভীকে উত্তেজিত করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং দ্রুততার সাথে দোহনের কাজ শেষ করতে হবে। গাভীর বাচ্চা প্রসবের ৯০ দিনের মধ্যে গাভী গরম না হলে ডাক্তারি পরীক্ষা করে গরম করতে হবে । গাভী পরিচর্যার আরও একটি লক্ষ্য হচ্ছে, গাভীকে পােকামাকড় ও মশামাছি থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা।

গাভীর খাদ্য

গাভীর খাদ্য

গাভীর শারীরিক বৃদ্ধি ও কোষকলার বিকাশ ও ক্ষয়পূরণ, তাপ ও শক্তি উৎপাদন, স্নেহ পদার্থ সংরক্ষণ, দুধ ও মাংস উৎপাদন, প্রজননের সক্ষমতা অর্জন, গর্ভাবস্থায় বাচ্চার বিকাশ সাধন প্রভৃতি কাজের জন্য উপযুক্ত ?

খাদ্যের প্রয়ােজন। খাদ্য পরিবেশনে শর্করা আমিষ ও চর্বিজাতীয় খাদ্যের প্রতুলতার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ গাভীর শারীরিক বিকাশের জন্য সব ধরনের খাদ্য উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম। এসব খাদ্য মিশ্রণে পশুর দৈহিক প্রয়ােজন মিটানাের জন্য উপযুক্ত পরিমাণ ও অনুপাতে সব রকম পুষ্টি উপাদান খাকতে হবে। 

গাভীর পরিপূর্ণ বিকাশ ও উৎপাদনের জন্য তাই সুষম খাদ্যের প্রয়ােজন। গাভীর খাদ্যদ্রব্য সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-আঁশযুক্ত খাদ্য, দানাদার খাদ্য ও ফিউ অ্যাডিটিভস । আঁশযুক্ত খাদ্যের মধ্যে খড়বিচালি, কাঁচাঘাস, লতাপাতা, হে, সাইলেজ ইত্যাদি প্রধান। দানাদার খাদ্যের মধ্যে শস্যদানা, গমের ভুসি, চালের কুঁড়া, খৈল ইত্যাদি প্রধান। 

তাছাড়া খনিজ ও ভিটামিন এর মধ্যে হাঁড়ের গুঁড়া, বিভিন্ন ভিটামিন – খনিজ প্রিমিক্স পদার্থ রয়েছে। এসব পশু খাদ্য প্রয়ােজন মতাে সংগ্রহ করে গাভীকে পরিবেশন করতে হবে। গাভীকে যে পরিমাণ খাদ্য পরিবেশন করতে হয় তা একধরনের থাম্বরুল পদ্ধতির মাধ্যমে নিরুপণ করা যায়। যেমন-

  • ১। প্রতিদিন একটি গাভী যে পরিমাণ মােটা আঁশযুক্ত খড় ও সবুজ ঘাস খেতে পারে তা তাকে খেতে দিতে হবে। 
  • ২। গাভীর শরীর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১.৫ কেজি দানাদার এবং প্রতি ১.০ লিটার দুধ উৎপাদনের জন্য গাভীকে খড় ও সবুজ ঘাসের সাথে ০.৫ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে। 
  • ৩। গাভীকে ৪০-৫০ গ্রাম হাঁড়ের গুঁড়া ও ১০০ -১২০ গ্রাম খাদ্য লবণ সরবরাহ করতে হবে। 
  • ৪। তাছাড়া দুগ্ধবতী গাভীকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত খাবার পানি সরবরাহ করতে হবে।

গাভীর স্বাস্থ্যসম্মত লালন-পালন ও রােগ প্রতিরােধ ব্যবস্থা

স্বাস্থ্যসম্মত লালনপালন বলতে এমন কতগুলাে স্বাস্থ্যগত বিধিব্যবস্থাকে বােঝায় যা এ যাবতকাল পশুসম্পদ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। এগুলাে হলাে

  • • বাসস্থান নির্মাণে আলাে-বাতাসের ব্যবস্থা ও দুর্যোগ নিবারণ করা। 
  • • খাদ্য ও পানির পাত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। পচা, বাসি ও ময়লাযুক্ত খাদ্য ও পানি পরিহার করা। সর্বদা তাজা খাদ্য ও পানি সরবরাহ করা। 
  • • প্রজনন ও প্রসবে নির্জীবাণু পদ্ধতি অবলম্বন করা দ্রুত মলমূত্র নিষ্কাশন করা। 
  • • অসুস্থ গাভীর পৃথকীকরণ ও মৃত গাভীর সকার করা। নিয়মিত কৃমিনাশক ব্যবহার করা।
  • • সংক্রামক ব্যাধির প্রতিষেধক টিকা প্রয়ােগ করা ইত্যাদি।

গাভীকে প্রাত্যহিক পর্যবেক্ষণ ও নােগ চিকিৎসা 

নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে অসুস্থ গাভী শনাক্ত করা যায়। গাভীর বিভিন্ন রােগ বালাই যেন হয় সেই জন্য সময়মতাে টিকা দিতে হবে। গাভী তড়কা, বাদলা, ক্ষুরা রােগ, গলাফোলা, রিন্ডারপেস্ট, ম্যাস্টাইটিস, পরজীবী ইত্যাদি রােগে আক্রান্ত হতে পারে। গাভীর যেকোনাে রােগ দেখা দিলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই ধরনের আরও পোষ্ট পেতে আমাদের poramorso24.com নিয়মিত ভিজিট করুন । ধর্যসহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন

  1. গরুর মাংস ও দুধ উৎপাদনে অ্যালজি গুরুত্বপূর্ণ কেন
  2. গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা
  3. মাছের খাদ্য সংরক্ষণের পদ্ধতি
  4. কৃষি ও জলবায়ু: বিরূপ আবহাওয়া-সহিষ্ণু ফসল ও ফসলের জাত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *