জীবন ও জীবিকা ৭ম শ্রেণি ১ম অধ্যায় সমাধান : আজ যেগুলো বাস্তব অতীতে সেগুলো ছিল মানুষের স্বপ্ন। আর আজ যা কল্পবিলাসী মনের স্বপ্ন আগামীতে তা হয়ত বাস্তব হবে। বর্তমানে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে কথা বলা যায় এবং ভিডিওতে চিত্র দেখা যায়।
কিন্তু একসময় তা কল্পনা করাও কঠিন ছিল। তেমনিভাবে আজ যে কাজগুলো মানুষ করে সেই কাজগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট দিয়েও করানো গেলে মানুষ তখন অতীতের পেশা বদল করে নতুন নতুন পেশার দিকে ধাবিত হবে।
জীবন ও জীবিকা ৭ম শ্রেণি ১ম অধ্যায় সমাধান
বর্তমানে আইওটি প্রযুক্তিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত যেকোনো যন্ত্র যেমন- টেলিভিশন, বাতি, পাখা ইত্যাদিকে যেভাবে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তেমনি এমন একদিন আসবে যখন এক গ্রহে বসে অন্য গ্রহের চলমান কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এবং পৃথিবীর মানুষ ভিনগ্রহবাসীদের সাথে প্রযুক্তির সাহায্যে যোগাযোগ রক্ষা করবে। তখন নতুন নতুন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাবে মানুষের জীবনধারা এবং পেশা।
অভিজ্ঞতা-১ মূল বই: পৃষ্ঠা ৪২ ও ৪৩
নিচে বেশকিছু রূপক ছবি দেওয়া আছে, যেগুলোতে প্রযুক্তি ও পেশা সম্পর্কে সংকেত দেওয়া আছে। আমরা নিজেদের করুনা থেকে এগুলো সম্পর্কে ধারণা করি বা যেটা আমাদের অনুমান হয়, সেটাই আমরা লিখি। (জীবন ও জীবিকা বই: পৃষ্ঠা ৪২ ও ৪৩)
উত্তর : রূপক ছবিতে প্রদর্শিত প্রযুক্তি ও পেশা সম্পর্কে আমি আমার কল্পিত ধারণা/অনুমান লিখলাম :
ইন্টারনেট অব থিংস প্রযুক্তি (আইওটি) :
থিংস অর্থ কোনো বস্তু । ইন্টারনেট অব থিংস মানে হলো ইন্টারনেটের সহায়তায় কোনো বস্তু বা ডিভাইসকে নিয়ন্ত্রণ করা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি টেলিভিশনকে যেভাবে রিমোটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তেমনি ইন্টারনেট অব থিংস প্রযুক্তির মাধ্যমে রিমোটের মতো ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে নির্দিষ্ট বস্তু বা ডিভাইস যেমন- টিভি, ফ্রিজ, এসি, বাতি, পাখা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। চিত্রে দেখা যাচ্ছে, একজন ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ইন্টারনেট অব থিংস প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন বস্তু বা ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করছেন। এ প্রযুক্তিকে ইংরেজিতে Internet of Things Technology বা আইওটি বলা হয়।
আরটিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি (Artificial Intelligence Technology) :
ইংরেজি আরটিফিসিয়াল অর্থ হচ্ছে কৃত্রিম। আর ইন্টেলিজেন্স অর্থ বুদ্ধি। এ হিসেবে আরটিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি মানে হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোবট ও অন্য যন্ত্রদের কৃত্রিমভাবে বুদ্ধিমান করা হয়। মানুষ যেমন যেকোনো নতুন কাজ পরিবেশ থেকে পর্যবেক্ষণ করে নিজে নিজে শিখে কিংবা কেউ শিখিয়ে দিলে তা শিখে নিতে পারে; ঠিক তেমনিভাবে আরটিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি রোবট বা ডিভাইসকে শিখিয়ে দেওয়া হয় একটি নির্দিষ্ট কাজ কীভাবে করতে হবে। ফলে উক্ত রোবট বা ডিভাইসটি মানুষের মতো বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কৃত্রিম বুদ্ধি প্রয়োগ করে কাজ করতে পারে। চিত্রে দেখা যাচ্ছে, একটি রোবট কীভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ইনপুট সংযুক্ত করে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
ইন্টারনেট অব থিংস এবং সাইবার সিকিউরিটি প্রযুক্তি :
ইন্টারনেট অব থিংস প্রযুক্তিতে আমরা বাসায় থাকা যেকোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস কাছে কিংবা দূরে যেকোনো জায়গায় বসে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এছাড়া এরূপ প্রযুক্তি ডিভাইসে বিদ্যমান বিভিন্ন তথ্যের আপডেট মেসেজ বা মেইলের মাধ্যমে প্রদান করে থাকে। যেমন- ফ্রিজের ভেতরে কী খাবার আছে, কী নেই; এসি চলছে কিনা, বাতি বন্ধ করতে হবে কিনা ইত্যাদি।
আবার সাইবার সিকিউরিটি প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইনে সংঘটিত কোনো অপরাধ, চুরি কিংবা প্রতারণা প্রতিরোধ এবং অপরাধীকে ধরার জন্য কাজ করে থাকে। চিত্রে দেখা যাচ্ছে, ইন্টারনেট অব থিংস প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফ্রিজ এবং এসির কার্যকরণ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং:
সাধারণ অর্থে মার্কেটিং হচ্ছে কোনো পণ্যের প্রচারণা করা এবং ঐ পণ্য কিনতে গ্রাহককে আগ্রহী করে তোলা। এই অর্থে ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে অনলাইন মাধ্যমে পণ্যের প্রচারণা করা ও গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। এরূপ প্রযুক্তিতে অনলাইন মাধ্যমে একটি পণ্য নিয়ে বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা চালানো হয়। ফলে অনলাইনে থাকা নির্দিষ্ট মানুষের কাছে তার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন পৌঁছে যায়।
চিত্রে দেখা যাচ্ছে অনলাইনে সংযুক্ত আছেন। এমন একজন গ্রাহকের কাছে ডিজিটাল মার্কেটিং প্রযুক্তিতে অনেকগুলো পছন্দের খাবার সামনে এসেছে। এখান থেকে তিনি সাধ্য অনুযায়ী নিজের পছন্দের খাবারটি অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন।
থ্রিডি মুভি সিস্টেম (3D Movie System):
যে সিস্টেমে আমাদের দুই চোখ মস্তিষ্কে একই বস্তুর দুটি ছবি পাঠায় এবং তা জীবন্ত করে দেখায় তাকে থ্রিডি মুভি সিস্টেম বা ত্রিমাত্রিক সিনেমা বলে। এক্ষেত্রে ছবি দুটি সামান্য ভিন্ন হয়ে থাকে। যখন মস্তিষ্কে একটির ওপর আরেকটি ছবি আপতিত হয় তখন থ্রিডি রূপলাভ করে। মূলত এই ধারণাকে কাজে লাগিয়েই থ্রিডি মুভি (3D Movie) বা গেম (Game) বানানো হয়। চিত্রে দেখা যাচ্ছে, একজন ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট চশমা ব্যবহার করে থ্রিডি মুভি দেখছেন।
অভিজ্ঞতা-২ মূল বই: পৃষ্ঠা ৫১
গল্পে এমন বেশ কয়েকটি প্রযুক্তির কথা আমরা জেনেছি যে প্রযুক্তিগুলো অদূর ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এমন প্রযুক্তিগুলোর নাম নিচের ছকে লিখে ফেলি। পাশাপাশি গল্প থেকে প্রযুক্তিটি সম্পর্কে যেটুকু ধারণা পেয়েছি, তার আলোকে মানবকল্যাণে কোন কোন ক্ষেত্রে সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে তা কল্পনা করি এবং দলে আলোচনা করে এখানে সাজিয়ে লিখি। (জীবন ও জীবিকা বই: পৃষ্ঠা ৫১)
উত্তর : মানব কল্যাণকর গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি :
১. বিগ ডাটা প্রযুক্তি: বিগ ডাটা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুদীর্ঘ অতীতের সংরক্ষিত তথ্যের বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য আগাম বার্তা ও তথ্য প্রদান করা যায়। এতে মানুষ আগাম ব্যবস্থা নিতে পারে। যেমন- নদীভাঙ্গনের গতিবিধির রেকর্ড দেখে নদীভাঙ্গন রোধের ব্যবস্থা নেওয়া। বিগ ডাটা প্রযুক্তির সাহায্যে বিশাল পরিধির তথ্য সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ, সন্ধান, স্থানান্তর, হালনাগাদকরণ এবং তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়। সরকারি কাজে, পণ্য উৎপাদনে ব্যাংকিং খাতে, শিক্ষা খাতে, স্বাস্থ্য খাতে, আবহাওয়ার পূর্বাভাসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিগ ডাটার ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।
২. অপমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তি: এ প্রযুক্তির সাহায্যে বাস্তব জগতে যা কিছু ঘটছে সেটা অনুভবের পাশাপাশি ভার্চুয়াল জগতের নতুন তথ্যের সন্ধান পাওয়া যাবে। এ প্রযুক্তি রাস্তায় বের হলে দিকনির্দেশনা দিবে এবং গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। ভয়েস কমান্ডের মতো সাধারণ কাজ থেকে শুরু করে মানুষের শরীরে জটিল অস্ত্রোপচারের মতো জটিল কাজেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়।
৩. সাইবার সিকিউরিটি: এর মাধ্যমে সাইবার হ্যাকিং ও সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৪. ইন্টারনেটযুক্ত রোবট: এই রোবট বাসাবাড়ির কাজ করে। রান্না এবং ঘর গোছানো থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ করতে পারে। কেননা এরূপ রোবটের গায়ে ইন্টারনেট যুক্ত থাকে। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন হয়।
6
৫. আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) যুক্ত ফ্রিজ: এটি ফ্রিজের ভেতরের খাবার শেষ হয়ে গেলে মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে নোটিফিকেশন দেয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী যেকোনো জায়গা থেকে ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৬. ডিজিটাল মার্কেটিং: কম খরচে অধিকসংখ্যক মানুষের নিকট বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেওয়া যায়।
অনলাইন বা ডিজিটাল যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে পণ্য ক্রয় ও বিক্রয় করা সম্ভব হয়।
শিক্ষকের মন্তব্য: শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে কাজ করে ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি বিষয়ক যে তালিকা তৈরি করেছে তা সন্তোষজনক।
অভিজ্ঞতা-৩ (একক কাজ) মূল বই: পৃষ্ঠা ৫২
এবার কল্পনা কর তুমি নিজে ভবিষ্যতে পেশা হিসেবে এ রকম একটি প্রযুক্তি ক্ষেত্রকে বেছে নিয়েছ। তোমার নিজের পেশাকে কল্পনা করে নিজের একটি ছবি আঁক এবং তুমি দেশের কল্যাণে সেই পেশায় কী কী অবদান রাখতে চাও সেটি নিজের কল্পনা অনুযায়ী লেখ। (জীবন ও জীবিকা বই: পৃষ্ঠা ৫২)
উত্তর : আমার পেশা হিসেবে কাল্পনিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রের বিবরণ এবং দেশের কল্যাণে উক্ত পেশায় আমার অবদান :………….
আমার পেশার নাম : কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।
আমার পছন্দ করা প্রযুক্তির ক্ষেত্র : সাইবার সিকিউরিটি।
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার পেশায় আমার পালন করা বিভিন্ন দায়িত্ব :
- মানুষের বিভিন্ন গোপন তথ্য সংরক্ষণে ভূমিকা রাখা।
- অনলাইন হ্যাকিং বা হুমকি থেকে সুরক্ষা দেওয়া।
- উচ্চমানসম্পন্ন প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে সিকিউরিটি প্রদান করা।
- ভার্চুয়াল মেশিন, কমান্ড লাইন্স, সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, নেটওয়ার্কিং প্রভৃতি যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সাইবার সিকিউরিটির কাজ অব্যাহত রাখা।
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার পেশায় দায়িত্বরত অবস্থায় আমার ছবি :
আমার নাম সাহাম। আমি একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। আমি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে সাইবার সিকিউরিটিতে কর্মরত। মানুষের সার্বিক সাইবার নিরাপত্তা প্রদান করা আমার দায়িত্ব। যেসব হ্যাকার মানুষের কম্পিউটারে ঢুকে গোপন তথ্য হ্যাক করে তাদের খুঁজে বের করাই আমার কাজ। এজন্য আমাকে ভার্চুয়াল মেশিন, কমান্ড লাইন্স, সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, নেটওয়ার্কিং প্রভৃতি প্রযুক্তি ব্যবহার করে উঁচু মানসম্পন্ন প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হয়। এসব কাজের মাধ্যমে আমি সাইবার নিরাপত্তার কাজটি যথাযথভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করি। যদিও আমাদের কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই খুব ঠান্ডা মাথায় এবং সতর্কতার সাথে এটি করতে হয়।
তবে এ পেশায় দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সাইবার ক্রাইমার তথা অপরাধীদের ধরতে সক্ষম হই। ফলে শাস্তির ভয়ে অপরাধীরা এ ধরনের হ্যাকিং থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়। এতে দেশের মানুষ প্রতারণা তথা ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পায় এবং তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। ফলশ্রুতিতে ব্যক্তি, সমাজ এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটে। নিজেকে এই পেশায় নিয়োজিত করতে পেরে আমি গর্বিত।