পাট চাষ পদ্ধতি ও পাটের জাত: বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, মেঘনা প্রভৃতি নদ-নদীর পলিবাহিত উর্বর সমতল ভূমিতে প্রচুর পরিমাণে পাট জন্মে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, বার্মা, মিশর ও ব্রাজিল প্রভৃতি দেশেও পাট জন্মে। পাটের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে পাটশিল্প গড়ে উঠেছে।
পাট চাষ পদ্ধতি ও পাটের জাত
জমি নির্বাচন :
উর্বর দোআঁশ মাটি পাট চাষের জন্য সবচেয়ে উপযােগী। তবে বেলে ও এঁটেল মাটি ছাড়া সব জমিতেই পাট চাষ করা যায়। যে জমিতে বর্ষার শেষের দিকে পলি পড়ে সে জমি পাট চাষের জন্য উত্তম। তােষা পাট উঁচু জমিতে এবং দেশি পাট উঁচু ও নিচু দুই ধরনের জমিতেই চাষ করা যায় ।
চাষ উপযােগী পাটের জাতসমূহ :
প্রত্যেকটি ফসলের এমন অনেক জাত আছে যেগুলাের মধ্যে ফলনশীলতা, পরিবেশগত উপযােগিতা, পােকা ও রােগবালাই প্রতিরােধ ক্ষমতা, দৈহিক বৈশিষ্ট্য (আকার, আকৃতি ও বর্ণ), পুষ্টিমান, খাদ্যগুণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি গুণাবলি বিদ্যমান। তবে একই জাতে সব বৈশিষ্ট্যের সর্বোকৃষ্ট সমাবেশ ঘটানাে সম্ভব হয় না। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (BJRI) ১৭টি দেশি, ১৬টি তােষা বা বগী পাট, ২টি কেনাফ এবং ১টি মেস্তা জাতের পাট উদ্ভাবন ও অবমুক্ত করেছে।
দেশি পাটের জাতসমূহ:
পাট চাষ পদ্ধতি ও পাটের জাত: সিভিএল-১ (সবুজপাট), সিভিই-৩ (আশু পাট), সি সি-৪৫ (জো পাট),ডি -১৫৪, এটম পাট -৩৮ ইত্যাদি দেশি পাটের জাত।
তােষা বা বগী পাটের জাতসমূহ :
ও -৪, ও- ৯৮৯৭ (ফাল্পনি তােষা), সিজি (চিন সুরা গ্রিন) ইত্যাদি তােষা বা বগী পাটের জাত।
কেনাফ জাতসমূহ : এইচ সি-২ (জলি কেনাফ), এইচ সি – ৯৫
মেস্তাজাত : এইচ এস -২৪ (টানী মেস্তা)
জমিচাষ :
ফাল্গুন-চৈত্র মাসে দুইএক পশলা বৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে পাটের জমি চাষ করতে হয়। রবি ও ফসল তােলার পর পরই জমি চাষ করা উচিত । ৫-৬টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটির ঢেলা ভেঙেসমান করতে হবে। পাটের বীজ ছােট বলে মাটির দলা ভেঙে মিহি করতে হবে এবং আগাছা থাকলে বা পূর্ববর্তী ফসলের শিকড় উঠিয়ে ফেলতে হবে, নতুবা বীজ আশানুরূপ গজাবে না।
সার প্রয়ােগ :
পাটের জমিতে সঠিক সময়ে পরিমাণমতাে জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করে পাটের ফলন সহজেই বৃদ্ধি করা যায়। পাটের জমিতে সঠিক নিয়মে জৈব সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সার পরিমাণে কম লাগবে। তবে মাটিতে দস্তা ও গন্ধকের অভাব অনুভূত না হলে জিপসাম ও জিঙ্ক সালফেট ব্যবহারের প্রয়ােজন নেই।
বীজ বপনের ৬-৭ সপ্তাহ পর সার প্রয়োেগ :
জমি নিড়ানি দিয়ে আগাছা মুক্ত করে ও-৯৮৯৭ জাত বাদে অন্যান্য জাতের বেলায় শতক প্রতি ২০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ও-৯৮৯৭ জাতের বেলায় শতক প্রতি ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া কিছু পরিমাণ শুকননা মাটির সাথে মিশিয়ে জমিতে ছিটিয়ে দিয়ে হাে’ বা নিড়ানি যন্ত্রের সাহায্যে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে । দ্বিতীয়বার ইউরিয়া সার দেওয়ার সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন গাছের কচি পাতা ও ডগায় প্রয়ােগকৃত সার না লাগে । সার প্রয়ােগের সময় মাটিতে যেন পর্যাপ্ত রস থাকে।
বীজ শােধন :
বীজ বপন করার আগে শােধন করে নেওয়া উত্তম । প্রতি কেজি পাট বীজের সাথে রিডােমিল বা ক্যাপটান ৭৫% বালাইনাশক মিশিয়ে বীজ শােধন করে নেওয়া উচিত। বীজ বপনের সময় : সঠিক সময়ে পাটের বীজ না বুনলে গাছে অসময়ে ফুল আসে এবং ফলন কম হয়, পাটের গুণগত মানও কমে যায়। পাট জাতভেদে ১৫ই ফেব্রুয়ারি হতে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত বােনা হয়।
বীজ বপন পদ্ধতি ও বীজ হার :
জমিতে পাট বীজ সারিতে ও ছিটিয়ে এ দুই উপায়ে বপন করা যায়। সারিতে বীজ বপন করলে বীজের পরিমাণ কম লাগে। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ২৫-৩০ সেমি এবং সারিতে বীজ থেকে বীজের দূরত্ব হবে ৭-১০ সেমি আবার ছিটানাে পদ্ধতিতে বুনলে বীজ বেশি লাগবে । বীজ যেন মাটির খুব গভীরে বােনা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জমিতে “জো” আসলে বীজ বুনতে হবে।
বীজ বপনের পর পরিচর্যা
চারা পাতলা করণ ও আগাছা দমন :
চারা গজানাের ১৫-২০ দিন পর ঘন চারা থেকে দুর্বল চারাগুলাে উঠিয়ে এবং সাথে সাথে জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। দ্বিতীয় বার ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে এবং শেষবার ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে নিড়ানি দিয়ে মাটি আলগা করে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
সেচ ও নিকাশ ব্যবস্থা :
পাটের জমিতে খরা দেখা দিলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে এবং জমিতে পানি জমে থাকলে তাকে নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
পােকামাকড় দমন :
পাট ক্ষেতে বিছা পােকা, উরচুঙ্গা, চেলে পােকা, ঘােড়া পােকা, মাকড় ইত্যাদির আক্রমণ হয়ে থাকে। নিচে কয়েকটি পােকার নাম, ক্ষতির লক্ষণ ও দমনের পদ্ধতি বর্ণনা করা হলাে :
ক) বিছা পােকা
লক্ষণ :
কচি ও বয়স্ক সব পাতাই খেয়ে ফেলে। স্ত্রী মথ পাটের পাতার উল্টা পিঠে গাদা করে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পর প্রায় ৬-৭ দিন পর্যন্ত বাচ্চাগুলাে পাতার উল্টা দিকে দলবদ্ধভাবে থাকে। পরে এরা সব গাছে ছড়িয়ে পড়ে।
দলবদ্ধভাবে থাকা অবস্থায় কীড়াগুলাে পাতার সবুজ অংশ খেয়ে পাতাকে সাদা পাতলা পর্দার মতাে করে ফেলে এবং আক্রান্ত পাতাগুলাে দূর থেকেই সহজে দৃশ্যমান হয়। আক্রমণ ৪ ব্যাপক হলে এরা কচি ডগাও খেয়ে ফেলে।
দমন পদ্ধতি
• পাটের পাতায় ডিমের গাদা দেখলে ডিমের গাদাসহ পাতা তুলে ধ্বংস করতে হবে।
• আক্রমণের প্রথম পর্যায়ে যখন ডিম থেকে বের হওয়া কীড়াগুলাে দলবদ্ধভাবে থাকে, তখন
পােকাসহ পাতাটি তুলে পায়ে পিষে, গর্তে চাপা দিয়ে অথবা অল্প কেরােসিন মিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে মারতে হবে ।
*পাট কাটার পর শুকনাে জমি চাষ করলে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা পুত্তলিগুলাে বের হয়ে আসে যা পােকাখাদক পাখি খেয়ে ফেলে।
*বিছা পােকা যাতে আক্রান্ত ক্ষেত থেকে অন্য ক্ষেতে ছড়াতে না পারে সেজন্য আক্রান্ত ক্ষেতের চারদিকে প্রতিবন্ধক নালা তৈরি করে অল্প কেরােসিন মিশ্রিত পানি নালায় রাখতে হবে ।
• নির্ধারিত মাত্রায় রাসায়নিক বালাইনাশক প্রয়ােগ করতে হবে ।
খ) উরচুঙ্গা
লক্ষণ
জমিতে গর্ত করে দিনের বেলায় গর্তে বসবাস করে এবং সন্ধ্যা বেলায় গর্ত থেকে বের। হয়ে চারা পাটগাছের গােড়া কেটে গর্তে নিয়ে যায়। এতে পাট ক্ষেত মাঝে মাঝে গাছশূন্য হয়ে যায়। অনাবৃষ্টির সময় আক্রমণ বেশি হয় এবং প্রচুর বৃষ্টিপাতের পর আক্রমণ কমে যায়। পূর্ণ বয়স্ক পােকা পাট গাছের শিকড় ও কাণ্ডের গােড়ার অংশ খায়।
পাট চাষ পদ্ধতি ও পাটের জাত
দমন পদ্ধতি
• প্রতিবছর যেসব জমিতে উরচুঙ্গার আক্রমণ দেখা যায় সেখানে সাধারণ পরিমাণের চেয়ে বেশি
করে বীজ বপন করতে হবে ।
• আক্রান্ত জমিতে চারা ৮-৯ সেমি হওয়ার পর ঘন গাছ বাছাই করে পাতলা করতে হবে ।
• সম্ভব হলে নিকটস্থ জলাশয় থেকে আক্রান্ত জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
• জমি চাষের সময় নির্ধারিত মাত্রায় রাসায়নিক বালাইনাশক প্রয়ােগের ব্যবস্থা করতে হবে।
• গর্তে কীটনাশক প্রয়ােগ করে। কীটনাশক বালাইনাশকের বিষটোপ প্রয়ােগ করে।
গ) ঘােড়া পােকা
লক্ষণ
ঘােড়া পােকা পাট গাছের কচি ডগা ও পাতা আক্রমণ করে। ফলে কচি ডগা নষ্ট হয়ে যায় এবং শাখা-প্রশাখা বের হয়। ফলে পাটের ফলন ও আঁশের মান কমে যায়। দমন পদ্ধতি
• পােকার আক্রমণ দেখা দিলে কেরােসিন ভেজা দড়ি গাছের উপর দিয়ে টেনে দিলে পােকার
আক্রমণ কম হয়।
*শালিক বা ময়না পাখি ঘােড়া পােকা খেতে পছন্দ করে। তাই এসব পাখি বসার জন্য পাট ক্ষেতে
বাঁশের কঞ্চি এবং গাছের ডাল পুঁতে দিতে হবে।
• নির্ধারিত মাত্রায় রাসায়নিক বালাইনাশক ছিটাতে হবে।
ঘ) চেলে পােকা
লক্ষণ
পাট চাষ পদ্ধতি ও পাটের জাত: স্ত্রী পােকা চারা গাছের ডগায় ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা গাছের ভিতরে চলে যায় এবং সেখানে বড় হতে থাকে। ফলে গাছের ডগা মরে যায় এবং শাখা প্রশাখা বের হয়। গাছ বড় হলে পাতার গােড়ায় কাণ্ডের উপর ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। ফলে ঐ জায়গায় গিটের সৃষ্টি হয়। পাট পচানাের সময় ঐ গিটগুলাে পচেনা। আঁশের উপর কালাে দাগ থেকে যায়। এতে আঁশের মান ও দাম কমে যায়।
দমন পদ্ধতি
• বীজ বপনের আগে ও পাট কাটার পরে ক্ষেতের আশে পাশে যে সব আগাছা থাকে সেগুলাে
পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
• আক্রান্ত পাট গাছগুলাে তুলে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
• গাছের উচ্চতা ৫-৬ সেমি লম্বা হওয়ার পর নির্ধারিত মাত্রায় রাসায়নিক বালাইনাশক প্রয়ােগ করতে হবে।
ঙ) মাকড়
পাটক্ষেতে দুই ধরনের মাকড় দেখা যায়। যথা-
হলদে ও লাল মাকড়।
লক্ষণ
পাট চাষ পদ্ধতি ও পাটের জাত: হলদে মাকড় কচি পাতায় আক্রমণ করে পাতার রস চুষে খায়। এতে কচি পাতাগুলাে কুঁকড়ে যায় এবং পাতার রং তামাটে হয়ে যায়। হলদে মাকড় ফুলের কুঁড়িকেও আক্রমণ করে। ফলে কুঁড়ি ফুটতে পারে না। ফুলের পাপড়ির রং হলদে থেকে কালচে রঙের হয়ে যায় ও ঝরে পড়ে। এতে বীজের ফলনও কমে যায়। একটানা খরা বা অনাবৃষ্টির সময় এদের আক্রমণ বেশি দেখা যায় । লাল মাকড় একটু নিচের পাতা আক্রমণ করে।
.
দমন পদ্ধতি
• চুন ও গন্ধক ১৪২ অনুপাতে পানির সাথে মিশিয়ে আক্রান্ত পাট ক্ষেতে ছিটাতে হবে ।
• কাঁচা নিমপাতার রস ২:৫ অনুপাতে পানির সাথে মিশিয়ে প্রয়ােগ করতে হবে।
নির্ধারিত মাত্রায় রাসায়নিক বালাইনাশক ছিটাতে হবে।
রােগ দমন :
পাট চাষ পদ্ধতি ও পাটের জাত: পাটে কাণ্ড পচা, কালােপডি, গােড়া পচা, শুকনা ক্ষত, ঢলে পড়া, ইত্যাদি রােগ দেখা দেয়। নিম্নে কয়েকটি রােগের লক্ষণ ও দমন পদ্ধতি বর্ণনা করা হলাে :
ক) কাপচা রােগ :
লক্ষণ :
পাতা ও কাণ্ডে গাঢ় বাদামি রঙের দাগ দেখা দেয়। এ দাগ গাছের গােড়া
থেকে আগা পর্যন্ত যে কোনাে অংশে দেখা দিতে পারে। দাগগুলােতে অসংখ্য কালাে বিন্দু দেখা যায় । এ কালাে বিন্দুগুলােতে ছত্রাক জীবাণু থাকে। কখনাে কখনাে আক্রান্ত স্থানে গােটা গাছই ভেঙে পড়ে। কেনাফ ও মেস্তা পাটে এ রােগ দেখা দিতে পারে।
খ) কালাে পট্টিরােগ :
এ রােগের লক্ষণ প্রায় কাণ্ড পচা রােগের মতােই। তবে এতে কাণ্ডে কালাে রঙের বেষ্টনীর মতাে দাগ পড়ে। আক্রান্ত স্থানে ঘষলে হাতে কালাে গুঁড়ার মতাে দাগ লাগে। এ রােগে গাছ শুকিয়ে মারা যায়।
গ) শুকনা ক্ষত :
এ রােগটি শুধু দেশি জাতের পাটেই দেখা যায়। চারা অবস্থায় আক্রমণ করলে চারা মারা
যায় । বড় গাছের কাণ্ডে কালচে দাগ পড়ে। আক্রান্ত স্থান ফেটে যায় এবং ক্ষতস্থানে জীবাণু সৃষ্টি হয় । এ জীবাণুগুলাে বাতাসে উড়ে ফল আক্রমণ করে।
আক্রান্ত ফল কালাে ও আকারে ছােট হয়। এ রােগে গাছ মরে না, তবে আক্রান্ত অংশ শক্ত হয় । তাই পাট পচাননার পরেও আক্রান্ত স্থানের ছাল পাট কাঠির সাথে লেগে থাকে। এর আঁশ নিম্নমানের হয়।
প্রতিকার/দমন ব্যবস্থা :
কাণ্ড পচা, কালােপট্টি ও শুকনা ক্ষত এ তিনটি রােগই বীজ, মাটি ও বায়ুবাহী। এদের প্রতিকারের ব্যবস্থাও একই রকমের। যেমন :
• পাট কাটার পর জমির আগাছা, আবর্জনা ও পরিত্যক্ত গাছের গােড়া উপড়িয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
• বীজ বপনের আগে বীজ শােধন করতে হবে । • নীরােগ পাট গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
• জমি থেকে সর্বদা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে ।
• রােগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে হবে।
*রাসায়নিক বালাইনাশক ছিটাতে হবে।
পাট পচনের সময় নির্ধারণ
পাট গাছের আঁটি পানিতে ডুবানাের ১০-১১ দিন পর থেকেই পাটের পচন পরীক্ষা করতে হবে। সাধারণত জাগ থেকে ৪-৫ টি পাট গাছ টেনে বের করে যদি সহজে ছাল তথা আঁশ পৃথক করা যায় তবে বুঝতে হবে পাট গাছের পচন শেষ হয়েছে। গরম আবহাওয়ায় ১২-১৪ দিন এবং ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ২০-২৫ দিনের মধ্যেই পাট পচে যায়।
আঁশ ছাড়ানাে ও পরিষ্কারকরণ
পাট চাষ পদ্ধতি ও পাটের জাত:পচার পর গাছ থেকে দুইভাবে আঁশ ছাড়ানাে যায়। যথা
১) পানি থেকে প্রতিটি আঁটি উঠিয়ে এবং শুকনাে জায়গায় বসে প্রতিটি গাছ থেকে আলাদাভাবে আঁশ ছাড়িয়ে নেওয়ার পর কতকগুলাে পাট গাছের আঁশ একত্রে করে ধুয়ে নেওয়া হয়।
২) হাটু বা কোমর পর্যন্ত পানিতে দাঁড়িয়ে পাটের আঁটির গােড়ায় কাঠ বা বাঁশের মুগুর দ্বারা পিটানাে হয়। পরে গােড়ার অংশ হতে পেঁচিয়ে নিয়ে পানির উপর সমান্তরালভাবে সামনে পিছনে ঠেলা দিলেই অগ্রভাগের পাটকাঠি বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে আঁশগুলাে ভালােভাবে ধুয়ে নিয়ে আঁটি বেঁধে রাখা হয়।
আঁশ শুকানাে ও সংরক্ষণ
বাঁশের আড় তৈরি করে তাতে প্রখর সূর্যালােকে পাটের আঁশ শুকানাে হয়। আঁশ কম শুকালে ভিজা থাকে বিধায় পচন ক্রিয়া শুরু হয়। এতে আঁশের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সঠিকভাবে পাটের আঁশ শুকিয়ে নেওয়ার পর সুন্দর করে আঁটি বেঁধে গুদামে সংরক্ষণ করতে হয়।
ফলন
জাত ভেদে ফলনের তারতম্য হয় । তােষা পাটের তুলনায় দেশি পাটের ফলন সামান্য বেশি হয়।
বাংলাদেশের পাট ফসলের গুরুত্ব
পাট একটি আঁশ জাতীয় ফসল। বাংলাদেশে উৎপাদিত অর্থকরী ফসলগুলাের মধ্যে পাটের স্থান শীর্ষে। পাটের ব্যবহারিক উপযােগিতা, অর্থনৈতিক গুরুত্ব ইত্যাদি বিবেচনা করে পাটকে সােনালি আঁশ বলে অভিহিত করা হয়। পাট ফসলটি যে সময়ে জন্মায় সে সময় বৃষ্টি থাকে। তাই সেচের দরকার হয় না।
পাট ফসলটি খরা ও জলাবদ্ধতা দুটোই সহ্য করতে পারে। কাজেই বাংলাদেশের যে সব এলাকায় সেচ ব্যবস্থার অভাব রয়েছে এবং যেখানে মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত জমিতে পানি জমে থাকে, সেখানে ধানের চেয়ে পাট চাষ বেশি হয়। এছাড়া বাংলাদেশের প্রায় ৩০০-৪০০ হাজার হেক্টর জমি আছে যেখানে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধু পাট ছাড়া অন্য কোনাে ফসল চাষ সম্ভব নয়।
খরা, বন্যা, অতিবৃষ্টি ইত্যাদির কারণে পাট অন্যান্য ফসলের চেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশে দেশি ও তােষা এ দুই জাতের পাটের চাষ হয়। তবে দেশি জাতের তুলনায় তােষা জাতের পাটের চাষ বর্তমানে বেশি হচ্ছে। এর কারণ হলাে পূর্বে যে সব এলাকায় দেশি পাটের চাষ হত, তা ছিল নিচু এলাকা।
বর্তমানে খাদ্য শস্যের চাহিদার জন্য ঐ সমস্ত এলাকা ধান চাষের আওতায় চলে গেছে। পাট চলে গেছে তুলনামূলকভাবে উঁচু ভূমি এলাকায় যেখানে বৃষ্টি নির্ভরতা বেশি। যাহােক পাট ফসল শুধু আঁশ হিসাবেই নয়, কৃষিজাত শিল্পে, ঔষধি শিল্পে, পরিবেশ সংরক্ষণে ও সবজি হিসাবে পাটের গুরুত্ব অপরিসীম। |পাট চাষ পদ্ধতি ও পাটের জাত।
এই ধরনের আরও পোষ্ট পেতে আমাদের poramorso24.com নিয়মিত ভিজিট করুন । ধর্যসহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। বেলি ফুল চাষ পদ্ধতি ও রােগ বালাই ব্যবস্থাপনা
আরও পড়ুন