প্রাথমিক চিকিৎসার কিছু পদ্ধতি
(ক) ক্ষিপ্র গতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে আগের কাজ আগে এবং পরের কাজ পরে এ নীতিতে কাজ করতে হবে। (খ) শ্বাস-প্রশাসের বিঘ্ন দেখা দিলে কৃত্রিম উপায়ে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। (গ) রক্তক্ষরণ হলে দ্রুত রক্ত ক্ষরণ বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে। (ঘ) স্নায়ুবিক আঘাতের চিকিৎসা সঙ্গে সঙ্গে করতে হবে। (ঙ) রােগী বা আহত ব্যক্তিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের নিকট নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। (চ) নিয়মিত পড়াশুনা ও মহড়া দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত থাকতে হবে।প্রাথমিক চিকিৎসার উদ্দেশ্য
১। আহতদের জীবন রক্ষার চেষ্ঠা করা। ২। রোগীর বা আহত ব্যক্তির অবস্থার অবনতি রোধ করা। ৩। আহতদের চিকিৎসায় সহযোগীতা করা।প্রাথমিক চিকিৎসার গুরুত্ব
প্রাথমিক চিকিৎসার গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন সময়ের এক ফোড়, অসময়ের দশ ফোঁড়”। প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে কিছু জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, অগ্নি, ভূমিকম্প প্রভৃতি দুর্ঘটনায় লোকে বিভিন্নভাবে আহত হয়। ইহাছাড়া আধুনিক জগতে যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদির বহুল ব্যবহারের দরুন মানুষ বিভিন্নভাবে আহত হয়। তাই এই সমস্ত আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রতিটি নাগরিকের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ গ্রহন অপরিহায্য হয়ে পড়েছে।কেটে বা ছিলে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা
ঘরের কাজ করার সময় সবচেয়ে বেশি ঘটে এ বিপদটি। এ ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা বা রক্তপাত কমানোই প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া দরকার। – ক্ষতস্থান ধুয়ে নিন। প্রয়োজনে সাবান পানি দিয়ে যত্নের সঙ্গে ক্ষতস্থানে ময়লা পরিষ্কার করুন। পরিষ্কার সুতি কাপড় দিয়ে সাবধানে ক্ষতস্থানে পানি মুছে ফেলুন। – পরিষ্কার গজ বা ব্যান্ডেজ দিয়ে ক্ষতস্থান চেপে ধরুন। – হাতে কেটে গেলে হাত কিছুক্ষণ উঁচু করে ধরুন। এতে রক্তক্ষরণ কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধ হয়ে আসবে। – তারপর বিটাডিন বা এন্টিসেপটিক দিয়ে ওই স্থান পরিষ্কার করে এন্টিবায়োটিক ক্রিম লাগিয়ে ড্রেসিং করুন। – রক্ত বন্ধ না হলে বা সেলাই প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। ড্রেসিং এ কাজ হলে একদিন পরপর ওষুধ নতুন করে লাগান।স্নায়ুবিক আঘাত (Shock)/ফিট প্রাথমিক চিকিৎসা
আঘাত, তীব্র ব্যথা, দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থাকলে পায়ে রক্ত জমে রক্ত সঞ্চালনের যে অসুবিধার সৃষ্টি হয় তাকেই স্নায়ুবিক আঘাত বা ফিট বলে।প্রাথমিক চিকিৎসা ও করনীয়
(ক) প্রথমেই রোগীকে সমান জায়াগায় (মেঝেতে) পা উচু করে শােয়াতে হবে। এভাবে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রােগীর জ্ঞান ফিরে আসে। তবে রোগীর যদি খিচুনি হয় তাহলে কাপড়ের টুকরা/রুমাল মুখের মধ্যে দিতে হবে যেন জিহ্বায় কামড় না লাগে। এর পর ডাক্তারের নিকট নিয়ে আসতে হবে। (খ) ঘাড়, বুক ও কোমরের কাপড় ঢিলা করে দিন। (গ) উৎসাহ জনক কথা বলে আহতের মনে সাহসের সঞ্চার করুন।মৌমাছির কামড়ে ঘরোয়া চিকিৎসায় করণীয়:
বাড়ির আশপাশ কিংবা রাস্তা ঘাট যে কোন জায়গায় যে কেউ মৌমাছির কামড়ে আক্রান্ত হতে পারে। তাই তৎক্ষণাৎ কিছু ঘরোয়া নিরাময় পদ্ধতিসহ কিছু জরুরী বিষয় জানা থাকলে নিজে এবং প্রিয় জন বা প্রতিবেশী ব্যথা, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারে। বড় রকমের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে বা বাঁচাতে পারে। মৌমাছির কামড়ে ঘরোয়া চিকিৎসায় করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন মৌমাছি বা বোলতার কামড়ে ঘরোয়া চিকিৎসাদাহ ও ঝলসানো ক্ষত (Burns and Scalds)
দাহ এবং ঝলসানো কি?
শুস্ক তাপে, বিদ্যুৎ প্রবাহ, ঘর্ষনে রাসায়নিক পদার্থে বা বিকিরণে পুড়ে যাওয়াকে দাহ বলে। আদ্র তাপে যেমন-ফুটন্ত পানি। বা অন্য কোন গরম পদার্থের সংস্পর্শে এসে পুড়ে যাওয়াকে ঝলসানো বলে।পুড়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা
বাসা বাড়িতে বিভিন্ন কারনে আগুন দিয়ে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। সাধারনত গরম পানি, গরম জিনিস-পত্র (পাতিল, খুন্তি, কড়াই ইত্যাদি), রাসায়নিক পদার্থ (এসিড) বা কারেন্টের তার জ্বলে যাওয়া জায়গায় হাত লেগে ইত্যাদি কারনেই সাধারণত হাত-পা পুড়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে যা করতে হবে- – আগুনে বা গরম পানিতে পুড়ে গেলে দ্রুত আক্রান্ত স্থানটি পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানির নিচে ধরুন। – আক্রান্ত স্থানে সিল্কক্রিম লাগালে উপকার পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক ক্রিম লাগানো যেতে পারে। – পোড়ার পরিমাণ বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।করনীয়:
(ক) দাহ বা ঝলসানো রোগীর ক্ষত অংশে এমনভাবে ধুয়ে ফেলুন যাতে পতিত ঠান্ডা পানি ধীরে ধীরে ক্ষতের উপর দিয়ে গড়িয়ে যায়, এভাবে যতক্ষণ ক্ষস্থানের জ্বালা-যন্ত্রণা না কমে এবং ক্ষতস্থানে গরমভাব না কমে ততক্ষণ ঠান্ডা পানি দিতে হবে অথবা ক্ষত অংশকে পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। (খ) পরিস্কার জীবানুমুক্ত ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থান হালকা করে বেঁধে দিতে হবে। (গ) আহত ব্যক্তির যদি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে তবে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে প্রেরনের ব্যবস্থা সহ শ্বাস-প্রস্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।বর্জনীয়:
(ক) যে কোন লোশন, মালিশ বা তৈল ড্রেসিং ব্যবহার এ বিরত থাকুন। (খ) পোড়া অংশে হাত লাগানো যাবে না।ভাঙলে বা মচকালে প্রাথমিক চিকিৎসা
রিকশা থেকে বেকায়দা অবস্থায় পরে গিয়ে বা কোন উঁচু স্থান থেকে পরে গিয়ে বা খেলাধুলা করার সময় আমাদের হাত-পা মচকে যেতে পারে এমনকি ভেঙেও যেতে পারে।করনীয়:
এই অবস্থায় যা করবেন- – আঘাতের স্থান ও পরিমাণ নিরূপণ করুন। – হাতে বা পায়ে ফুলে গেলে সেখানে বরফ সেঁক দিন। – ডাইক্লোফেনাক জেল হালকা করে লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে। আক্রান্ত স্থান বিশ্রামে রাখুন। – ক্রেপ ব্যান্ডেজ দিয়ে মুড়িয়ে রাখুন। – তবে অতিরিক্ত ফুলে গেলে বা চামড়ার নিচে কালো হয়ে গেলে হাড়টি ভেঙেছে ধরে নেয়া যায়। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে এক্স-রে করে নিশ্চিত হোন ও যথাযথ চিকিৎসা নিন।বর্জনীয়:
কোথাও কেটে গেলে ওই ক্ষতের ওপর সরাসরি এ রকম ক্রিম লাগাবেন না। – আক্রান্ত স্থান ম্যাসাজ করবেন না।রক্তক্ষরণ (Hemorrhage) করনীয়
(ক) পরিস্কার কাপড় অথবা ব্যান্ডেজ দিয়ে চাপ দিয়ে ক্ষতস্থান চেপে ধরুন। (খ) যে অঙ্গ হতে রক্ত নির্গত হচ্ছে তা উচু করে রাখুন। (গ) আঠালো ব্যান্ডেজের সাহায্যে রক্তপাত বন্ধ করুন। (ঘ) প্রয়োজন বোধে টুনিকেট ব্যবহার করে রক্তপাত বন্ধ করুন। (ঙ) কখনও ক্ষতস্থান খোলা রাখা যাবে না।মাথায় আঘাত পেলে প্রাথমিক চিকিৎসা
আঘাত যদি মাথায় হয় তাহলে সতর্ক থাকা উচিত। মাথার আঘাত পাওয়া বলতে গেলে আমরা সাধারণত মাথার ভেতরে মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়াকে বুঝে থাকি।মাথায় আঘাত কতটা গুরুতর সেটা বুঝতে হলে রোগীকে ভালোভাবে নিরীক্ষণ করতে হবে। – মুখে কিছু খেতে দেয়া যাবে না। – আঘাতের পর বমি, অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব, প্রচণ্ড মাথাব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে। – রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব উন্নত এমন কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে যেখানে ব্রেইনের সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করার সুযোগ আছে।ধোঁয়ায় শ্বাস রোধের প্রাথমিক চিকিৎসা
ধোয়ায় আটকে গেলে প্রথমে আত্মরক্ষার প্রয়োজন, তারপর দুর্ঘটনাস্থল থেকে রোগীকে স্থানান্তর করতে হবে। ভেজা তোয়ালে, রুমাল বা কাপড়ের টুকরা দিয়ে নিজের মুখ ও নাক বেঁধে অথবা ফেসমাস্ক লাগিয়ে উদ্ধারের জন্য অগ্রসর হবে তারপর আহত রোগীকে আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।চোখের মধ্যে কোন কিছু ঢুকলে প্রাথমিক চিকিৎসা
(ক) যদি পানির ঝাপটা (কয়েক বার) দিয়ে বাইরের বস্তুটি না সরে যায় তাহলে ডাক্তারের নিকট নিয়ে আসবেন। (খ) কোনক্রমে রোগেীকে চোখ ডলতে দেওয়া যাবে না। (গ) যদি বাহিরের কোন কিছু প্রবেশ করে চোখের গােলকে একধারে আটকে থাকে তবে তা পাতলা ভেজা কাপড় বা রুমাল দিয়ে বের করতে হবে।কানে কিছু প্রবেশ করলে প্রাথমিক চিকিৎসা
অনেক সময় কানের ছিদ্র পথে ছোট কীট পতঙ্গ অথবা ময়লা প্রবেশ করে তবে কানের ছিদ্র পথে । অলিভয়েল বা নারিকেল তেল দিতে হবে। তবে তেল দেয়ার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হবে রোগীর কানের পর্দায় কোন ছিদ্র আছে কিনা। পরিবারের সচেতনতা– পরিবারের সব সদস্যের কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্য পরিকল্পনা করা উচিত। ছোটখাটো দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সতর্কতার পাশাপাশি ফার্স্ট এইড কিট বা প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নম্বর, জরুরি অ্যাম্বুলেন্স নম্বর, পারিবারিক চিকিৎসকের ফোন ও সেলফোন নম্বর রাখা দরকার। এছাড়াও পরিবারের মাসিক বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে কিছু টাকা বরাদ্দ থাকা উচিত। এগুলি বিপদকালে অনেক কাজে লাগে।শিল্প কল কারখানার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যাবস্থা-FIRST AID
অল্প রক্তরণ (ছোট খাটা) প্রাথমিক চিকিৎসা
১। ডাক্তারের স্বরনাপন্ন হউন। ২। রোগীকে শান্ত করুন এবং শুইয়ে অথবা বসিয়ে রাখুন। ৩। রক্তরণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত্ৰ ফার্স্ট এইড কিট থেকে পরিস্কার। কাপড় দিয়ে রক্তরণ স্থান শক্তভাবে বেঁধে রাখুন। ৪। ফার্স্ট এইড কিট এর অয়েন্টমেন্ট বা মলম দ্বারা তস্থান পরিস্কার করম্নন এবং ভালভাবে ব্যান্ডেজ করুন।বেশি রক্তক্ষরণ প্রাথমিক চিকিৎসা
১। ডাক্তার ডাকুন। ২। রোগীকে শান্ত করুন এবং শুইয়ে অথবা বসিয়ে রাখুন। ৩। ফস্ট এইড কিট এর পরিস্কার কাপড় দ্বারা রক্তরণস্থান ভালভাবে বেঁধে রাখুন, যতন রক্তরণ বন্ধ না হয়। ৪। রক্তরণ স্থান উপরের দিকে রাখুন যতন রক্তরণ না কমে।আগুনে পোড়া প্রাথমিক চিকিৎসা
১। ঠান্ডা পানি দিয়ে শীতল করুন। ২। পরিস্কার কাপড় দ্বারা স্থান আবৃত করুন। ৩। রোগীকে শুইয়ে অথবা বসিয়ে রাখুন। ৪। ক্ষতস্থানে লোশন বা অয়েন্টমেন্ট দিবেন না । ৫। ডাক্তার ডাকুন।চোখ
১। কেমিক্যাল অথবা পদার্থ অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত্র চোখে| পানির ঝাপটা দিন। ২। ডাক্তার ডাকুন।হাড় ভাঙ্গা প্রাথমিক চিকিৎসা
১। ততক্ষনাৎ ডাক্তার ডাকুন। ২। রোগীকে শুইয়ে স্থিরভাবে রাখুন। ৩। রোগীকে নড়াচড়া করতে দিবেন না। ৪। ভাঙ্গা হাড়ের স্থান ধরবেন না।মাথায় আঘাত পাওয়া প্রাথমিক চিকিৎসা
১। তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকুন। ২। রোগী যদি ঘুম বা অজ্ঞান থাকে এবং বমি করতে শুরু করে তখন তাকে যথাস্থানে রাখুন। ৩ রোগীকে নাড়াচাড়া করবেন না। ৪। যদি রোগী জাগ্রত থাকে তাকে শান্ত করুন। রোগীকে নড়াচড়া করতে এবং পানি বা কোন খাবার খেতে দিবেন না ।হার্ট স্ট্রোক প্রাথমিক চিকিৎসা
১। রোগীকে ছায়ার নীচে রাখুন। ২। তাকে বাতাস করুন। ৩। তাকে স্যালাইন পানি পান করান।তড়িতাহত প্রাথমিক চিকিৎসা
১। বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করুন (সহযোগীতার জন্য- বিদ্যুত অফিসে ফোন করুন)। ২। শ্বাসপ্রশ্বাস ও স্পন্দন পরীক্ষা করুন। ৩। ডাক্তার ডাকুন। এই তালিকায় যদি অতিরিক্ত সাহয্যের প্রইয়োজন পড়ে তাহলে ফার্স্ট এইড বক্সের ফার্স্ট এইড গাইড দেখুন।প্রাথমিক চিকিৎসার কিছু পদ্ধতি
(ক) ক্ষিপ্র গতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে আগের কাজ আগে এবং পরের কাজ পরে এ নীতিতে কাজ করতে হবে। (খ) শ্বাস-প্রশাসের বিঘ্ন দেখা দিলে কৃত্রিম উপায়ে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। (গ) রক্তক্ষরণ হলে দ্রুত রক্ত ক্ষরণ বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে। (ঘ) স্নায়ুবিক আঘাতের চিকিৎসা সঙ্গে সঙ্গে করতে হবে। (ঙ) রোগী বা আহত ব্যক্তিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের নিকট নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।(চ) নিয়মিত পড়াশুনা ও মহড়া দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত থাকতে হবে।এসব প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কিছু নিজের কাছে রাখতে পারেন ফাস্ট এইড বক্স (প্রাথমিক চিকিস্যা বক্স)।
ফাস্ট এইড বক্স কি?
প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত উপকরণাদি যে নির্দিষ্ট বাক্সে থাকে, তাকে ফার্স্ট এইড বক্স বলে। ফার্স্ট এইড বক্স একটি অতি দরকারি জিনিস। প্রয়োজনের সময় দৌড়াদৌড়ি না করে হাতের নাগালে ফার্স্ট এইড বক্স বা ফার্স্ট এইড বক্স থাকলে খুব সহজেই রোগীকে কিছুটা সামলানো যায়। এতে রোগীসহ আশপাশের লোকজনের অস্থিরতাও অনেকটা কমে। তাই একটা ফার্স্ট এইড বক্স –ফার্স্ট এইড বক্স থাকা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে সবার মোটামুটি জ্ঞান থাকা দরকার। ফার্স্ট এইড বক্স বহনযোগ্য। তাই এইটা আপনি যে কন যায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন।ফাস্ট এইড বক্সে কোন কোন যায়গায় থাকা অত্যান্ত জরুরী
ফার্স্ট এইড বক্স -স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, কলকারখানা, এমনকি বাসা-বাড়িতে বা গাড়িতেও রাখা যায়। বাসায় ও গাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য খুব অল্প সময়ের মধ্যে ফার্স্ট এইড বক্স থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসটি তুলে নেওয়া যায়।ফাস্ট এইড বক্সে থাকা জরুরী উপকরন সমূহের লিস্ট
ফার্স্ট এইড বক্সে যা থাকবে *অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ (যেমন স্যাভলন, ডেটল, পোভিডন আয়োডিন দ্রবণ)। *অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম। *তুলা, গজ, কাঁচি। *ব্যান্ডেজ (ছোট ব্যান্ডেজের স্ট্রিপ কিনতে পাওয়া যায়)। *মাইক্রোপোর (সাদা রঙের পাতলা একটি জিনিস, যা স্কচটেপের মতো আটকানো যায়)। *দুটি তিন কোণা বড় কাপড়। *মাঝারি আকারের কাপড়। *বেশ কয়েক প্যাকেট খাওয়ার স্যালাইন। *প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। *পোড়া জায়গায় ÿলাগানোর মলম (যেমন সিলভার সালফাডায়াজিন ১% ক্রিম, যা শুধু বাহ্যিক ব্যবহার্য)। *থার্মোমিটার। আরও যা কাজে লাগে: *পানি *বরফ *মাঝারি আকারের শক্ত কাঠ *চিনি বা গ্লুকোজ।ফার্স্ট এইড বক্স উপকরন সমূহের প্রয়োগ বা ব্যবহার
১. জীবাণুমুক্ত গজ পিস : ক্ষত থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে ও জীবাণু সংক্রমণ কমায়। ক্ষতস্থানকে নিরাপদ রাখে, তা ময়লা হতে দেয় না এবং ক্ষত থেকে নিঃসৃত তরল পদার্থ শুষে নেয়। ২. রোলার ব্যান্ডেজ : ড্রেসিংকে তার জায়গায় ভালোভাবে আটকে রাখার জন্য বা অতিরিক্ত রক্তপাত হলে। ৩. লিউকোপ্লাস্ট : ব্যান্ডেজ ক্ষতের ওপর আটকানোর জন্য দরকার। ৪. অ্যান্টিসেপটিক লোশন বা ক্রিম : ক্ষত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে দরকার হয়। যেমন_ স্যাভলন, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, পভিসেভ ইত্যাদি। ৫. ট্যুইজারস : শরীর থেকে কাঁটা, কোনো ক্ষুদ্র বস্তু, পোকামাকড়ের শূল ইত্যাদি সরাতে বেশ ফলদায়ক। ধাতু বা প্লাস্টিকের তৈরি ও বিভিন্ন রকমের হতে পারে। ৬. ক্রেপ ব্যান্ডেজ : হাড় ফেটে গেলে বা কোথাও মচকে গেলে ক্রেপ ব্যান্ডেজ ব্যবহারে ব্যথা কমে, ফোলাও ক্রমে হ্রাস পায়। ৭. সেফটি পিন : কাটা বা ক্ষত থেকে কোনো স্পিলিন্টার সরাতে, ব্যান্ডেজ আটকাতে জায়গামতো ধরে রাখার জন্য সেফটি পিন একটি কাজের জিনিস। এটা হালকা, শক্ত ও নিরাপদ। ৮. অ্যান্টিহিস্টামিন : যেমন হিস্টাসিন, ফেক্সোফেনাডিন ইত্যাদি। এগুলো সর্দি, কাশি, চুলকানি ও পোকার কামড়ের চিকিৎসায় সহায়ক। ৯. ব্যথার ওষুধ : যেমন প্যারাসিটামল, আইবপ্রুফেন ইত্যাদি। ১০. বার্ন ক্রিম : পোড়া জায়গায় ব্যথা কমাতে ও ঘা শুকাতে ব্যবহৃত হয়। যেমন_ বার্নল বা সিলভারজিন ক্রিম। অ্যালোভেরা জেল পোড়া, চুলকানি ও চামড়ায় যাশ হলে বেশ কার্যকর। ক্যালেন্ডুলা ও আরটিকা ইউরেন্স বার্ন ক্রিম দ্রুত ব্যথা কমায়। ১১. থার্মোমিটার।ওপরের আইটেমগুলো যদি ফার্স্ট এইড বক্সে হাতের কাছে থাকে, তবে প্রাথমিক চিকিৎসা সহজ হয়ে যায়। সঙ্গে কিছু টাকা ও জরুরি কন্টাক্ট নাম্বার থাকলে তো কোনো কথাই নেই। সঙ্গে অভিজ্ঞ কেউ থাকলে ‘ফার্স্ট এইড বক্স’ প্রয়োজনে বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিতে পারে।এ ছাড়া স্টেথোস্কোপ ও রক্তচাপ মাপার যন্ত্র রাখা যেতে পারে।