বাংলাদেশের বিচার বিভাগের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী

বাংলাদেশের বিচার বিভাগের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী

বাংলাদেশের বিচার বিভাগের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী: বাংলাদেশ সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে বিচার বিভাগ অন্যতম। নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, অপরাধীর শাস্তিবিধান এবং দুর্বলকে সবলের হাত থেকে রক্ষার জন্য নিরপেক্ষ বিচার বিভাগের গুরুত্ব অপরিসীম। বিচার বিভাগ আইনের অনুশাসন ও দেশের সংবিধানকে অক্ষুন্ন রাখে । 

বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সুপ্রিম কোর্ট, অধস্তন আদালত এবং প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল নিয়ে গঠিত। 

বিচার বিভাগের গঠন 

বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ আদালতের নাম সুপ্রিম কোর্ট। এর রয়েছে দুটি বিভাগ, যথা : আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ । সুপ্রিম কোর্টের একজন প্রধান বিচারপতি রয়েছেন, যাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি বলা হয়। রাষ্ট্রপতি তাকে নিযুক্ত করেন। প্রত্যেক বিভাগের জন্য যতজন বিচারক প্রয়ােজন ততজন বিচারককে নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত। 

বাংলাদেশের বিচার বিভাগের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী

প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ােগ দেন। প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিগণ বিচার পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হতে হলে তাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। 

সুপ্রিম কোর্টে কমপক্ষে ১০ বছর এডভােকেট হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথবা বাংলাদেশে বিচার বিভাগীয় পদে ১০ বছর বিচারক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণ ৬৭ বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে কর্মরত থাকতে পারেন।

সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগহাইকোর্ট বিভাগের পৃথক কার্যের এখতিয়ার আছে। এ দুটি কোর্টের ক্ষমতা ও কাজ নিয়েই সুপ্রিম কোর্ট । নিচে এ সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে।

বাংলাদেশের বিচার বিভাগের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী

আপিল বিভাগের ক্ষমতা ও কাজ 

• আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়, ডিক্রি বা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ করে শুনানির ব্যবস্থা করতে পারে। 

রাষ্ট্রপতি আইনের কোনাে ব্যাখ্যা চাইলে আপিল বিভাগ এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়ে থাকে । 

ন্যায়বিচারের স্বার্থে কোনাে ব্যক্তিকে আদালতের সামনে হাজির হতে ও দলিলপত্র পেশ করার আদেশ জারি করতে পারে। 

• আপিল বিভাগ কর্তৃক ঘােষিত আইন হাইকোর্ট বিভাগের জন্য অবশ্যই পালনীয় । 

এভাবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আইনের ব্যাখ্যা, ন্যায়বিচার সংরক্ষণ ও পরামর্শ দান করার ক্ষেত্রে ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা ও কাজ 

• নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে ।

কোনাে ব্যক্তিকে মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কোনাে কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারে অথবা এ ধরনের কোনাে কাজ করাকে বেআইনি ঘােষণা করতে পারে । 

অধস্তন কোনাে আদালতের মামলায় সংবিধানের ব্যাখ্যাজনিত জটিলতা দেখা দিলে উক্ত মামলা

হাইকোর্টে স্থানান্তর করে মীমাংসা করতে পারে। 

বাংলাদেশের বিচার বিভাগের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী

• অধস্তন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ করে। 

• সকল অধস্তন আদালতের কার্যবিধি প্রণয়ন ও পরিচালনা করে।

আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ মিলে সুপ্রিম কোর্ট সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে দেশের সংবিধান ও নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে ।

অধস্তন আদালত : 

সুপ্রিম কোর্টের অধীনে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় বিচার বিভাগের অধস্তন আদালত আছে। অধস্তন আদালতগুলাে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা পরিচালনা করে । 

বাংলাদেশের বিচার বিভাগের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী

জেলা জজের আদালত : 

জেলা আদালতের প্রধান জেলা জজ। তার কাজে সহায়তার জন্য আছেন অতিরিক্ত জেলা জজ ও সাব-জজ। এই আদালত জেলা পর্যায়ে দেওয়ানি (জমিজমাসংক্রান্ত, ঋণচুক্তি ইত্যাদি) ও ফৌজদারি (সংঘাত, সংঘর্ষ সংক্রান্ত মামলা পরিচালনা করে। সাব জজ আদালত ও সহকারী 

জজ আদালত : 

জেলা জজের আদালতের অধীনে প্রত্যেক জেলায় সাব জজ ও সহকারী জজ আদালত আছে। এগুলাে জেলা জজ আদালতকে মামলা পরিচালনায় সহায়তা করে। এছাড়া বিভিন্ন মামলাও পরিচালনা করে থাকে। 

গ্রাম আদালত : 

বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার সর্বনিম্ন আদালত হলাে গ্রাম আদালত । এটি ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিত। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিবাদমান দুই গ্রুপের দুজন করে মােট পাঁচজন সদস্য নিয়ে গ্রাম আদালত গঠিত। যেসব মামলা স্থানীয় পর্যায়ে বিচার করা সম্ভব, মূলত সেগুলাের বিচার এখানে করা হয়। ছােটখাটো ফৌজদারি মামলার বিচার এ আদালতে করা হয়ে থাকে।বাংলাদেশের বিচার বিভাগের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী।

আরও পৌরনীতি সম্পর্কে জানুন নিচের থেকে

বাংলাদেশের সংবিধান কি ও সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারব্যবস্থা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি

রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থা কাকে বলে

রাষ্ট্রের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য এবং রাষ্ট্রের উৎপত্তি

সন্ত্রাস কি এবং প্রতিরােধ ও প্রতিকারের উপায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *