বেগুন চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা: বেগুন অতি পরিচিত একটি সবজি। যা সারা বছর পাওয়া যায়। এদেশ ছাড়াও ভারত, চীন, জাপান, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ ইউরােপীয় দেশসহ প্রভৃতি দেশে এর চাষ হয়ে থাকে।
বেগুনের জাত
ইসলামপুরী, শিংনাথ, উত্তরা, নয়নকাজল, মুক্তকেশী, খটখটিয়া, তারাপুরী, নয়নতারা উল্লেখযােগ্য। বারমাসী কালাে ও সাদা বর্ণের জাত (ডিম বেগুন) রয়েছে। বিদেশি জাতের মধ্যে ব্ল্যাক বিউটি, ফ্লোরিডা বিউটি, উল্লেখযােগ্য।
বেগুন চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা
বীজ বপন ও চারা উৎপাদন
বেগুন চাষের জন্য চারা উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শীতকালীন বেগুন চাষের জন্য শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি হতে আশ্বিন মাস এবং বর্ষাকালীন বেগুন চাষের জন্য চৈত্র মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা যায় । বালি, কমপােস্ট ও মাটি সমপরিমাণে মিশিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়। বীজ গজানাের ৮-১০ দিন পর চারা তুলে দ্বিতীয় বীজতলায় রােপণ করতে হয় ।
জমি নির্বাচন
দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি বেগুন চাষের জন্য সবচেয়ে ভালাে। তবে পানি অপসারণের ভালাে ব্যবস্থা থাকলে এঁটেল ও দোআঁশ মাটিতেও বেগুনের চাষ করা যায়।
জমি তৈরি জমি
তৈরির জন্য ৪-৫ বার আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে তৈরি করতে হবে। ভালাে ফসল পেতে হলে জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে।
সার প্রয়ােগের নিয়মাবলি
ক) ইউরিয়া ছাড়া সব সার জমির শেষ চাষের সময় প্রয়ােগ গােবর। তবে গােবর জমি তৈরির প্রথম দিকে প্রয়ােগ করাই উত্তম।
খ) ইউরিয়া সার চারা গজানাের ৮-১০ দিন পর থেকে এমওপি। ৫০০ গ্রাম
১০-১২ দিন পর পর ২-৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়ােগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
চারা রােপণ
এক মাস বয়সের সবল চারা কাঠির সাহায্যে তুলে নিতে হবে। চারা গাছের শিকড়ের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এর পর ৭৫ সেমি দূরত্বের সারিতে ৬০ সেমি দূরে দূরে চারা রােপণ করতে হবে।
বেগুন চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা
বেগুন পরিচর্যা
মাটিতে রসের অভাব হলে বা মাটি শুকিয়ে গেলে ১০-১৫ দিন পর পানি সেচ দিতে হবে। সেচের পর নিড়ানি দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে। আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
বেগুনের বালাই ব্যবস্থাপনা
এ দেশে কমপক্ষে ১৬ প্রজাতির পােকা এবং একটি প্রজাতির মাকড় বেগুন ফসলের ক্ষতি করে থাকে। এর মধ্যে বেগুনের প্রধান শত্রু ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পােকা। এই পােকা বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্র করে। আক্রান্ত ডগা ও ফল সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। এছাড়াও ম্যালাথিয়ন বা সুমিথিয়ন নামক কীটনাশকের যে কোনাে একটি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। এছাড়া নিম্নলিখিত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুনের বালাই দমন করা যায়
ক) কলম চারা ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুনের উইল্টরােগ দমন করা যায় ।
খ) ফেরােমন ও মিষ্টিকুমড়ার ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুন জাতীয় ফসলের মাছি পােকা দমন করা যায়।
গ) মুরগির পচনকৃত বিষ্ঠা ও সরিষার খৈল ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন সবজি যেমন- বেগুন, টমেটো, শশা,বাঁধাকপি ফসলের মাটি বাহিত রােগ দমন করা যায়।
ঘ) সঠিক সময়ে আগাছা দমন ও মালচিং করলে ফলন বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
ঙ) পােকা প্রতিরােধী জাত ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুনের ডগা ও ফলের মাজরা পােকা দমন করা যায় । যেমন- বারি বেগুন-১ (উত্তরা), বারিবেগুন-৫ (নয়নতারা), বারিবেগুন-৬, বারিবেগুন-৭ ইত্যাদি পােকা প্রতিরােধী জাত।
চ) পােকার আক্রমণমুক্ত চারা ব্যবহার করতে হবে।
ছ) সুষম সার ব্যবহার করে।
জ) শস্য পর্যায় অনুসরণ করে ।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন
চারা রােপণের ৩০-৪০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে । বেগুনের ফল বীজ শক্ত হওয়ার আগেই সংগ্রহ করতে হয়। সাধারণত প্রতি শতকে বা ৪০ বর্গমিটার জমিতে ১৪০ কেজি বেগুন উৎপন্নহয়। উত্তরা বেগুন ২৫০ কেজি পর্যন্ত ফলন দেয়।
বিপণন
বেগুন ফসল সংগ্রহের পর ঠাণ্ডা ও খােলা জায়গায় কয়েক দিন সংরক্ষণ করা যায়। তবে বস্তায় বেশিক্ষণ রাখা ঠিক হবে না। এতে বেগুন তার স্বাভাবিক রং হারাতে পারে এবং পচে যেতে পারে।
এই ধরনের আরও পোষ্ট পেতে আমাদের poramorso24.com নিয়মিত ভিজিট করুন । ধর্যসহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।বেগুন চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা
আরও পড়ুন