কয়েল ছাড়াই মশা তাড়ানোর সহজ উপায়

কয়েল ছাড়াই মশা তাড়ানোর সহজ উপায়

মশা তাড়ানোর সহজ উপায়: বর্তমান সময়ে শুধু শহরে নয় গ্রামের মধ্যেও মশার উপদ্রব অধিকহারে বেড়েছে। ছোট্ট এই কীট অসংখ্য রোগ জীবাণুর বাহক এবং এর দ্বারা সংক্ৰমিত অসুখগুলোতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য রোগী।

Table of Contents

মশা তাড়ানোর সহজ উপায়

কখনও কখনও এই অসুখগুলো পরিণত হয় জীবনঘাতক ব্যাধিতে, হারিয়ে যায় নিষ্পাপ প্রাণ। সরকারি কিংবা বেসরকারি নানা পদক্ষেপ নিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা শহরের মশার উপদ্রব। কিন্তু আমরা প্রত্যেকেই যদি নিজের জায়গা থেকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করি তাহলে এই উপদ্রবকে অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এই মশা অনেক সময় মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া, পীত জ্বর, জিকা ভাইরাস প্রভৃতি মারাত্মক রোগ সংক্রমিত হয়ে থাকে। স্প্রে, কয়েল, অ্যারোসল কোন কিছুতেই মশা তাড়ানো সহজ নয়। আবার এসব দিয়ে মশা তাড়ালেও আমাদের স্বাস্থ্য এতে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে মশা তাড়ানোর ব্যবস্থা করা জরুরী। আগেকার যুগে মশার কয়েল, স্প্রে তো কিছুই ছিল না। তখনকার মানুষ কিভাবে মশার হাত থেকে রক্ষা পেতেন? একনজরে জেনে নিন মশা তাড়ানোর সহজ ও কার্যকরি কিছু উপায়-

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : ব্যবহৃত কফি গুঁড়া ব্যবহার করুন

ব্যবহারের পর উচ্ছিষ্ঠ কফির গুঁড়া ব্যবহারের মাধ্যমে বাড়ি থেকে মশার উপদ্রব দূর করা যায়। বাড়িতে কোনো জায়গায় পানি জমে থাকলে বা জমে থাকতে পারে এমন জায়গাগুলোতে কফির গুঁড়া ছিটিয়ে দিলে সেখানে থাকার মশার ডিমগুলো অক্সিজেন এর অভাবে নষ্ঠ হয়ে যাবে। ফলে মশার বংশবিস্তার রোধ হবে।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : লেবু ও লবঙ্গের ব্যবহার

লেবু খণ্ড করে কেটে ভেতরের অংশে অনেকগুলো লবঙ্গ গেঁথে দিন। লেবুর মধ্যে লবঙ্গের পুরোটা ঢুকাবেন শুধুমাত্র লবঙ্গের মাথার দিকের অংশ বাইরে থাকবে। এরপর লেবুর টুকরাগুলো একটি প্লেটে করে ঘরের কোণায় রেখে দিন। ব্যস, এতে বেশ কয়েকদিন মশার উপদ্রব থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। এই পদ্ধতিতে ঘরের মশা একেবারেই দূর হয়ে যাবে। আপনি চাইলে লেবুতে লবঙ্গ গেঁথে জানালার গ্রিলেও রাখতে পারেন। এতে করে মশা ঘরেই ঢুকবে না।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : নিমের তেলের ব্যবহার

নিমের মশা তাড়ানোর বিশেষ একটি গুণ রয়েছে। নিমের তেল ত্বকের জন্যও বেশ ভালো। তাই একসাথে দুটি উপকার পেতে ব্যবহার করতে পারেন নিমের তেল। সমপরিমাণ নিমের তেল ও নারকেল তেল মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে নিন। দেখবেন মশা আপনার ধারে কাছে ভিড়বে না এবং সেই সাথে ত্বকের অ্যালার্জি, ইনফেকশন জনিত নানা সমস্যাও দূর হবে।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : পুদিনার ব্যবহার

ছোট গ্লাসে একটু পানি নিয়ে তাতে ৫ থেকে ৬ গাছি পুদিনা রেখে দিন খাবার টেবিলে। ৩ দিন অন্তর পানি বদলে দেবেন। জার্নাল অফ বায়োরিসোর্স টেকনোলোজির গবেষণা মতে তুলসির মতো পুদিনা পাতারও রয়েছে মশা দূরে রাখার ক্ষমতা। শুধু মশাই নয় পুদিনার গন্ধ অনেক ধরণের পোকামাকড়কে ঘর থেকে দূরে রাখে। পুদিনা পাতা ছেঁচে নিয়ে পানিতে ফুটিয়ে নিন। এই পানির ভাপ পুরো ঘরে ছড়িয়ে দিন। দেখবেন ঘরের সব মশা পালিয়েছে। চাইলে পুদিনার তেলও গায়ে মাখতে পারেন।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : টবে লেমন গ্রাস লাগান

থাই লেমন গ্রাসে আছে ‘সাইট্রোনেলা অয়েল’ যা থেকে বের হয় একধরনের শক্তিশালী সুগন্ধ। এই সুগন্ধ কিন্তু মশাদের যম। মশারা এর কাছেও ঘেঁষে না। ফলে আপনার আশেপাশে লেমন গ্রাসের ঝাঁড় থাকলে মশারা আপনাকে খুঁজে পাবে না। আর লেমন গ্রাস দেখতেও কিন্তু মন্দ নয়। এমনসব স্থানে এসব গাছের টব রাখুন যেখানে সকাল বিকাল কিংবা রাতে পরিবারের অন্যদের নিয়ে কিংবা বন্ধু বান্ধব নিয়ে আড্ডা বা সময় কাটান। এভাবে থাকুন মশা মুক্ত।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : ধুনোর সঙ্গে নিশিন্দা ও নিমপাতার গুঁড়ো 

প্রতিদিন নিশিন্দা ও নিমপাতার গুঁড়ো ধুনোর সঙ্গে ব্যবহার করলে মশার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : হলুদ বৈদ্যুতিক আলো

ঘরের মধ্যে মশার উৎপাত কমাতে চাইলে, ঘরের বৈদ্যুতিক আলোটি হলুদ সেলোফেনে জড়িয়ে দিন। ফলে হলুদ আলো হবে। দেখবেন মশা কমে গেছে, কারণ মশা হলুদ আলো থেকে দূরে থাকতে চায়। এছাড়া ঘরে এবং ঘরের বাইরে লাইট বাল্বগুলো পরিবর্তন করুন। মশারা সাধারণত সব লাইটের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। এলইডি লাইট, হলুদ ‘বাগ লাইট’, বা সোডিয়াম লাইট এক্ষেত্রে উপকারী। এগুলো জ্বালালে সন্ধ্যাবেলা ঘরে বাইরে মশাদের আক্রমন অনেকটাই কমে যাবে।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : বারান্দায় চামচিকার বাক্স রাখুন

ভয় পাওয়ার কিছু নেই। চামচিকারারা এক ঘন্টায় কয়েকশত পোকা-মাকড় খায়। তাই মশা তাড়াতে ব্যাট হাউস বানাতে পারেন। বারান্দায় কিংবা ভেন্টিলেটরের কাছে রাখুন আর চামচিকাদের কাজ করতে দিন।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : ফ্যান চালু রাখুন

মশারা খুবই হালকা। অন্যদিকে একটি ফ্যানের স্পীড ঘন্টায় প্রায় দুই মাইল। মশাদের উড়বার গতিবেগের চাইতে ফ্যানের ঘুরবার গতি অনেক বেশি হওয়াতে সহজেই মশাদের ব্লেডের কাছে টেনে নেয়। আপনার বসার স্থান কিংবা ডেক বা যেসব স্থান থেকে মশারা খুব সহজে আপনার গৃহে প্রবেশ করতে পারে, এমনসব স্থানে মশাদের আগমন সময়ে আপনার টেবিল ফ্যান বা পেডাল ফ্যানটি চালু রাখুন। মশাদের হাত থেকেও যেমন নিস্কৃতি পাবেন তেমনি গরমেও পাবেন আরাম। ১২. কালো, নীল ও লাল কাপড় এড়িয়ে চলুন মশাদের পছন্দের রঙের পোষাক এড়িয়ে চলুন। কি অবাক হচ্ছেন! হ্যাঁ কিছু কিছু প্রজাতির মশারা কয়েকটি গাঢ় রঙের প্রতি আকৃষ্ট হয় যেমন কালো, নীল আর লাল। আর তারা গরমের প্রতিও সংবেদনশীল। তাই ঠান্ডা রাখুন ঘর আর পোষাক পড়ুন হালকা রঙের।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : সুগন্ধি ব্যবহার করুন

মশারা সুগন্ধি থেকে দূরে থাকে। সুতরাং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শরীরে আতর, সুগন্ধি, কিংবা লোসন মেখে শুতে পারেন। নিশ্চিত করে বলা যায় এতে মশা সাধারণ থেকে অনেক কম দেখা যাবে

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : নারিকেলের আঁশ পোড়ান

নারিকেলের গায়ে থাকা আঁশের সাহায্য দূর করতে পারেন মশা। নারিকেলের আঁশ শুকিয়ে টুকরা করুন। একটি কাঠের পাত্রে রেখে জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠি ধরুন। ৫-৬ মিনিটের মধ্যেই মশা দূর হবে।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : কেরোসিন তেল স্প্রে

কেরোসিন তেল স্প্রে বোতলে নিন। কয়েক টুকরা কর্পূর মেশান। ভালো করে ঝাঁকিয়ে স্প্রে করুন রুমে। মশা থাকবে না।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : কর্পূর ব্যবহার করুন

ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে কর্পূর জ্বালিয়ে দিন। আধা ঘন্টা এই অবস্থায় রেখে দিয়ে এরপর ঘরে প্রবেশ করুন, দেখবেন মশার নামগন্ধ নেই। তাছাড়াও মশা কর্পূরের গন্ধ একেবারেই সহ্য করতে পারে না। আপনি যে কোন ফার্মেসিতে গিয়ে কর্পূরের ট্যাবলেট কিনে নিতে পারেন। একটি ৫০ গ্রামের কর্পূরের ট্যাবলেট একটি ছোট বাটিতে রেখে বাটিটি পানি দিয়ে পূর্ণ করুন। এরপর এটি ঘরের কোণে রেখে দিন। তাৎক্ষণিকভাবেই মশা গায়েব হয়ে যাবে। দুই দিন পর পানি পরিবর্তন করে নিন। আগের পানিটুকু ফেলে দিবেন না। এই পানি ঘর মোছার কাজে ব্যবহার করলে ঘরে পিঁপড়ের যন্ত্রণা থেকেও মুক্তি পাবেন।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : ল্যাভেণ্ডার তেল ব্যবহার করুন

মশা কখনই ল্যাভেন্ডার তেলের তীব্র গন্ধ সহ্য করতে পারেনা। তাই ঘরে মশার উপদ্রব থেকে রেহাই পেতে ঘরে ল্যাভেন্ডার তেল স্প্রে করে ফেলুন। এছাড়াও নিজের শরীরে আলতোভাবে এই তেল মাখিয়ে নিতে পারেন, ফলাফলে বেঁচে যাবেন মশার কামড় থেকে।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : তুলসী পাতা ব্যবহার করুন

তুলসীর গন্ধ মশাকে দূরে রাখে। তুলসীর মিশ্রণ বানিয়ে যেকোনো স্থানে স্প্রে করুন, ওই জায়গা থেকে মশা দূর হয়ে যাবে এবং নতুন করে মশার বংশবৃদ্ধিকেও ব্যাহত করবে।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : রোজমেরি পুড়িয়ে ব্যবহার করুন

ছোট্ট এক আঁটি রোজমেরির পাতা নিয়ে তা ঘরের অথবা বারান্দায় এক কোনায় রেখে পুড়িয়ে দিন। এর গন্ধ দূরে রাখবে মশা কে, ফলে মশার কামড় থেকে রক্ষা পাবে আপনার পরিবার এবং আপনি।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : চা গাছের তেল ব্যবহার করুন

ব্যবহৃত চা-পাতা ফেলে না দিয়ে ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিন। এইভাবে ওই চা পাতা ধুনোর বদলে ব্যবহার করুন। শুকনো চা পাতা পোড়ানো ধোঁয়ায় ঘরের সমস্ত মশা, মাছি পালিয়ে যাবে। আপনি যদি সিলেটের বাসিন্দা হন অথবা সিলেটে আছে এমন কারো সাথে পরিচিত থাকেন তাহলে তার মাধ্যমে চা গাছের তেল আনিয়ে রাখুন। এই তেল একটু পানির সাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ বানিয়ে নিন। এই মিশ্রণকে শরীরে লাগিয়ে রাখলেই দূরে থাকবে মশা আর শান্তিতে থাকবেন আপনি।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : রসুন ব্যবহার করুন

রসুনের গন্ধ মশার কাছে ভয়ানক অপ্রিয়। কয়েকটি রসুন বেটে পানির সাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরী করুন। এরপর এই মিশ্রণকে কয়েক মিনিট ধরে ফুটিয়ে নিন। অতঃপর এই তরল মিশ্রণটিকে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় স্প্রে করুন, দূর হয়ে যাবে মশা।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : এলকোহল ব্যবহার করুন

বাড়িতে এলকোহল কিংবা বিয়ার থাকলে একটি গ্লাসে কিছুটা ঢেলে খোলা অবস্থায় ঘরে রেখে দিন। মশার কাছে এলকোহল এর গন্ধ অপ্রিয়, তাই ঘরে এই বস্তু রেখে প্রতিরোধ করতে পারবেন মশার উপদ্রব।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : সয়াবিন তেলের মোম জ্বালান

সয়াবিন তেলও মশা প্রতিরোধের একটি দারুন ওষুধ। একটি ইনজেকশনের মাধ্যমে সয়াবিন তেল একটি মোমে ঢুকিয়ে নিন। যতক্ষণ জ্বলতে থাকবে এই মোম, ঘরে থাকবেনা কোনো মশা।

মশা তাড়ানোর সহজ উপায় : পানি জমতে দেবেন না

সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী কৌশল। বাড়ির আনাচে কানাচে খুঁজে দেখুন পানি জমে আছে কিনা অথবা পানি জমতে পারে এমন কোনো জায়গা আছে কিনা। খুঁজে পেলে ফেলে দিন সেখানে জমে থাকা পানি, ফলে রোধ করা যাবে মশার বংশবিস্তার, শান্তিতে থাকবেন আপনি এবং আপনার পরিবার। উপরের কৌশলগুলো অনুসরণ করতে পারলেই মশা এবং মশার বংশবিস্তার অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *