মাছের সম্পূরক খাদ্যের পরিচিতি ও প্রয়ােজনীয়তা

মাছের সম্পূরক খাদ্যের পরিচিতি ও প্রয়ােজনীয়তা

মাছের সম্পূরক খাদ্যের পরিচিতি ও প্রয়ােজনীয়তা: দেহের বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকার জন্য মাছ পুকুরের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ফাইটোপ্লাংকটন (উদ্ভিদকণা), জু-প্লাংকটন (প্রাণীকণা) খুদিপানা, ছােট জলজ পতঙ্গ, পুকুরের তলদেশের কীট, লাভা, কেঁচো, ছােট ছােট শামুক, ঝিনুক, মৃত জৈব পদার্থ ইত্যাদি খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। কিন্তু মাছ চাষের ক্ষেত্রে অধিক উৎপাদন পাওয়ার জন্য পুকুরে অধিক ঘনত্বে পােনা ছাড়া হয়। 

এ অবস্থায় শুধু প্রাকৃতিক খাদ্য মাছের দ্রুত বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক উৎপাদন পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। এমনকি সার প্রয়ােগ করে প্রাকৃতিক খাদ্য বৃদ্ধি করলেও তা যথেষ্ট হয় না। এজন্য প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি মাছকে বাহির থেকে অতিরিক্ত খাদ্য দিতে হয়। একে সম্পূরক খাদ্য বলে। যেমন-চালের কুঁড়া, সরিষার খৈল, ফিশ মিল ইত্যাদি। মাছের সম্পূরক খাদ্যের পরিচিতি ও প্রয়ােজনীয়তা।

মাছের সম্পূরক খাদ্যের পরিচিতি ও প্রয়ােজনীয়তা

গ্রাসকার্প ও সরপুঁটি মাছ উদ্ভিদভােজী বলে এদের জন্য খুদিপানা, কুটি পানা, শাকসবজির নরম পাতা, ঘাস কেটে সম্পূরক খাবার হিসাবে পুকুরে দেওয়া যায়। মাছকে সরবরাহকৃত সম্পূরক খাদ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন-আমিষ, স্নেহ বা তেল, শর্করা, খনিজ লবণ ও ভিটামিনের মাত্রা যেন চাহিদা অনুযায়ী প্রয়ােজনীয় মাত্রায় থাকে সেদিকে লক্ষ রাখা প্রয়ােজন। যে সম্পূরক খাবার এ সকল পুষ্টি উপাদান যথাযথ মাত্রায় রেখে তৈরি করা হয় তাকে সুষম সম্পূরক খাদ্য বলে। 

মাছের সম্পূরক খাদ্যের পরিচিতি ও প্রয়ােজনীয়তা

মাছের সম্পূরক খাদ্যের উৎস 

মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান ব্যবহার করা হয়। 

উৎসের উপর ভিত্তি করে এসব উপাদানকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। 

যেমন- ক) উদ্ভিদজাত 

খ) প্রাণিজাত । 

নিচে এদের কিছু উদাহরণ দেওয়া হলাে:

ক) উদ্ভিদজাত :

উদ্ভিদজাত খাদ্য উপাদানের মধ্যে কিছু উল্লেখযােগ্য উপাদান হচ্ছে- চালের কুঁড়া, গম ও ডালের মিহিভুসি, সরিষার খৈল, তিলের খৈল, আটা, চিটাগুড়, খুদিপানা, রান্না ঘরের উচ্ছিষ্ট, বিভিন্ন নরম পাতা যেমন- মিষ্টিকুমড়া, কলাপাতা, বাঁধা কপি ইত্যাদি। 

খ) প্রাণিজাত: 

প্রাণিজাত কয়েকটি খাদ্য উপাদান হচ্ছে শুটকি মাছের গুঁড়া বা ফিশমিল, রেশম কীট মিল, চিংড়ির গুঁড়া (স্রিম্প মিল), কাঁকড়ার গুঁড়া, হাড়ের চূর্ণ (বােন মিল), শামুকের মাংস, গবাদিপশুর রক্ত (ব্লাড মিল) ইত্যাদি। 

সম্পূরক খাদ্যের উপকারিতা

মাছের সম্পূরক খাদ্যের পরিচিতি ও প্রয়ােজনীয়তা

১। মাছকে নিয়মিত সম্পূরক খাবার সরবরাহ করলে অধিক ঘনত্বে পােনা ও বড় মাছ চাষ করা যায় । 

২। অল্প সময়ে বড় আকারের সুস্থসবল পােনা উৎপাদন করা যায়।

৩। পােনার বাঁচার হার বেড়ে যায়। 

৪। মাছের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

 ৫। মাছের দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে । 

৬। মাছ পুষ্টির অভাবজনিত রােগ থেকে মুক্ত থাকে। 

৭। সর্বোপরি কম সময়ে জলাশয় থেকে অধিক মাছ ও আর্থিক মুনাফা পাওয়া সম্ভব হয়।

মাছের পুষ্টি চাহিদা ও সম্পূরক খাদ্য তালিকা

মাছের সম্পূরক খাদ্যের পরিচিতি ও প্রয়ােজনীয়তা

মাছের সম্পূরক খাদ্যের পরিচিতি ও প্রয়ােজনীয়তা: মাছের প্রজাতি, বয়স ও আকারের উপর ভিত্তি করে খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা বিভিন্ন হয়। প্রজাতি ভেদে বিভিন্ন মাছের রেণু পােনার জন্য দেহের ওজনের ১০-২০%, আঙ্গুলে পােনার জন্য ৫-১০% এবং বড় মাছের জন্য ৩-৫% হারে সম্পূরক খাদ্য প্রয়ােগ করতে হয়। সুস্থ-সবল মাছ ও এর দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধির জন্য মাছের খাবারে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকা আবশ্যক। 

এসব উপাদানের মধ্যে আমিষ বা প্রােটিন গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। এটি খাবারে বেশি মাত্রায় প্রয়ােজন। এজন্য মাছের পুষ্টি চাহিদা বলতে প্রধানত আমিষের চাহিদাকে বােঝায়। মাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদান যেমন-শর্করা, তেল ও খনিজ লবণ কম-বেশি বিদ্যমান থাকে। 

এসব খাদ্যে আমিষের চাহিদা পূরণ হলে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানগুলাের খুব একটা অভাব হয় না। খাদ্যে আমিষের এই চাহিদা প্রজাতি ও জীবনচক্রের বিভিন্ন স্তর ভেদে কার্প বা রুই জাতীয় মাছের জন্য ২০-৩০%, চিংড়ির জন্য ৩০-৪৫% ও ক্যাটফিশ (আঁশ বিহীন লম্বা গুঁড়যুক্ত মাছ) বা মাগুর জাতীয় মাছের জন্য ৩৫-৪৫% থাকে। 

একটি পুকুরে সম্পূরক খাদ্য প্রদানের মাধ্যমে যখন মাছ উৎপাদন করা হয় তখন ঐ খাদ্য কী পরিমাণ মাছ দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে (মাছ খাচ্ছে) এবং তা থেকে কী পরিমাণ মাছ উৎপাদন হচ্ছে তা খাদ্য রূপান্তর হার বা FCR (Food conversion ratio) নির্ণয়ের মাধ্যমে হিসাব করা যায়। মাছের সম্পূরক খাদ্যের পরিচিতি ও প্রয়ােজনীয়তা|

এভাবে একাধিক খাদ্যের FCR নির্নয় করে তুলনা করলে কোন খাদ্য অধিক ভালাে তা বােঝা যায়। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে খাদ্য রূপান্তর হার বা FCR হচ্ছে খাদ্য প্রয়ােগ ও খাদ্য গ্রহণের ফলে জীবের দৈহিক বৃদ্ধির অনুপাত । অর্থাৎ ১ কেজি মাছ পেতে যত কেজি খাবার খাওয়াতে হয়, তাই খাদ্য রূপান্তর হার ।

FCR=মাছকে প্রদানকৃত খাদ্য

         দৈহিক বৃদ্ধি

দৈহিক বৃদ্ধি = আহরণকালীন মােট ওজন – মজুদকালীন মােট ওজন

ধরা যাক, একটি পুকুরে কিছু মাছের পােনা ছাড়া হলাে যার মােট ওজন ১ কেজি। নিয়মিত খাদ্য প্রয়ােগ করে ৬ মাস পর আহরণের সময় মােট ১৫ কেজি মাছ পাওয়া গেল। এ ৬ মাসে মােট ২১ কেজি খাদ্য প্রয়ােগ করা হলাে। মাছের সম্পূরক খাদ্যের পরিচিতি ও প্রয়ােজনীয়তা|

সুতরাং, FCR = ——=১.৫ ১৫ – ১

এই ধরনের আরও পোষ্ট পেতে আমাদের poramorso24.com নিয়মিত ভিজিট করুন । ধর্যসহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। মাছের সম্পূরক খাদ্যের পরিচিতি ও প্রয়ােজনীয়তা|

আরও পড়ুন

  1. গৃহপালিত পশুপাখি পালন পদ্ধতি
  2. গােলাপ ফুল চাষ পদ্ধতি
  3. গাভী পালন পদ্ধতি
  4. গরুর মাংস ও দুধ উৎপাদনে অ্যালজি গুরুত্বপূর্ণ কেন
  5. গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা
  6. কলা চাষ যেভাবে করবেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *