সাম্য বলতে কি বোঝায়: সাম্যের অর্থ সমান । অতএব শব্দগত অর্থে সাম্য বলতে সমাজে সবার সমান মর্যাদাকে বােঝায়। কিন্তু সমাজে সবাই সমান নয় এবং সবই সমান যােগ্যতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। প্রকৃত অর্থে সাম্য বলতে এমন এক সামাজিক পরিবেশকে বােঝায়, যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ ইত্যাদি নির্বিশেষে যােগ্যতা অনুযায়ী সবাই সমান সুযােগ-সুবিধা লাভ করে, যেখানে কারাে জন্য কোনাে বিশেষ সুযােগ সুবিধা নাই এবং সে সুযােগ-সুবিধা ব্যবহার করে সকলে নিজ নিজ দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে পারে। মূলত, সাম্য বলতে বােঝায়,
সাম্য বলতে কি বোঝায়
- প্রথমত: কোনাে ব্যক্তি বা শ্রেণির জন্য বিশেষ সুযােগ-সুবিধার অবসান,
- দ্বিতীয়ত: সকলের জন্য পর্যাপ্ত সুযােগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা,
- তৃতীয়ত: যােগ্যতা অনুযায়ী সমান সুযােগ-সুবিধা ভােগ করা।
সাম্যের বিভিন্ন রূপ
মানুষের বিভিন্নমুখী বিকাশ সাধনের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযােগ-সুবিধা প্রয়ােজন। নাগরিক
জীবনে বিভিন্ন সুযােগ-সুবিধা ভােগের জন্য সাম্যকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
- ১। সামাজিক সাম্য,
- ২। রাজনৈতিক সাম্য,
- ৩। অর্থনৈতিক সাম্য,
- ৪। আইনগত সাম্য,
- ৫। স্বাভাবিক সাম্য ও
- ৬। ব্যক্তিগত সাম্য।
১. সামাজিক সাম্য :
জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-পেশা নির্বিশেষে সমাজের সকল সদস্যের সমানভাবে সামাজিক সুযােগ-সুবিধা ভােগ করাকে সামাজিক সাম্য বলে। এ ক্ষেত্রে কোনাে ব্যক্তি বা শ্রেণিকে কোনাে
বিশেষ সুযােগ-সুবিধা দেওয়া যাবে না।
২. রাজনৈতিক সাম্য :
রাষ্ট্রীয় কাজে সকলের অংশগ্রহণের সুযােগ-সুবিধা থাকাকে রাজনৈতিক সাম্য বলে। নাগরিকরা রাজনৈতিক সাম্যের কারণে মতামত প্রকাশ, নির্বাচিত হওয়া এবং ভােট দেওয়ার অধিকার ভােগ করে।
অর্থনৈতিক সাম্য :
যােগ্যতা অনুযায়ী প্রত্যেকের কাজ করার ও ন্যায্য মজুরি পাওয়ার সুযােগকে অর্থনৈতিক সাম্য বলে। বেকারত্ব থেকে মুক্তি, বৈধ পেশা গ্রহণ ইত্যাদি অর্থনৈতিক সাম্যের অন্তর্ভুক্ত।
৪. আইনগত সাম্য :
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের আইনের দৃষ্টিতে সমান থাকা এবং বিনা অপরাধে
গ্রেফতার ও বিনা বিচারে আটক না করার ব্যবস্থাকে আইনগত সাম্য বলে।
৫. স্বাভাবিক সাম্য :
এর অর্থ জন্মগতভাবে প্রত্যেক মানুষ স্বাধীন এবং সমান। কিন্তু বাস্তবে জন্মগতভাবে প্রত্যেক মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে সমান হতে পারে না। এ জন্য বর্তমানে স্বাভাবিক সাম্যের ধারণা প্রায় অচল।
৬. ব্যক্তিগত সাম্য :
জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বংশ ও মর্যাদা ইত্যাদি নির্বিশেষে মানুষে মানুষে কোনাে ব্যবধান
না করাকে ব্যক্তিগত সাম্য বলে ।
সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক
সাম্য ও স্বাধীনতার পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে দুটি ধারণা রয়েছে। যথা-
- ১। সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর সম্পূরক এবং
- ২। সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর বিরােধী।
এ ধারণা দুটি ব্যাখ্যা করলে উভয়ের সত্যিকার সম্পর্ক সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে।
১. পরস্পর নির্ভরশীল :
সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর নির্ভরশীল। সাম্য ছাড়া স্বাধীনতার কথা যেমন কল্পনা করা যায় না, ঠিক তেমনি স্বাধীনতা ছাড়া সাম্যের কথা ভাবা যায় না। সুতরাং বলা যায়, একটি রাষ্ট্র যত সাম্যভিত্তিক হবে সেখানে স্বাধীনতা তত নিশ্চিত হবে।
গণতন্ত্রের ভিত্তি :
সাম্য ও স্বাধীনতা গণতন্ত্রের ভিত্তি রূপে কাজ করে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যেমন সাম্যের দরকার হয়, তেমনি স্বাধীনতার প্রয়ােজন হয়। সাম্য ও স্বাধীনতা একই সঙ্গে বিরাজ না করলে গণতান্ত্রিক অধিকার ভােগ করা সম্ভব হতাে না। সাম্য উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ দূর করে আর স্বাধীনতা সকলের সুযােগ-সুবিধাগুলাে ভােগ করার অধিকার দান করে।
পরিশেষে বলা যায়, সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর পরিপূরক ও সম্পূরক । রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণ, চলাফেরা ও জীবনধারণের জন্য সাম্যভিত্তিক সমাজ গঠন করা সম্ভব হবে না। সমাজের সুবিধাগুলাে সকলে মিলে সমানভাবে ভােগ করতে হলে স্বাধীনতার প্রয়ােজন। তাই বলা হয় যে সাম্য মানেই স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা মানেই সাম্য।
আরও পড়ুন