সার্ক কেন গঠিত হয়েছিল (SAARC)

সার্ক কেন গঠিত হয়েছিল (SAARC)

সার্ক কেন গঠিত হয়েছিল (SAARC): সার্কের পুরাে নাম দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযােগিতা সংস্থা (South Asian Association for Regional Cooperation)। শুরুতে এটি দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত হয়। পরবর্তীকালে আফগানিস্তান এর সদস্যভুক্ত হয়। সদস্য রাষ্ট্রগুলাের পারস্পরিক সহযােগিতার ভিত্তিতে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতি সাধনের লক্ষ্যে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সার্ক একটি আঞ্চলিক উন্নয়ন সংস্থা

সার্ক কেন গঠিত হয়েছিল (SAARC)

সার্ক কেন গঠিত হয়েছিল (SAARC)

সার্কের গঠন

১৯৮৫ সালের ৮ই ডিসেম্বরে ঢাকায় সার্কের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এর সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা আটটি। রাষ্ট্রগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। 

সার্কের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামােতে পাঁচটি স্তর আছে। 

এগুলাে হলাে- 

  • ১) রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের শীর্ষ সম্মেলন
  • ২) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন, 
  • ৩) স্ট্যান্ডিং কমিটি, 
  • ৪) টেকনিক্যাল কমিটি এবং 
  • ৫) সার্ক সচিবালয়।

এগুলাের মাধ্যমে সার্কের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পাদন করা হয়ে থাকে। 

সার্ক সচিবালয় নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডুতে অবস্থিত। এর প্রধানকে বলা হয় সেক্রেটারি জেনারেল। প্রতিবছর সার্কভুক্ত দেশগুলাের প্রধানদের নিয়ে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সার্ক দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলাের প্রায় ১৫০ কোটি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।

সার্ক গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য 

দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলাে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। দাদ্রি, নিরক্ষরতা, অপুষ্টি, জনসংখ্যার আধিক্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি এসব দেশের দীর্ঘদিনের সমস্যা। 

পারস্পরিক সহযােগিতার মাধ্যমে এসব সমস্যা দূরীকরণ ও পারস্পরিক উন্নয়নের লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে সার্ক পঠিত হয়। এছাড়াও সার্ক গঠনের আরও কতগুলাে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে। এগুলাে আলােচনা কী হলাে।

  • ১। সার্কভুক্ত দেশগুলাের জনগণের জীবনযাত্রার মানােন্নয়ন করা;
  • ২। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং সংস্কৃতির বিকাশ নিশ্চিত করা;
  • ৩। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলােকে জাতীয়ভাবে আত্মনির্ভরশীল করে তােলার জন্য প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা; 
  • ৪। এ অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলাের সাধারণ স্বার্থে সহানুভূতি ও সহযােগিতা বৃদ্ধি করা; 
  • ৫। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সহযােগিতার সম্পর্ক স্থাপন; 
  • ৬। অন্যান্য আঞ্চলিক সহযােগিতা সংস্থার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করে সার্কের লক্ষ্য বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়া; 
  • ৭। সার্কভুক্ত দেশগুলাের মধ্যে বিরাজমান বিরােধ ও সমস্যা দূর করে পারস্পরিক সমঝােতা সৃষ্টি করা; 
  • ৮। দেশগুলাের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগােলিক অখণ্ডতার নীতি মেনে চলা এবং 
  • ৯। অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।

সার্কের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক 

সার্কের সাথে বাংলাদেশের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। বাংলাদেশের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রথম সার্ক গঠনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু তাঁর জীবদ্দশায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উদ্যোগে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে সার্কের কাজ শুরু হয়।

সার্কের উদ্যোক্তা হিসেবে বাংলাদেশ সার্কের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বলিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সার্কের সদস্য হিসাবে সার্কভুক্ত দেশগুলাের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ভারসাম্য রক্ষা, আঞ্চলিক বিরােধ নিষ্পত্তি এবং প্রতিবেশী দেশগুলাের মধ্যে বিদ্যমান সংকট সমাধানে বাংলাদেশ অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

এছাড়া সদস্য দেশগুলােতে মানবপাচার রােধ, সন্ত্রাস দমন, পরিবেশ সংরক্ষণ, যােগাযােগ ও প্রযুক্তির উন্নয়ন, রােগ-ব্যাধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ ইত্যাদি কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ। এসব ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযােগিতার জন্য নানা ধরনের যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। 

এগুলাে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সার্কের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করার জন্য বাংলাদেশ সব ধরনের সহযােগিতা করে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

  1. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য – Importance of the Election of 1954
  2. আইন বিভাগ: আইনের প্রকারভেদ ও আইনের উৎস 
  3. আইন ও স্বাধীনতা বলতে কি বোঝায়