সুনাগরিকের সংজ্ঞা: রাষ্ট্রের সব নাগরিক সুনাগরিক নয়। আমাদের মধ্যে যে বুদ্ধিমান, যে সকল সমস্যা অতি সহজে সমাধান করে, যার বিবেক আছে সে ন্যায়-অন্যায়, সৎ-অসৎ বুঝতে পারে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকে, আর যে আত্মসংযমী সে বৃহত্তর স্বার্থে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে পারে। এসব গুণসম্পন্ন নাগরিকদের বলা হয় সুনাগরিক। উপরের আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সুনাগরিকের প্রধানত তিনটি গুণ রয়েছে । যথা
- ১। বুদ্ধি,
- ২। বিবেক ও
- ৩। আত্মসংযম।
বুদ্ধি :
বুদ্ধি সুনাগরিকের অন্যতম গুণ । বুদ্ধিমান নাগরিক পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বহুমুখী সমস্যা
চিহ্নিত করে সমাধানের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে । সুনাগরিকের বুদ্ধির উপর নির্ভর করে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সফলতা। তাই বুদ্ধিমান নাগরিক রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। প্রতিটি রাষ্ট্রের উচিত নাগরিকদের যথাযথ শিক্ষাদানের মাধ্যমে বুদ্ধিমান নাগরিক হিসেবে গড়ে তােলা।
বিবেক :
রাষ্ট্রের নাগরিকদের হতে হবে বিবেকবােধম্পন্ন। এ গুণের মাধ্যমে নাগরিক ন্যায়-অন্যায়, সৎ-অসৎ, ভালাে-মন্দ অনুধাবন করতে পারে। বিবেকবান নাগরিক একদিকে যেমন রাষ্ট্রপ্রদত্ত অধিকার ভােগ করে, ঠিক তেমনি রাষ্ট্রের প্রতি যথাযথভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে এবং ন্যায়ের পক্ষে থাকে।
যেমন- বিবেকসম্পন্ন নাগরিক রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকে, আইন মান্য করে, যথাসময়ে কর প্রদান করে, নির্বাচনে যােগ্য ও সৎ ব্যক্তিকে ভােট দেয়।
আত্মসংযম :
সুনাগরিকের আত্মসংযম থাকা উচিত। এর অর্থ নিজেকে সকল প্রকার লােভ-লালসার ঊর্ধ্বে রেখে সততা ও নিষ্ঠার সাথে নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করা। অর্থাৎ সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করার নাম আত্মসংযম।
আমাদের মধ্যে যিনি এ গুণের অধিকারী তিনি যেমন স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারেন, তেমনি অন্যের মতামত প্রকাশেও নিজেকে সংযত রাখেন। এ ছাড়া, প্রত্যেক নাগরিককে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্বের ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। ৯ এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মূল্যবােধ জাগ্রত হয়।
নাগরিক অধিকার
নিচের চিত্রগুলাে থেকে আমরা নাগরিকের কয়েকটি অধিকার সম্পর্কে ধারণা পাই। এ ছাড়া নাগরিক হিসেবে আমাদের আরও অনেক অধিকার আছে।
অধিকার হলাে সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত কতগুলাে সুযােগ-সুবিধা, যা ভােগের মাধ্যমে নাগরিকের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে। অধিকার ব্যতীত মানুষ তার ব্যক্তিত্বকে উপলব্ধি করতে পারে না। অধিকারের মূল লক্ষ্য ব্যক্তির সর্বজনীন কল্যাণ সাধন। রাষ্ট্রের নাগরিকদের মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য অধিকার অপরিহার্য।
আমরা অনেক সময় অধিকার বলতে ইচ্ছানুযায়ী যেকোনাে কিছু করার ক্ষমতাকে বুঝি। কিন্তু যেমন খুশি তেমন কাজ করা অধিকার হতে পারে না। অধিকার সকল নাগরিকের মঙ্গল ও উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদান করা হয়। অধিকারের নামে আমাদের এমন কোনাে কাজ করা উচিত নয়, যার ফলে অন্যের ক্ষতি হতে পারে ।
অধিকারের শ্রেণিবিভাগ
অধিকার প্রধানত দুই প্রকার। যথা-
- ১। নৈতিক অধিকার ও
- ২। আইনগত অধিকার।
নৈতিক অধিকার :
নৈতিক অধিকার মানুষের বিবেক এবং সামাজিক নৈতিকতা বা ন্যায়বােধ থেকে আসে। যেমন- দুর্বলের সাহায্য লাভের অধিকার নৈতিক অধিকার। এটি রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণয়ন করা হয়
। যার ফলে এর কোনাে আইনগত ভিত্তি নেই। তাছাড়া এ অধিকার ভঙ্গকারীকে কোনাে শাস্তি দেওয়া হয় না। নৈতিক অধিকার বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন রকম হতে পারে।
আইনগত অধিকার :
যেসব অধিকার রাষ্ট্রের আইন কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমােদিত, সেগুলােকে আইনগত অধিকার বলে। আইনগত অধিকারকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
- ক. সামাজিক
- খ. রাজনৈতিক ও
- গ. অর্থনৈতিক অধিকার।
ক. সামাজিক অধিকার
সমাজে সুখ-শান্তিতে বসবাস করার জন্য আমরা সামাজিক অধিকার ভােগ করি। যেমন- জীবন রক্ষার, স্বাধীনভাবে চলাফেরার ও মত প্রকাশের, পরিবার গঠনের, শিক্ষার, আইনের
দৃষ্টিতে সমান সুযােগ লাভের, সম্পত্তি লাভের ও ধর্মচর্চার অধিকার ইত্যাদি।
খ. রাজনৈতিক অধিকার :
নির্বাচনে ভােটাধিকার, নির্বাচিত হওয়া এবং সকল প্রকার অভাব-অভিযােগ আবেদনের মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়াকে রাজনৈতিক অধিকার বলে। এসব অধিকার ভােগের বিনিময়ে নাগরিকরা রাষ্ট্র পরিচালনায় পরােক্ষভাবে অংশগ্রহণের সুযােগ পায় ।
গ. অর্থনৈতিক অধিকার
জীবনধারণ, জীবনকে উন্নত ও এগিয়ে নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপ্রদত্ত অধিকারকে
অর্থনৈতিক অধিকার বলে । যেমন- যােগ্যতা অনুযায়ী কাজ করার অধিকার, ন্যায্য মজুরি লাভের অধিকার, অবকাশ লাভের অধিকার, শ্রমিকসংঘ গঠনের অধিকার।
আরও পড়ুন