Breaking News

চিরতরে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

আজকের পোষ্টের বিষয় হচ্ছে কিভাবে চিরতরে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা যায় তার ঘরোয়া উপায়। আপনার পেট পরিষ্কার হচ্ছে না । পায়খানা করতে কষ্ট হয় । টয়লেটে অনেক সময় ধরে বসে থাকতে হয় । কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন সমাধান কি? আমি এই পোষ্টে কোষ্ঠকাঠিন্যের সবচেয়ে কমন ৬টি কারণ আর সেগুলোর সমাধান তুলে ধরবো। প্রত্যেকটা কারণ সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলবো যাতে আপনার পেটে কি হচ্ছে পুরোটাই বুঝতে পারেন।  আর সমাধান মেনে চলতে সুবিধা হয় । তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

১। খাদ্যের যথেষ্ট পরিমাণে আঁশ না থাকার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য

আমাদের পেট পরিষ্কার হওয়ার জন্য খাবারে আঁশ  কেন খুব গুরুত্বপূর্ণ সেটা একটু জেনে নেই।  আমাদের পেটের ভেতরে থাকা নাড়িভুঁড়ি যেখানে পায়খানা তৈরি হয় এবং জমা থাকে। সেখানে আঁশ অনেকটা স্পঞ্জের মত কাজ করে ।  অর্থাৎ আঁশ পানি শোষণ ও ধারণ করার মাধ্যমে পায়খানায় পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে।  তাই আঁশ থাকলে পায়খানা নরম হয় ।  আর সেই পায়খানায় ভেতর দিয়ে সহজেই এগোয় এবং সহজেই সেটা শরীর থেকে বের করা যায় । স্বাভাবিক পায়খানা হতে আরো অনেক ভাবে সাহায্য করে। তাই খাদ্য যদি যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে তখন কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে । তাহলে সমাধান কি? সমাধান হচ্ছে খাবারের আঁশের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

কোন কোন খাবারে প্রচুর পরিমান আঁশ পাওয়া যায়

আঁশযুক্ত খাবারের তালিকায় রয়েছে ডল, ছোলা, গাজর, শসা, টমেটো, আপেল, কলা, সবধরণের শাকসবজি, ফলমূল, গোটা শস্যদানা, ইত্যাদি। গোটা  শস্যদানা মধ্যে রয়েছে লাল চাল, লাল আটা। লাল চাল থেকে যখন সাদা করা হয় তখন আঁশের  পরিমাণ কমে যায়। আটার  জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। কোন কোন খাবারে আঁশ পাওয়া যায় তা তো জানলাম । কিন্তু প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে কি কি পরিবর্তন  আনলে আঁশের পরিমাণ বাড়বে?

খাবারে আঁশের পরিমাণ বাড়ানোর ৭টি উপায়

খাবারে আসবার ক্ষেত্রেই দুটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।  হঠাৎ করে খাবারে আঁশের পরিমাণ বেড়ে গেলে পেটের সমস্যা দেখা দেয় বা পেট ফাঁপতে পারে । তাই ধীরে ধীরে খাবারে আঁশের পরিমাণ বাড়াতে হবে। তবে সবগুলো বিষয় একসাথে শুরু করবেন না। প্রয়োজনে খাবার গুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন এবং একটি একটি করে শুরু করুন । আরেকটি বিষয়, আঁশের একটি ধর্ম হচ্ছে আঁশ পানি শোষণ করে । তাই খাবারের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই যথেষ্ট পরিমাণ  পানি নিশ্চিত করতে হবে।

২। যথেষ্ট পরিমাণে পানি না খাওয়ার কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য

পায়খানা নরম করতে হলে শরীরে পানির প্রয়োজন হয়। আবার যাতে আমাদের বৃহদন্ত্রে অর্থাৎ পেটের নাড়িভুড়ি চলাচল করতে পারে কোথাও আটকে না থাকে তার জন্য প্রয়োজন পানি । আপনি যদি যথেষ্ট পরিমাণ পানি না খান তাহলে পায়খানা নরম  না হয়ে শক্ত হওয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।  তাহলে এর সমাধান কি? পানির কারণে কষা পায়খানা দূর করার সমাধান একটাই।  দিনে অত্যন্ত ২ লিটার পানি পান করতে হবে । প্রয়োজনে আপনার সাথে একটি 1 লিটার পানির বোতল রাখতে পারেন। তাহলে দিনে কতটুকু পানি খেয়েছেন তার হিসাব রাখতে খুব সহজ হবে ।

২। অনেকক্ষণ ধরেই শুয়ে বসে থাকার কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য

আমরা যদি হাঁটাচলা কমিয়ে দেই।  শারীরিক পরিশ্রম না করি।  অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে বসে থাকি।  ব্যায়াম না করি। তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।  শরীরচর্চা করলে আমাদের বৃহদন্ত্র অর্থাৎ পেটের ভেতর থাকা নাড়িভুঁড়ি সচল হয় এবং সাময়িক পায়খানা হতে সাহায্য করে। আমরা যত বেশি বাসা থেকে কাজ করবো, বাসা থেকে অনলাইন ক্লাস করবো, অফিসে ইউনিভার্সিটি তে যাওয়ার কম হবে ততই আমাদের হাঁটাচলা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। হয়তো সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ২ কদম দিয়ে, টেবিল চেয়ারে বসে, সেখান থেকে আপনি কাজ করছেন বা ক্লাস করছেন।  দিনে আর ব্যায়াম করা হচ্ছে না তখন কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই কারণগুলোর জন্য কষা পায়খানা দূর করার জন্য কি করতে পারেন? প্রতিদিন কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করা, ব্যায়াম করা বা দৌড়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। একদম কিছু না করার চেয়ে অল্প কিছু করা শ্রেয়।  আজকে থেকেই শুরু করতে পারেন।  চিন্তা করলেন প্রতিদিন ১০ মিনিট, ১৫ মিনিট দ্রুত হাটবেন। তারপর আস্তে আস্তে সময়টা আপনি বাড়াবেন। একটানা অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে বা বসে থাকবেন না।  একটু উঠে হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করে নিবেন। আপনার মনে প্রশ্ন হতে পারে  কতক্ষণ ব্যায়াম করতে হবে? আপনার বয়স ১৯ থেকে ৬৪ এর মধ্যে হয়, তাহলে আপনার লক্ষ্য থাকবে সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘন্টার মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করা।  মাঝারি ধরনের ব্যায়ামগুলো হলো- দ্রুত হাঁটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি । যদি তার চেয়ে বেশি খাটুনির ব্যায়াম করেন যেমন- দৌড় দৌড়, ফুটবল খেলা, দড়ি লাফানো তাহলে আপনার লক্ষ্য হবে সেগুলো সপ্তাহে অন্তত সোয়া এক ঘণ্টা করে করা।  অর্থাৎ সপ্তাহের ৭৫ মিনিটি।

৪। পায়খানার চাপ আসলে টয়লেটের না যেটা প্রায়শই চেপে রাখা

পায়খানা না করে আটকে রাখলে দিন দিন শরীর সেটা থেকে পানি শুষে নেয়। ফলে পায়খানা ক্রমেই শক্ত হতে থাকে সেটা শরীর থেকে বের করা খুবই যন্ত্রণাদায়ক হয়। তাহলে কি করবেন? পায়খানার চাপ আসলে বেশি দেরি করবেন না বাথরুমে চলে যাবেন। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ আছে তাদের জন্য আমরা প্যানে যেভাবে বসি সেই দেহভঙ্গি পায়খানা করার জন্য সবচেয়ে ভালো। তাই যদি সম্ভব হয় কোমর না বসে,প্যানে বসে পায়খানা করার চেষ্টা করবেন । তবে বাসায় যদি প্যান না থাকে বা কমোড ব্যবহার করতেই হয়। তাহলে যেটা করতে পারেন সেটা হল- পায়ের নিচের ছোট্ট টুল দিয়ে পা উচু করতে পারেন।  হাঁটুদুটো কোমরের উপরে তোলার চেষ্টা করবেন।

৫। মানসিক চাপ, উদ্বিগ্নতা ও বিষন্নতা

আপনি যদি অনেক মানসিক চাপে থাকেন। উদ্বিগ্নতা কিংবা বিষণ্ণতায় ভোগেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। আপনার করনীয়:  মানসিক প্রশান্তি আনে এমন কিছু কাজ করার চেষ্টা করবেন।  সেটা হতে পারে আপনজনের সাথে সময় কাটানো।  আর যদি আপনি বিষণ্ণতায় দিন কাটান অথবা উদ্বিগ্নতা রোগে ভুগে থাকেন তাহলে সেই রোগের চিকিৎসা নেবেন । আপনার মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সেরে উঠবে।

৬। কিছু ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য

নির্দিষ্টকিছু কিছু ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে কষা পায়খানা দেখা দিতে পারে।  যেমন ট্রামাডল বা আইবিপ্রফেন, আয়রন বা ক্যালসিয়াম সাপলিমেন্ট ইত্যাদি। অনেকসময় পাচঁটার বেশি ঔষুধ খেলেও কষা পায়খানা হওয়া সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আপনার করনীয়:  নতুন ওষুধ শুরু করার পর আপনার যদি মনে হয় কষা পায়খানা বেড়ে গেছে,  তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন আপনার কাছ থেকে জানার পর ওষুধ বদলে দিতে পারেন।  কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসার জন্য আলাদা ওষুধ দিতে পারেন। সাধারনত  কোষ্ঠকাঠিন্য বা কষা পায়খানা বড় কোনো রোগের কারনে হয় না।  তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু রোগের কারণেও কষা পায়খানা দেখা দিতে পারে। যেমন থাইরয়েড, ডায়াবেটিস ইত্যাদি থাকলে হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্যর জন্য কখন ডাক্তারের সহায়তা নেবেন?

আমাদের আজকের এই পোষ্টের ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করে যদি কোনো সমাধান না হয় তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন। যদি র্দীঘদীন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য বা কষা পায়খানা থাকে, পায়খানার রাস্তায় ব্যাথা হয়, পায়খানার খুব শক্ত এবং রং কালো হয়। পায়খানার সাথে রক্ত আসে। পেট ফাঁপা থাকে, হজম শক্তি কমে যায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে যদি পেটব্যাথা হয়, জ্বর আসে, যদি কোনো কারণ ছাড়াই ওজন কমে যায় এবং রক্তশুণ্যতা থাকে তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তার দেখাবেন।

আরও পড়ুন: মৌমাছি বা বোলতার কামড়ে ঘরোয়া চিকিৎসা

About sujan

Check Also

আগুনে পুড়ে গেলে প্রথমেই যে চিকিৎসা করবেন

আগুনে পুড়ে গেলে প্রথমেই যে চিকিৎসা করবেন

আগুনে পুড়ে গেলে প্রথমেই যে চিকিৎসা করবেন: আকস্মিক দুর্ঘটনায় বা মুহূর্তের অসতর্কতায় পুড়ে যাওয়ার মতো …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *