চুলের যত্ন: মেয়েদের চুলের যত্নে যে ভুলগুলো করবেন না

চুলের যত্ন: মেয়েদের চুলের যত্নে যে ভুলগুলো করবেন না

চুলের যত্ন: আমরা যখনই কোন ডিজনি সিনেমার রাজকন্যা কে দেখি, তাদের অপরূপ চুল থেকে দৃষ্টি সরানো কষ্টকর হয়ে যায়। এমন চুলের অধিকারী হয়ে সিন্ডারেলা, স্নো হোয়াইট অথবা জেসমিন সাজতে যে কেউই চাইবে কিন্তু তার জন্য তো দরকার সুস্থ এবং উজ্জ্বল চুল। আর আমাদের দেশের আবহাওয়ার বর্তমান যে অবস্থা তাতে তো চুলকে সুস্থ রাখতে পারাটাই একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ!

আমরা অনেকেই চুলকে একটু বেশি ভালো করতে গিয়ে ভালো থেকে খারাপ কিছু ঘটিয়ে ফেলি। চুল মেয়েদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির অন্যতম। তাই চুলের যত্ন নিতে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য জেনে রাখা উচিত। আপনি চাইলে প্রাকৃতিক উপায়ে চুলেরে যত্ন নিতে পারেন। কিংবা বাজার থেকে কেনা বিভিন্ন প্রসাধনী দিয়েও চুলেরে যত্ন নিতে পারেন। কিন্তু আপনার তার সঠিক ব্যবহার জানতে হবে।

আর এই বিষয়গুলো নিয়েই আজকের এই পোস্ট। আমাদের ওয়েবসাইটে রুপচর্চা ক্যাটাগরিতে ক্লিক করে আরও নতুন নতুন টিপস পাবেন। তাই নিয়মিত ভিজিট করুন এবং পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

Table of Contents

চুলের যত্ন: মেয়েদের চুলের যত্নে যে ভুলগুলো করবেন না

চুলের যত্ন -১ : চুল সুরক্ষিত রাখুন

সবসময় চেষ্টা করা উচিত চুলকে সূর্যের আলো, রোদ, বৃষ্টি থেকে সুরক্ষিত রাখার। সূর্যের কড়া রোদ, তাপ, ধুলোবালি ইত্যাদি চুলের দুর্দশা ডেকে আনে।

ধীরে ধীরে এরা জমাট বাঁধা শুরু করে চুলের গোড়াতে এবং ফলাফল স্বরূপ শুরু হয় চুল পড়া। তাই এ ঝামেলা গুলো থেকে রেহাই পেতে খোলা আকাশের নিচে রোদ কিংবা বৃষ্টিতে চলাচলের সময় ছাতা অথবা ক্যাপ পড়া উচিত।

এমনকি কাপড় কিংবা ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখলেও অনেকাংশেই চুল সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।

চুলের যত্ন -২ : ভেজা চুলকে সাবধানে ট্রিট করুন

ভেজা চুল সবথেকে ভঙ্গুর অবস্থায় থাকে। ভেজা অবস্থায় থাকাকালীন সময়ে চুলের গোড়া থেকে চুল ভেঙে যাওয়া সবচেয়ে সহজ তাই শ্যাম্পু করার সময় চুলে বেশি চাপ প্রয়োগ করা উচিত নয়। এছাড়াও গোসলের পরপরই চুলে চিরুনি ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত।

চুলের যত্ন -৩ :সঠিকভাবে শ্যাম্পু করুন

বাইরে বের হলে চুলে প্রচুর ধুলোবালু আর ময়লা চুলে জমে থাকে। তাই, চুল পরিষ্কারের জন্য চুলের ধরন বুঝে ভালো মানের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।

শ্যাম্পু করার সময় ভালো করে মাসাজ করে শ্যাম্পু করুন। চুলে বেশি ময়লা থাকলে দুইবার শ্যাম্পু করুন। সপ্তাহে ৩/৪ দিন ভালো শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করুন।

চুলের যত্ন -৪ : নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহার করুন

প্রতিদিন গোসল অথবা চুল ধোঁয়ার পর চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এতে চুল হয় মসৃন ফলে ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যায়।

চুলের যত্ন -৫ : কন্ডিশনার ব্যবহার করুন তবে সঠিকভাবে

চুলের কন্ডিশনার সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত। কন্ডিশনারের কাজই হলো চুলকে মসৃন রাখা যার মানে হলো চুলের গোড়াতে এর কোনো প্রয়োজনই নেই।

তাই কন্ডিশনার ব্যবহার করার সময় তা প্রয়োগ করা উচিত চুলের গোড়া থেকে অন্তত এক ইঞ্চি দূর থেকে। এছাড়া অতিরিক্ত পরিমানে কন্ডিশনার ব্যবহার করা থেকেও বিরত থাকা উচিত নাহলে চুল তৈলাক্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।

চুলের যত্ন -৬ : একই ধরণের হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন

চুলের যত্ন নেওয়ার সময় একই কোম্পানির অনুরূপ উপাদানে তৈরি প্রোডাক্টস ব্যবহার করা উচিত। এতে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই আপনার চুলের যত্ন নিতে পারবেন। ঘন ঘন নতুন নতুন কোম্পানির প্রসাধনী ব্যবহার করলে আপনার চুল পড়া সমস্যা শুরু হতে পারে।

চুলের যত্ন -৭ : অতিরিক্ত হিট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন

তাপ চুলকে ভেঙে যেতে সহায়তা করে আর তাই চুলে হিট দেওয়া থেকে বিরত থাকাই উত্তম।

অতিরিক্ত হিটের কারণে চুল জ্বলে যেতেও পারে তাই ব্লোয়ার, আয়রন অথবা চুল স্ট্রেটনার যদি ব্যবহার করতেই হয় তাহলে সাবধানতার সাথে তা করা উচিত।

চুলের যত্ন -৮ : তোয়ালে ব্যবহার করুন আলতোভাবে  

অনেকেই চুলকে মোছার সময় খুব চাপ প্রয়োগ করে চুল মুছে থাকে। এতে বারবার ঘর্ষণের ফলে চুল তার সুস্থতা হারিয়ে ফেলে গোড়া থেকে ভেঙে যাওয়ার আশংকায় থাকে।

তাই চুল মোছার সময় যতটা সম্ভব আলতোভাবে তোয়ালে ব্যবহার করা উচিত।

চুলের যত্ন -৯ : আঁটসাঁট বেণী নয়

ঘুমানোর আগে শক্ত করে বেণী না করাই ভালো। এতে চুল একসাথে থাকবে কিন্তু টানটানে থাকবেনা ফলে ভেঙে যাওয়ার সুযোগ কম।

চুলের যত্ন -১০ : ভালো বালিশের কভার ব্যবহার করুন

কটন এর কাপড় রুক্ষ হয় যা থেকে তৈরী বালিশের কভারে ঘুমালে চুল ভেঙে যাওয়া একটি দৈনন্দিন ঘটনা হয়ে যেতে পারে। তাই তা পরিহার করে পাতলা কাপড়ের কভার ব্যবহার করা উচিত।

চুলের যত্ন -১১ : তেল দিন নিয়মিত

চুলে নিয়মিত তেল ব্যবহারে শক্ত হয় চুলের গোড়া তবে তা যেন আবার অতিরিক্ত না হয়ে যায়। অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করলে তা মুছে ফেলতে ব্যবহার করতে হবে অতিরিক্ত শ্যাম্পু যা চুলের জন্য ভালো নয়।

চুলের যত্ন -১২ : হট অয়েল মাসাজ

চুলের পরিপূর্ণ পুষ্টি যোগাতে অয়েল মাসাজের বিকল্প নেই। আজকাল কোকোনাট অয়েল ছাড়াও বাজারে আমলা অয়েল, আমন্ড অয়েল, অলিভ অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যায়। চাইলে এগুলো একসাথে মিক্স করেও চুলে লাগাতে পারেন।

চুলের যত্ন -১ ৩: চুলে টিজিং পরিহার করুন

টিজিং করে চুলের আয়তন বৃদ্ধি করা গেলেও তা চুলের জন্য ভালো নয়। তাই তা পরিহার করাই উচিত।

চুলের যত্ন -১ ৪: ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করুন

গরম পানির ব্যবহার চুলের জন্য ক্ষতিকর, তাই চুল পরিষ্কারের জন্য সবসময় ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন। শীতকালে অনেকে চুলে গরম পানি ব্যবহার করে থাকে, এটি হেয়ার ড্যামেজের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।

চুলের যত্ন -১৫ : চুল নিয়মিত ব্রাশ করুন

চুল নিয়মিত ব্রাশ করা প্রয়োজন। এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নিয়ম করে দিনে ২-৩ বার হেয়ার ব্রাশ করা চুলের জন্য উপকারী, রাতে ঘুমানোর আগে চুল ব্রাশ করুন।

চুলের যত্ন -১৬ : চুলে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন

চুল ভালো রাখার জন্য ধরন বুঝে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন। চুল শুষ্ক বা মিশ্র হলে ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর, আর তৈলাক্ত হলে ১৫ দিন পরপর চুলে প্যাক লাগান। ঘরে তৈরী প্যাক চুলের সুরক্ষায় বেশি কার্যকরী ।

চুলের যত্ন -১৭ : অতিরিক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট নয়

চুলে অতিরিক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট কখনই ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে চুলের বৃদ্ধি এবং সৌন্দর্য ব্যাহত হয়।

চুলের যত্ন -১৮ : স্বাস্থ্যকর খাবার

আপনার স্বাস্থ্য আপনার চুলে প্রতিফলিত হয়। আপনি স্বাস্থ্যকর থাকলে, ভাল থাকবে চুল। তাই সুন্দর চুল রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া আবশ্যক। আর তাই আপনার চুলের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন, লোহা এবং প্রোটিন এর মত পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত গ্রহণ করুন। বেশি বেশি প্রোটিন জাতীয় শাক-সবজি  চুল ভালো রাখতে সহায়তা করে, এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।

সুন্দর চুলের জন্য যে খুব ব্যয়বহুল লাইফস্টাইল অথবা প্রোডাক্টস ব্যবহার করতে হয় এমনটা কখনই নয়। শুধু প্রয়োজন নিয়মিত পরিচর্যা আর প্রয়োজন সঠিক পুষ্টির।

চুলের যত্ন -১৯ : ঠিকমতো শুকাতে হবে

ভেজা চুল কখনো টাওয়েল দিয়ে ঘষে ঘষে মুছবেন না, কারণ এতে চুল রুক্ষ হয়ে যায়। যা ভেজা চুল বেঁধে রাখার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, কারণে এতে বন্ধ হয়ে থাকায় চুল সংবেদনশীল হয়ে যায়। সবচেয়ে ভালো, শুধু বাতাস বা হেয়ার ড্রায়ারের সবচেয়ে নীচু তাপে চুল শুকালে।

আরও পড়ুন: মেয়েদের ত্বক ফর্সা করার ঘরোয়া উপায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *