পরিবেশগত দুর্যোগের কারণ ও মোকাবিলা: আমাদের চারপাশের নদ-নদী, খাল-বিল, পাহাড়-পর্বত, গাছ-পালা, মাটি এ সবকিছু নিয়েই আমাদের পরিবেশ । সুস্থ প্রাকৃতিক পরিবেশ অব্যাহত রাখা আমাদের স্থিতিশীল উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের প্রধান ভিত্তি।
পরিবেশগত দুর্যোগের কারণ ও মোকাবিলা
মানুষের কর্মকাণ্ড যখন পরিবেশের এই স্বাভাবিক অবস্থাকে বিনষ্ট করে, তখনই পরিবেশের দুর্যোগ সৃষ্টি হয়।
পরিবেশগত দুর্যোগের কারণ
পরিবেশকে ঘিরেই মানুষ বেড়ে উঠে। আবার মানুষের কারণে কোনাে না কোনােভাবে প্রতিনিয়তই পরিবেশ দূষিত হয়। শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এগিয়ে নিতে একের পর এক গাছ-পালা কেটে, বন উজাড় করে মানুষ শিল্প-কারখানা গড়ে তুলেছে।
এর ফলে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান যেমন : মাটি, বায়ু, পানি দূষিত হচ্ছে। নগরের শিল্প-কারখানাগুলাে জলাধারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে।
শিল্প-কারখানার অপরিশােধিত বর্জ্য নর্দমার পানিতে ফেলায় তা নদীতে মিশে পানি দূষিত করছে। এছাড়া জমিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলেও পানি দূষিত হচ্ছে। দূষণের কারণে এখন ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী জৈবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মৃত। পরিবেশগত দুর্যোগের কারণ ও মোকাবিলা।
শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদও ক্রমেই একই পরিণতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঢাকার বাইরে নদ-নদীগুলাের অবস্থাও একই রকম।

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদী মারাত্মক দূষণের শিকার। মুন্সিগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীর পার্শ্বে প্রতিষ্ঠিত সিমেন্ট কারখানাগুলাের দূষণে সে এলাকার পানি, জমি ও বায়ু বিষাক্ত হয়ে পড়েছে।
পরিবেশ বিপর্যয়ের আরেক দৃষ্টান্ত হলাে বনাঞ্চল হ্রাস ও এর অবক্ষয়। যেমন : ইটের ভাটার জ্বালানি হিসেবে, বাসাবাড়ির রন্ধন কাজে জ্বালানি হিসেবে, ভবন নির্মাণ ও ঘরের জানালা-দরজার জন্য এবং আসবাবপত্র তৈরি ইত্যাদি কাজে ব্যাপক হারে কাঠের ব্যবহার হচ্ছে।
এছাড়া পাহাড়ি অঞ্চলে বন ও গুল্ম ধ্বংস করে জুম চাষ প্রকৃতি পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি দেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সে দেশের মােট আয়তনের ২৫ ভাগ বন থাকা প্রয়ােজন।
অথচ আমাদের দেশের বনাঞ্চলের পরিধি দেশের মােট আয়তনের ২০ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ৬ শতাংশে পৌঁছেছে । যেটুকু বন অবশিষ্ট আছে, তাও বিভিন্ন হুমকির সম্মুখীন।
ক্ষতিকর দিক
বনের সংকোচন, জলাধারগুলাের অধিগ্রহণ ও দূষণের ফলে দেশের জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
দেশীয় প্রজাতির শস্য, মাছ, গাছ, উদ্ভিদ প্রভৃতি আজ সর্বাত্মক হুমকির সম্মুখীন। পরিবেশ আন্দোলনের চাপে সরকার পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরােপ করলেও তা প্রায়ই মানা হচ্ছে না।
তদুপরি বিভিন্ন পণ্যের মােড়ক হিসেবে প্লাস্টিকের ব্যবহার ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে শহরে, এমনকি গ্রামে বর্জ্য হিসেবে প্লাস্টিক ও জৈবিকভাবে অপচনশীল অন্যান্য সামগ্রীর পরিমাণ বাড়ছে।
মাত্র একবার ব্যবহারযােগ্য উপকরণের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে চিকিৎসাবর্জ্যের পরিমাণ দ্রুত হারে বাড়ছে এবং এর মধ্যে অনেক বিষাক্ত ও তেজস্ক্রিয় উপাদান থেকে যাচ্ছে। পরিবেশগত দুর্যোগের কারণ ও মোকাবিলা।
পরিবেশগত দুর্যোগের কারণ ও মোকাবিলা
পৃথক ও সুষ্ঠু অপসারণ ব্যবস্থা না থাকার ফলে এসব বর্জ্য সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে এবং পরিবেশকে বিষাক্ত করছে ।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য এক বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিভিন্নভাবে জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশকে আক্রান্ত করছে এবং করবে।
তার মধ্যে অন্যতম হলাে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে লবণাক্ততার প্রসার, নদীপ্রবাহের চরমভাবাপন্নতা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি ও রােগ মহামারীর প্রসার ।
ঘনবসতির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের এসব প্রভাবের ফলে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের বাস্তুহারা ও জীবিকাহারা হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ পরিস্থিতি বাংলাদেশকে সামগ্রিকভাবে অস্থিতিশীল করে দিতে পারে। তা প্রতিবেশী দেশ, এমনকি পুরাে বিশ্বের জন্যই একদিন বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। সে কারণে দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনই বাংলাদেশের জন্য আজ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মােকাবিলার জন্য সবাইকে সমষ্টিগতভাবে সচেতন হতে হবে।
পরিবেশগত দুর্যোগ মােকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ
বস্তুত, বাংলাদেশের উন্নয়নে পরিবেশ সংরক্ষণ জরুরি। বেশি জনসংখ্যার কারণে পরিবেশ দূষণ দ্বারা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বিপুলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্বল্প আয়তন ও জনসংখ্যার উচ্চ ঘনত্বের কারণে বাংলাদেশের জন্য এসব সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে । ভয়াবহ এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়ােজন, তা নিয়ে উল্লেখ করা হলাে।
• অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা কলকারখানা বন্ধ ঘােষণা করা।
মানুষের বসতি রয়েছে এমন এলাকায় শিল্প-কারখানা স্থাপনের অনুমতি না দেওয়া।
যে শিল্পগুলাে পরিবেশ দূষণের জন্য সর্বাধিক দায়ী, সেগুলাে চিহ্নিত করে এর মধ্যে পরিবেশ দূষণের জন্য সর্বাধিক ক্ষতিকারক শিল্পগুলাে বন্ধ ঘােষণা করা ।
শিল্প-শ্রমিকদের প্রয়ােজনীয় শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
• যেখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলা। • বনায়ন বৃদ্ধি করা এবং এ বিষয়ে সকলকে উৎসাহিত করা ।
• ব্যাপক সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা এবং বৃক্ষরােপণ আন্দোলন জোরদার করা।
পাহাড় কাটা নিয়ন্ত্রণ করা।
• পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং এ সংক্রান্ত আইনের যথাযথ প্রয়ােগ বাস্তবায়ন করা ।
প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা। ইটের ভাটায় জ্বালানি কাঠ পােড়ানাে বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
• স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তােলা, যাতে তারা পরিবেশের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকে।
অধিক মাত্রায় সার ও কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করে জৈবসার ব্যবহারে উৎসাহিত করা।
• পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে জনগণকে উৎসাহিত ও অংশগ্রহণে রাজি করানাে।
ক্ষতিকারক উপাদানগুলাের পরিমাপ করার জন্য বিশেষজ্ঞ দল গঠন করে তাদের মাধ্যমে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
নাগরিক হিসেবে আমাদের করণীয়

নাগরিক হিসেবে পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের উচিত অন্যায়ভাবে কোনাে গাছ কাটা, পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের আঙিনাসহ বাড়ি ও রাস্তার আশে-পাশে গাছ লাগানাে, পলিথিনের ব্যাগ আশপাশের ড্রেনে না ফেলা এবং নিজেরা সংগঠিত হয়ে সমাজের মানুষকে পরিবেশদূষণের কুফল সম্পর্কে সচেতন করা ।
আরও এই বিষয় জানতে নিচের লিংক এ ক্লিক করুন
পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ের পরিসর বা বিষয়বস্তু
বাংলাদেশের আইনসভার গঠন ক্ষমতা ও কার্যবলি
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী
বাংলাদেশের সংবিধান কি ও সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
Online gaming can be fun, but remember responsible play! Seeing platforms like jl boss emphasize verification is good – protecting your funds is key. It’s about enjoying the ‘game’- becoming the “Boss” of your own financial choices, not the other way around.
Your point of view caught my eye and was very interesting. Thanks. I have a question for you. https://www.binance.info/register?ref=IHJUI7TF
https://t.me/dragon_money_mani/39