পুকুরের প্রকারভেদ ও এর বিভিন্ন স্তর: পানি ধারণক্ষমতা, পুকুরে মাছের ধরন, পুকুরের আয়তন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে পুকুরকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় ।
পুকুরের প্রকারভেদ
নিচে পুকুরের প্রধান প্রধান শ্রেণিবিভাগ আলােচনা করা হলাে
পুকুরের প্রকারভেদ ও এর বিভিন্ন স্তর
১। পানির স্থায়িত্বের উপর ভিত্তি করে পুকুরের শ্রেণিবিভাগ
ক) স্থায়ী বা বার্ষিক পুকুর:
এসব পুকুরে সারা বছর পানি থাকে। এ ধরনের পুকুর অধিক গভীর হয় । এদের মাটি সবসময় পানি ধরে রাখতে পারে। যেমন- এঁটেল ও দোঁআশ মাটির পুকুর। এসব পুকুরে দেশীয় কার্প জাতীয় মাছ, যেমন- রুই, কাতলা, মৃগেল, কার্পিও ইত্যাদির মিশ্র চাষ, গলদা চিংড়ি ও কার্পের মিশ্র চাষ করা যায়।
খ) অস্থায়ী বা মৌসুমি পুকুর:
এসব পুকুরে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় (৩-৮মাস) পানি থাকে। এগুলাে
বেশি গভীর হয় না। এদের মাটি বেশি সময় পানি ধরে রাখতে পারে না। যেমন- বেলে মাটির পুকুর। এসব পুকুরে দ্রুত বর্ধনশীল মাছ যেগুলাে এক বছরের কম সময়ে বাজারজাত করার উপযােগী হয় সেসব মাছ চাষ করা যায়। যেমন- সিলভার কার্প, তেলাপিয়া, সরপুঁটি, শিং, মাগুর ইত্যাদি।
২। চাষকৃত মাছের বয়সের উপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিভাগ।
মাছের পােনাকে বয়স ও দৈর্ঘ্য অনুপাতে বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করা যায়। যথা- ডিম পােনা, রেণু পােনা, ধানী পােনা ও আঙ্গুলে বা চারা পােনা । ডিম ফোটার পরের অবস্থাকে ডিম পােনা বলে। এদের পেটের নিচে একটি থলি থাকে। থলি থাকা অবস্থায় (২-৩দিন) এরা বাইরে থেকে কোনাে খাদ্য গ্রহণ করে না।
কুসুম থলি শেষ হয়ে যাওয়ার পরবর্তী অবস্থাকে রেণু পােনা বলে। রেণু পােনা আরও বড় হয়ে ধানের মতাে আকার (যেমন – ২ বা ২ সেমি এর উপর ) হলে একে ধানী পােনা এবং আঙ্গুলের মতাে লম্বা (৭ সেমি এর উপর) হলে একে আঙ্গুলে বা চারা পােনা বলে। বিভিন্ন আকারের পােনার প্রতিপালনের জন্য বিভিন্ন পরিবেশের পুকুর প্রয়ােজন। নিম্নে এদের বর্ণনা দেওয়া হলাে-
ক) আঁতুড় বা নার্সারি পুকুর:
যে পুকুরে রেণু পােনা ছেড়ে ধানী পােনা পর্যন্ত বড় করা হয় তাকে আঁতুড় বা নার্সারি পুকুর বলে। এখানে শতক প্রতি ৫০-১০০ গ্রাম রেণু পােনা ছেড়ে ১৫-৩০ দিন চাষ করা হয়।
খ) লালন পুকুর:
যে পুকুরে ধানী পােনা ছেড়ে চারা বা আঙ্গুলে পােনা পর্যন্ত বড় করা হয় তাকে লালন
পুকুর বলে। লালন পুকুরের আয়তন ২০ থেকে ১০০ শতক ও গভীরতা ১.৫-২ মিটার হতে পারে। এ পুকুরে শতক প্রতি ২৫০০-৪০০০ টি ধানী পােনা ছেড়ে ২-৩ মাস চাষ করা হয়।
গ) মজুদ পুকুর:
এটিই মাছ চাষের প্রধান পুকুর। যে পুকুরে ধানী বা আঙ্গুলে পােনা ছেড়ে বড় মাছে
পরিণত করা হয় তাকে মজুদ পুকুর বলে। এর আয়তন ৩০ শতকের উপরে এবং গভীরতা ২-৩ মিটার হয়। এখানে সাধারণত ১ বছরের উপরে মাছ লালন না করাই ভালাে। কারণ খাদ্য দিলেও এ সময়ের পর মাছের বৃদ্ধির হার কম হয়।
এছাড়া আয়তনের উপর ভিত্তি করেও পুকুরকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- মিনি পুকুর বা ছােট পুকুর (১-৫ শতক), মাঝারি পুকুর (১০-৩০ শতক) এবং বড় পুকুর (৩০ শতকের উপর)।
পুকুরের বিভিন্ন স্তর
পুকুরের পানির বিভিন্ন গভীরতা ভেদে তাপমাত্রা, অক্সিজেন, ও প্লাংকটনের তারতম্য ঘটে। পুকুরে বিচরণকারী বিভিন্ন মাছ ভিন্ন ভিন্ন গভীরতায় থাকে ও খাদ্য গ্রহণ করে। এই সব তারতম্য অনুযায়ী পুকুরকে ৩টি স্তরে ভাগ করা যায়। পুকুরের প্রকারভেদ ও এর বিভিন্ন স্তর |
যথা- (১) উপরের স্তর (২) মধ্যস্তর এবং (৩) নিচের স্তর।
১) উপরের স্তর বা উপরিভাগ:
পুকুরের উপরের স্তর যেহেতু বাতাসের সংস্পর্শে থাকে তাই এই স্তরে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকে। পুকুরের উপরের স্তরে ফাইটোপ্লাংকটন বেশি থাকে যা মাছের খাদ্য। এই স্তরে সরপুঁটি, কাতলা, সিলভার কার্প, বিগহেড কার্প থাকে ও খাদ্য গ্রহণ করে। পুকুরের প্রকারভেদ ও এর বিভিন্ন স্তর|
২) মধ্যস্তর বা মধ্যভাগ:
এই স্তরে পানির তাপমাত্রা ও দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ উপরের স্তরের চেয়ে
কম থাকে। এই স্তরে জু-প্লাংকটন থাকে তবে ফাইটোপ্লাংকটনও থাকতে পারে। রুই মাছ এই স্তরে থাকে ও খাদ্য গ্রহণ করে।
৩) নিচের স্তর বা তলদেশ:
এই স্তরে দ্রবীভূত অক্সিজেন ও তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে। পুকুরের
তলদেশে জু-প্লাংকটন, কীটপতঙ্গের লার্ভা, জৈব-আবর্জনা, কেঁচো, শামুক-ঝিনুক পাওয়া যায়। মৃগেল, কালবাউশ, কার্পিও বা কমন কার্প, চিংড়ি, পাঙ্গাশ, শিং, মাগুর এই স্তরে বাস করে ও খাদ্য গ্রহণ করে। পুকুরের প্রকারভেদ ও এর বিভিন্ন স্তর |
কিছু মাছ আছে যারা পুকুরের সকল স্তরেই বিচরণ করে যেমন- তেলাপিয়া। অন্যদিকে গ্রাস কার্প পুকুরের উপরে, পাড়ে বা তলদেশে জন্মাননা বিভিন্ন সবুজ উদ্ভিদ খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে।
এই ধরনের আরও পোষ্ট পেতে আমাদের poramorso24.com নিয়মিত ভিজিট করুন । ধর্যসহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। পুকুরের প্রকারভেদ ও এর বিভিন্ন স্তর|
আরও পড়ুন