Breaking News

স্বাধীনতা ঘােষণা

স্বাধীনতা ঘােষণা: রাত ১টা ২০ মিনিটে গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে অর্থাৎ ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহক্সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘােষণা দেন। ঘােষণাটি ছিল ইংশ্লেজিতে, যাতে বিশ্ববাসী ঘোষণাটি বুঝতে পায়েল। 

স্বাধীন ঘােষণার বাংলা অনুবাদ : ইহাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে রুখে দাড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করে। 

স্বাধীনতা ঘােষণা

পাকিস্তানি দখলদার বাজিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্বত এবং চুঝি বিজয় অর্জন না কা পর্যন্ত লাই চালিয়ে যাও” বাংলাদেশ গেজেট, সংবিধানের পদশ সংশােধনী, ৩রা জুলাই ২০১১)। স্বাধীন এ ঘােষ বাংলাদেশের সকল স্থানে তদানিন্তন ইপিআৰ এ ট্রান্সমিটার, টেলিম ও টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে প্রচার

করা হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘােষণা ২৬শে মার্চ দুপুরে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ. হান্নান। চট্টগ্রামের বেতার কেন্দ্র থেকে একবার এবং সন্ধ্যায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে দ্বিতীয়বার প্রচার করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘােষণা এবং এর প্রতি বাঙালি সামরিক, আধা সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীর সমর্থন ও অংশগ্রহণের খবরে স্বাধীনতাকামী জনগণ উজ্জীবিত হয়। 

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা লাভ 

১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল মুজিবনগরে (মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে) আওয়ামী লীগের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা স্বাধীনতার ঘােষণাপত্রের আদেশনামা জারি করেন এবং একটি সরকার গঠন করেন যা মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত হয়। ১৭ই এপ্রিল নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত বাংলাদেশের সরকার শপথ গ্রহণ করে। মুজিবনগর সরকার গঠিত হবার পর দেশের জনগণ দলে দলে মুক্তিবাহিনীতে যােগদান করে এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে থাকে।

অভ্যন্তরীণ প্রতিরােধ ও গেরিলা আক্রমণ 

২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি বাহিনী অগ্নিসংযােগ ও অবিরাম গােলাবর্ষণ করে ঢাকা শহরে আক্রমণ শুরু করে। রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত নাগরিকদের হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল (বর্তমানে জহুরুল হক হল), সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, জগন্নাথ হল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাসগৃহে হামলা করে অনেককে হত্যা করা হয়। ইয়াহিয়ার বর্বর বাহিনী বাংলাদেশে নির্বিচারে গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযােগ, লুণ্ঠন প্রভৃতি জঘন্যতম অপরাধে লিপ্ত হয়। 

তাদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য লক্ষ লক্ষ নরনারী প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নেয়। কিন্তু বাঙালি ছাত্র, যুবক ও তরুণরা গােপনে সংঘবদ্ধ হয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশের ভিতরে থেকে গেরিলা পদ্ধতিতে এবং সম্মুখযুদ্ধে পাকবাহিনীকে পর্যুদস্ত করতে শুরু করে। দেশের মানুষ বীর মুক্তিযােদ্ধাদের খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয় দিয়ে সহযােগিতা করে। ফলে পাকবাহিনী ক্ৰমে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ।

মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন ও পরিচালনা 

মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ আন্দোলন চলছিল অপরিকল্পিত ও অবিন্যস্তভাবে। মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিতভাবে পরিচালিত হতে থাকে । তৎকালীন ইপিআরের বাঙালি সদস্য এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি সৈনিক ও অফিসারদের সমন্বয়ে নিয়মিত সেনা ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়। 

নিয়মিত সেনা ব্যাটালিয়ন নিয়ে পরে কে-ফোর্স, এস-ফোর্স ও জেড-ফোর্স নামে তিনটি ব্রিগেড গঠিত হয়। সেনাসদস্য ও অন্যান্য মুক্তিযােদ্ধারা মুক্তিবাহিনী বা মুক্তিফৌজ নামে পরিচিতি লাভ করে। কখনাে এরা গেরিলা নামেও পরিচয় লাভ করে। 

এই বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা দেশের অভ্যন্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের গােয়েন্দা শাখা পাকিস্তানি বাহিনীর গতিবিধি ও নানা কর্মকাণ্ডের সংবাদ মুক্তিবাহিনীকে সরবরাহ করত। গেরিলাদের মধ্যে ছাত্র ও কৃষকদের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি।

মুজিবনগর সরকার সমগ্র বাংলাদেশকে এগারটি সেক্টরে বিভক্ত করে এবং প্রতিটি সেক্টরের দায়িত্ব একেকজন কমাৱেৱ হাতে ন্যস্ত করে। সেক্টর কমান্সলের অধীনে নিয়মিড় বানিীর পাশাপাশি অনিয়মিত গেরিলা যােদ্ধারা নিয়ােজিত ছিল। উল্লেখ্য, দশ নম্বর সেক্টরের কোনাে আঞ্চলিক সীমানা ছিল না। এটি গঠিত হয়েছিল নৌ-কমারদের নিয়ে। 

প্রচলিত কায়দায় যুদ্ধের পাশাপাশি গের্বিযুদ্ধের রণকৌশল হুশ করে মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীকে পর্যন্ত করে ফেলে। ক্রমাগত মুছে জনবিল্পি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ক্ৰমশনবল ও হতাশ হয়ে পড়ে। পাকিস্তানের সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশের স্বাধীন যুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধ হিসেবে দেখানাের জন্য ভারতের ওপর বিমান আক্রমণ চালায়। 

৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তান সরকার ভায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করে। কিন্তু তাদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। ৪ঠা ডিসেম্বর ভারতের লােকসভা বাংলাদেশকে স্বীকৃদ্ধি দানের সিদ্ধায় প্রহণ করে। উক্ত সিদ্ধান্ত মােছৰেক ভারত সরকার ৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃদ্ধি দান করে। 

এসমক্সে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতের নিয়মিত সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে একটি যৌথ কমান্ড গঠন করা হয়। এই যৌথ কমান্ড দলে, স্কুলে ও আকাশপথে প্রবল আক্রমণ চালায়। ফলে মাত্র কয়েক দিনের যুদ্ধে পাকবাহিনী সম্পূর্ণ বিধাত ও পালিত হয়। 

অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর হানাদার পাকবাহিনীর অধিনায়ক জেনারেল নিয়াজী ৯৩,০০০ ঠিনই হাজাৰ) পাকিস্তানি সৈন্য, বিপুল পরিমাণ অসদ ও আগ্নেয়াসহ ব্রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। বিশ্বের মানচিত্রে রক্তের অক্ষরে লিখিত হয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের নাম।

নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলিম, শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে ৩০ লক্ষ বাঙালি প্রাণ হারায় এবং ২ লক্ষ ৭৬ হাজার মা-বােনের সম্ভ্রমহানি ঘটে। গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া হয়। ১ কোটি মানুষ দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এই মুক্তি সংগ্রামে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। 

মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পূর্ব মুহূর্তে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় দোসররা দেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের অনেককে রায়ের বাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। অবিভক্ত পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পরও দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচিত পূর্ব বাংলার বাঙালিরা এবার স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ

বাংলাদেশ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত তৃতীয় বিশ্বের প্রথম দেশ। সে যুদ্ধ স্থায়ী হয় নয় মাস। অনেক রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা লাভ করি। স্বাধীনতার পর পর প্রণীত আমাদের দেশের সংবিধানের চারটি মূলনীতির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ অত্যন্ত সঠিকভাবে পরিব্যক্ত। 

নীতিগুলাে হচ্ছে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ। গণতন্ত্রের জন্য বাঙালিরা দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে। বাংলাদেশকে সত্যিকার একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করা ছিল তাদের স্বপ্ন । সর্বপ্রকার শােষণ ও বৈষম্য থেকে মুক্তিলাভ ছিল তাদের অপর একটি লক্ষ্য ও আদর্শ। 

পাকিস্তান রাষ্ট্রের শুরু থেকেই বাঙালিরা শাসকগােষ্ঠীর রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার, অন্য কথায় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র হবে সবার’-এ চেতনা-আদর্শ নিয়ে তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলে ছিল স্বতন্ত্র জাতিসত্তার চেতনা, যাকে আমরা বলি বাঙালি জাতীয়তাবাদ। একটি স্বতন্ত্র জাতির জন্য স্বাধীন রাষ্ট্রের আবশ্যক হয়। 

আর বাঙালি জাতিসত্তার মধ্যে আমাদের নিজস্ব ভূখণ্ড, ভাষা-সাহিত্য, অসাম্প্রদায়িক বা সহিষ্ণু সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যগত চেতনা নিহিত রয়েছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বা মালিকানার মধ্যেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শ ব্যক্ত। পাকিস্তান আমলে রাষ্ট্র ছিল পশ্চিম পাকিস্তানভিত্তিক সামরিক-বেসামরিক আমলা ও সুবিধাভােগী গােষ্ঠীর একটি প্রতিষ্ঠান। 

আমাদের দেশের সর্বস্তরের জনগণ মুক্তিযুদ্ধ করেছে। রাষ্ট্রের মালিকও তারা সকলে । তাই আমাদের সংবিধানে ঘােষণা করা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’ (অনুচ্ছেদ ৭(১))। একটি সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তােলাই আজ আমাদের দায়িত্ব।

আরও পড়ুন:

About sujan

Check Also

এইচএসসি পরীক্ষার রুটিন ২০২৫ HSC Routine 2025

এইচএসসি পরীক্ষার রুটিন ২০২৫| HSC Routine 2025 PDF Download

এইচএসসি পরীক্ষার রুটিন ২০২৫| HSC Routine 2025 PDF Download: পরীক্ষার্থী ও অভিবাবকদের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম …