বিছমিল্লা প্রভুর নাম আরম্ভ প্রথম।
আদ্যমূল শির সেই শােভিত উত্তম ॥
প্রথমে প্রণাম করি এক করতার।
যেই প্রভু জীবদানে স্থাপিল সংসার ॥
করিল প্রথম আদি জ্যোতির প্রকাশ ।
তার প্রীতি প্রকটিল সেই কবিলাস ॥
সৃজিলেক আগুন পবন জল ক্ষিতি।

নানা রঙ্গ সৃজিলেক করি নানা ভাঁতি ॥
সৃজিল পাতাল মহী স্বর্গ নর্ক আর।
স্থানে স্থানে নানা বস্তু করিল প্রচার ॥
সৃজিলেক সপ্ত মহী এ সপ্ত ব্রহ্মাণ্ড
চতুর্দশ ভুবন সৃজিল খণ্ড খণ্ড ॥
সৃজিলেক দিবাকর শশী দিবারাতি।
সৃজিলেক নক্ষত্র নির্মল পাঁতিপাঁতি ৷
সৃজিলেক শীত গ্রীষ্ম রৌদ্র ছায়া আর।
করিল মেঘের মাঝে বিদ্যুৎ সঞ্চার ॥
সৃজিল সমুদ্র মেরু জলচরকুল।
সৃজিল সিপিতে মুক্তা রত্ন বহু মূল ॥
সৃজিলেক বন তরু ফল নানা স্বাদ।
সৃজিলেক নানা রােগ নানান ঔষদ ॥
সৃজিয়া মানব-রূপ করিল মহৎ।
অন্ন আদি নানাবিধ দিয়াছে ভুগত ॥
সৃজিলেক নৃপতি ভুঞ্জয় সুখে রাজ।
হস্তী অশ্ব নর আদি দিছে তারে সাজ ॥
সৃজিলেক নানা দ্রব্য এ ভােগ বিলাস।
কাকে কৈল ঈশ্বর কাকে কৈল দাস ॥
কাকে কৈল সুখ ভােগে সতত আনন্দ।
কেহ দুঃখী উপবাসী চিন্তাযুক্ত ধন্ধ ॥
আপনা প্রচার হেতু সৃজিল জীবন।
নিজ ভয় দর্শাইতে সৃজিল মরণ ॥
কাকে কৈল ভিক্ষুক কাকে কৈল ধনী।
কাকে কৈল নির্গুণী, কাকে কৈল গুণী ॥
পাঠ-পরিচিতি
‘হামদ’ কবিতাংশটি আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ কাব্য থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের প্রারম্ভে মহান আল্লাহর প্রশংসাসূচক পর্বের অংশ। কবি এই কবিতাংশে বিশ্বসৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে আলােকপাত করেছেন।
কবি মহান স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁর সৃষ্টির মহিমা বর্ণনা করেছেন। আগুন, বাতাস, পানি ও মাটি এসব উপাদান সহযােগে আল্লাহ এই বিশাল বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। তারপর জলচরপ্রাণী, কীটপতঙ্গ, বৃক্ষলতা,পশুপাখি এবং সব শেষে সৃষ্টি করেছেন মানুষ।
স্রষ্টার সৃষ্টির মধ্যে মানুষই শ্রেষ্ঠ। মানুষের উপভােগের জন্য বিচিত্র উপকরণ প্রদান করা হয়েছে। বিধাতা মানুষকে ভাগ্যের অধীন করে পার্থিব জীবনে সুখী কিংবা দুঃখী, গুণী কিংবা নির্গুণ করে পাঠিয়েছেন।
কবি পরিচিতি : আলাওল
আনুমানিক ১৬০৭ সালে চট্টগ্রাম জেলার ফতেয়াবাদের অন্তর্গত জোবরা গ্রামে, মতান্তরে ফরিদপুরের ফতেয়াবাদ পরগনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন ফতেয়াবাদের শাসনকর্তা মজলিশ কুতুবের অমাত্য। জলপথে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় আলাওলও তাঁর পিতা পর্তুগিজ জলদস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হন।
যুদ্ধে পিতা নিহত হলে আলাওল পর্তুগিজ জলদস্যুদের হাতে পড়ে আরাকানে নীত হন। সেখানে তিনি আরাকানরাজ সাদ উমাদারের দেহরক্ষী অশ্বারােহী সেনাদলে চাকরি লাভ করেন। রাজমন্ত্রী মাগন ঠাকুর তাঁর বিদ্যাবুদ্ধি ও প্রতিভার পরিচয় পেয়ে তাঁকে পৃষ্ঠপােষকতা দান করেন। তিনি সপ্তদশ শতকের শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে বিবেচিত। তিনি আরবি, ফারসি, হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন।
এছাড়া তিনি রাগসংগীত, যােগ ও ভেষজশাস্ত্র, সুফিতত্ত্ব ও বৈষ্ণব সাধনা ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। আলাওলের যেসব গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া গেছে সেগুলাে হলাে : পদ্মাবতী, সয়ফুলমুলক বদিউজ্জামাল, হপ্তপয়কর, সেকান্দরনামা, তােহফা ইত্যাদি। এ ছাড়া তিনি কবি দৌলত কাজীর অসমাপ্ত কাব্য ‘সতীময়না ও লােরচন্দ্রাণীর শেষাংশ রচনা করেন। আলাওলের কাব্য অনুবাদমূলক হলেও তা মৌলিকতার দাবিদার। আলাওল আনুমানিক ১৬৭৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
আরও পড়ুন
https://t.me/Martin_officials
https://t.me/s/Starda_officials
https://t.me/s/Volna_officials
https://t.me/s/iGaming_live/4868
https://t.me/s/Beefcasino_officials