চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশল: আপনি অনেক স্বপ্ন বুকে নিয়ে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে ভাইভা বাের্ডে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু বাের্ডে থাকা পরীক্ষকদের প্রসন্ন করতে না পারলে আপনার স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে। তাই ভাইভা বাের্ডে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য ভাইভা বাের্ডে প্রবেশ করার পর করণীয় কি তা জেনে রাখা আবশ্যক।
চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশলসমূহ জানা থাকলে আপনার আত্মবিশ্বাস, মনোবল আপনার সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ভাইভা বাের্ডে প্রবেশ করার পর করণীয়
১. প্রবেশ করে সালাম দিতে হবে
ভাইভা কক্ষে প্রবেশ করার পর পরীক্ষকগণের সামনে দাঁড়িয়ে সালাম দিতে হবে। সালাম দেওয়ার পর পরীক্ষকগণ বসতে বললে বসতে হবে। বসতে না বললে খানিকক্ষণ অনুমতির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হবে এবং অনুমতি না পেলে অনুমতি নিয়ে বসতে হবে।
২. আচরণ মার্জিত হতে হবে
প্রশ্নকর্তার প্রশ্ন ভালােভাবে শুনে শান্তভাবে উত্তর প্রদান করতে হবে। আত্মবিশ্বাসের সাথে এক এক করে উত্তর দিতে হবে। সব সময় মার্জিত আচরণ করতে হবে। কারণ ভদ্র ও মার্জিত ব্যবহারে সকলেই মুগ্ধ হয়।
৩. বক্তব্যে স্থির ও অটল থাকতে হবে
আপনি আপনার বক্তব্যে স্থির ও অটল থাকুন। শুদ্ধ বা অশুদ্ধ যাই হােক না কেন। দু-তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে তেমন কিছু যায় আসে না। কিন্তু মনােবল ও সংকল্পে দৃঢ় হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে বরাবরেই প্রমিত বাংলা উচ্চারণ করার চেষ্টা করতে হবে ।
৪. রাগান্বিত হওয়া যাবে না
কোনাে ব্যক্তিগত বা গােপনীয় প্রশ্নে রাগান্বিত হওয়া যাবে না। ঠাণ্ডা মাথায় প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের সঙ্গে উত্তর দিতে হবে। কারণ পরীক্ষক পরীক্ষা করার জন্য কটাক্ষ করেও কিছু প্রশ্ন করতে পারেন। আপনার সংযম আপনার ব্যাক্তিত্বকে প্রকাশ করবে।
৫. উত্তর সুস্পষ্ট ও সহজ হতে হবে
উত্তর হতে হবে সুস্পষ্ট ও সহজবােধ্য। ভালাে করে না শুনে কোনাে প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। প্রশ্নকর্তা কি বলেন সেদিকে মনােযােগ সহকারে খেয়াল রাখতে হবে এবং কোনাে প্রশ্ন বুঝতে অসুবিধা হলে বিনয়ের সঙ্গে পুনরায় জেনে নিতে হবে।
৬. তর্ক বা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না
বাের্ড সদস্যদের সাথে তর্ক করা বা কোনাে প্রশ্নে ভুল হলে তা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করা উচিত নয়। সদস্যদের কোনাে ভুল তথ্যকে সরাসরি ভুল প্রমাণিত করা থেকে বিরত থাকুন। যদি পারেন তবে যুক্তি সহকারে পরােক্ষভাবে বুঝিয়ে বলুন। কোনাে সদস্যের কথার মাঝে বাধা দেবেন না এবং নিজেকে ‘বিজ্ঞ’ হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করবেন না।
৭. ঘাবড়ানাে যাবে না
পরীক্ষার হলে কিছুতেই ঘাবড়ে যাবেন না। পরীক্ষকদেরকেও আপনার মতাে মানুষ ভাবুন। আরাে ভাবুন এ চাকরি না হলে আপনার খুব বেশি অসুবিধা হবে না। ধীরে সুস্থে উত্তর দিন। আর ভেতরে ভেতরে খানিকটা ঘাবড়ে গেলেও বাের্ডকে টের পেতে দেবেন না। কারণ অনেকে ঘাবড়ে গিয়ে আবােল তাবােল কথা বলে বসেন। এটা অবশ্যই ক্ষতিকর।
সবজান্তার ভাব করা অনুচিত
নিজেকে সবজান্তা হিসেবে প্রমাণ করা বা সবজান্তার ভাব করা উচিত নয়। সৌজন্য সহকারে প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের জবাব দিন। বদভ্যাস বা মুদ্রাদোষ পরিহার করুন : কিছু কিছু লােকের কোনাে কোনাে বিষয়ে বদভ্যাস থাকে। টেবিলের উপর পেন্সিল-কলম ইত্যাদি নিয়ে খেলা করা, চেয়ারে বসে পা-নাচানাে, শার্টের বােতাম খােলা ও বন্ধ করা ইত্যাদি অনেক রকমের বদভ্যাস থাকে। তাছাড়া কারাে কারাে মধ্যে একই কথা বারবার বলার মতাে মুদ্রাদোষ দেখা যায়। যেমন-মানে, মানে, বুঝলেন কি, মনে করেন, Suppose ইত্যাদি। এসব মুদ্রাদোষ অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
১০. উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগান
মৌখিক পরীক্ষায় ভেবেচিন্তে উত্তর দেয়ার মতাে সময় আপনার হাতে থাকে না। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিচক্ষণতার সাথে উত্তর দিতে হয়। এক্ষেত্রে আপনার উপস্থিত বুদ্ধিকে যতটা সম্ভব কাজে লাগান।
১১. চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিন
প্রশ্নকর্তার চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিন। ঘাড় গুঁজে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকা ঠিক নয়। চোখে চোখে তাকিয়ে উত্তর দেয়া ভালাে।
১২. সঠিক ভাষা প্রয়ােগ করুন :
সময়মতাে সঠিক শব্দ ব্যবহার করে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করুন। উত্তর যথাযথ, সংক্ষিপ্ত ও চিত্তাকর্ষক হওয়াই উত্তম।
১৩. হাসিখুশি ও প্রফুল্লচিত্ত থাকুন
প্রফুল্লচিত্ত লােককে সকলেই পছন্দ করে। তাই মুখে সপ্রতিভ হাসি রাখা ভালাে। প্রফুল্লচিত্ত মানুষ পরিবেশকেও প্রফুল্ল করে তােলে। কিন্তু এটা অবশ্যই পরীক্ষকের সঙ্গেও হাসি-তামাশার মতাে হওয়া ঠিক নয়।
চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশল